ফানা কি?

উত্তর : ভূমিকা : সুফিদর্শন একটি আধ্যাত্মিক দর্শন। সুফি সাধকের জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য হলো আল্লাহর সান্নিধ্যে থেকে তার দীদার লাভ করা। সুফিরা সাধারণ মুসলমানদের চেযে ধর্মের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিকের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করেন। সুফি দর্শনের ‘মাকাম’ ও ‘হাল’ শব্দ দুটির আলোচনা পরিলক্ষিত হয়। ‘হাল’ বলতে মনের এমন এক ধরনের অবস্থাকে বুঝায, যা মনকে এক অবস্থান বা পর্যায় থেকে আরো উপরেরর পর্যায়ে নিয়ে যায়। সাধারণত একেই ‘ফানা’ হিসেবে অভিহিত করা যায়।

ফানা
: ‘ফানা’ শব্দের অর্থ আত্মবিনাশ। আর এই
ও আত্মবিনাশ মানে আত্মার ধ্বংশ নয়। আত্মগরিমা, হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা লোভ, লালসা, কামনা, বাসনা, নিন্দা,
দুনিয়ার ভালোবাসা প্রভৃতি আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা, গুণ কার্যাবলিকে পরিত্যাগ করা, মনোবিক গুণ ও আত্মবোধকে ধ্বংস
করা, আল্লাহর গুণাবলি লাভ করা এবং সর্বশেষে আল্লাহর অসীম সত্তার মধ্যে বান্দার সসীম সত্তাকে লীন করে দিয়ে নিজ অস্তিত্ববোধ ভুলে যাওয়াকে ফানা বলে। মোটকথা, ফানা তখনই হয় যখন সুফি নিষ্পাপ বা কামনাশূন্য হয়, তখন তার কামনাশূন্য অন্তর আল্লাহ্ময় ভাবধারণ করে। সেজন্য নিজের অস্তিত্বকে আল্লাহর ভালোবাসায় বিলীন করে দিতে পারলেই ফানা হওয়া সম্ভব। ফানা অবস্থায় সুফি সকলের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে পার্থিব সর্বপ্রকার লোভ ও আশাকে হত্যা করে, নিঃসঙ্গতা পছন্দ
করে, সংসারের লাভ ক্ষতি, ভালো মন্দের প্রতি তার কোনো চিন্তা থাকে না বরং এ সময় সাধকের আত্মকেন্দ্রিকতা ধ্বংস হয়ে
যায়। সাধক এই সময় আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ফানা প্রাপ্ত হওয়ার পর সাধকের কোনো নিজস্ব ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য থাকে
না। এই সময় একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া সাধক আর কিছুই চান না। আল্লাহর অসীম ইচ্ছাতেই সাধকের সামান্য ইচ্ছা পূরণ হয়। এইভাবে আত্মার পাশবিক প্রবৃত্তি ও মানবিক গুণাবলি ধ্বংস হলে তা আল্লাহ্ সম্মিলনের উপযুক্ত হয়। এই ফানা সম্পর্কে হযরতে রাসূলে কারীম (স.) বলেন, “মৃত্যু কাবলা আনতা মৃত্যু” অর্থাৎ
মৃত্যুর পূর্বেই মৃত্যুবরণ কর। নিজ অস্তিত্ববোধকে অসীম অস্তিত্বের মাঝে হারানোর মধ্যেই সাধক এসময় প্রেম মদিরা পান করে। এই ফানা লাভ করতে সাধককে ৪টি সোপান পার হতে হয়। যথা- (১) কানা ফিল ওজুদ, (২) ফানা ফিনশায়েখ,
(৩) ফানা ফির-রসূল ও (৪) ফানা ফিল্লাহ্ ।
হিন্দু দর্শনের সমাধি লাভ ও বৌদ্ধদের নির্বাণ লাভ ফানার স্তরে ঘটে থাকে। ফানার এই স্তরসমূহ কোনো সাধক পাড়ি দিতে পারলেই তিনি আল্লাহর বন্ধু বা ওলী আল্লাহ্ হয়ে যান।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুফিবাদের মূলনীতিগুলোর মধ্যে যেগুলো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তার মধ্যে ফানা অন্যতম। ফানা স্তরে এসে
সাধক কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পরম প্রিয় আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করে। সর্বোপরি, ফানার স্তরে এসে সাধক আল্লাহর অস্তিত্ব খুঁজে পায়।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%86/

ফানা কি?

উত্তর : ভূমিকা : সুফিদর্শন একটি আধ্যাত্মিক দর্শন। সুফি সাধকের জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য হলো আল্লাহর সান্নিধ্যে থেকে তার দীদার লাভ করা। সুফিরা সাধারণ মুসলমানদের চেযে ধর্মের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিকের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করেন। সুফি দর্শনের ‘মাকাম’ ও ‘হাল’ শব্দ দুটির আলোচনা পরিলক্ষিত হয়। ‘হাল’ বলতে মনের এমন এক ধরনের অবস্থাকে বুঝায, যা মনকে এক অবস্থান বা পর্যায় থেকে আরো উপরেরর পর্যায়ে নিয়ে যায়। সাধারণত একেই ‘ফানা’ হিসেবে অভিহিত করা যায়।

ফানা
: ‘ফানা’ শব্দের অর্থ আত্মবিনাশ। আর এই
ও আত্মবিনাশ মানে আত্মার ধ্বংশ নয়। আত্মগরিমা, হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা লোভ, লালসা, কামনা, বাসনা, নিন্দা,
দুনিয়ার ভালোবাসা প্রভৃতি আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা, গুণ কার্যাবলিকে পরিত্যাগ করা, মনোবিক গুণ ও আত্মবোধকে ধ্বংস
করা, আল্লাহর গুণাবলি লাভ করা এবং সর্বশেষে আল্লাহর অসীম সত্তার মধ্যে বান্দার সসীম সত্তাকে লীন করে দিয়ে নিজ অস্তিত্ববোধ ভুলে যাওয়াকে ফানা বলে। মোটকথা, ফানা তখনই হয় যখন সুফি নিষ্পাপ বা কামনাশূন্য হয়, তখন তার কামনাশূন্য অন্তর আল্লাহ্ময় ভাবধারণ করে। সেজন্য নিজের অস্তিত্বকে আল্লাহর ভালোবাসায় বিলীন করে দিতে পারলেই ফানা হওয়া সম্ভব। ফানা অবস্থায় সুফি সকলের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে পার্থিব সর্বপ্রকার লোভ ও আশাকে হত্যা করে, নিঃসঙ্গতা পছন্দ
করে, সংসারের লাভ ক্ষতি, ভালো মন্দের প্রতি তার কোনো চিন্তা থাকে না বরং এ সময় সাধকের আত্মকেন্দ্রিকতা ধ্বংস হয়ে
যায়। সাধক এই সময় আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ফানা প্রাপ্ত হওয়ার পর সাধকের কোনো নিজস্ব ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য থাকে
না। এই সময় একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া সাধক আর কিছুই চান না। আল্লাহর অসীম ইচ্ছাতেই সাধকের সামান্য ইচ্ছা পূরণ হয়। এইভাবে আত্মার পাশবিক প্রবৃত্তি ও মানবিক গুণাবলি ধ্বংস হলে তা আল্লাহ্ সম্মিলনের উপযুক্ত হয়। এই ফানা সম্পর্কে হযরতে রাসূলে কারীম (স.) বলেন, “মৃত্যু কাবলা আনতা মৃত্যু” অর্থাৎ
মৃত্যুর পূর্বেই মৃত্যুবরণ কর। নিজ অস্তিত্ববোধকে অসীম অস্তিত্বের মাঝে হারানোর মধ্যেই সাধক এসময় প্রেম মদিরা পান করে। এই ফানা লাভ করতে সাধককে ৪টি সোপান পার হতে হয়। যথা- (১) কানা ফিল ওজুদ, (২) ফানা ফিনশায়েখ,
(৩) ফানা ফির-রসূল ও (৪) ফানা ফিল্লাহ্ ।
হিন্দু দর্শনের সমাধি লাভ ও বৌদ্ধদের নির্বাণ লাভ ফানার স্তরে ঘটে থাকে। ফানার এই স্তরসমূহ কোনো সাধক পাড়ি দিতে পারলেই তিনি আল্লাহর বন্ধু বা ওলী আল্লাহ্ হয়ে যান।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুফিবাদের মূলনীতিগুলোর মধ্যে যেগুলো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তার মধ্যে ফানা অন্যতম। ফানা স্তরে এসে
সাধক কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পরম প্রিয় আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করে। সর্বোপরি, ফানার স্তরে এসে সাধক আল্লাহর অস্তিত্ব খুঁজে পায়।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%86/