সুলতানি শাসনামলের সুফি সাধকদের সম্পর্কে লিখ।

উত্তর : ভূমিকা : ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসক কর্তৃক হস্তগত বা বিজয় হলো। সেই সূত্র ধরে এই উপমহাদেশে ধর্ম প্রচারার্থে সুফি-সাধক, পীর-আওলিয়া ও দরবেশ প্রভৃতি ধর্মীয় ব্যক্তিদের আগমন হতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় সুলতানি আমলেও বাংলায় সুফি-দরবেশদের আগমন হয়। এরা ধর্মীয় নানা বিষয়ের সাথে সাথে রাজনৈতিক, সামাজিক বিষয়েও নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলেন। সুলতানি শাসকগণ ও সুফিদের বেশ প্রাধান্য দিতেন। এমন অবস্থায় সুফি-দরবেশরা নিজেদেরকে শক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। তাদের জনপ্রিয়তাও এজন্য কাজ করে।
→ সুলতানি আমলে বাংলায় সুফি-সাধকগণ : নিচে সুলতানি যুগে বাংলায় অবস্থানরত কয়েকজন বিখ্যাত সুফি-সাধক সম্পর্কে লেখা হলো। যথা-
১. হযরত শেখ নূর কুতুব-উল-আলম : হযরত শেখ আলাউল হকের ছেলে হযরত শেখ নূর কুতুব-উল-আলম । তিনি তার ধারার চেয়েও প্রসিদ্ধ ছিলেন। সুলতান গিয়াস-উদ্দিন-আজম শাহের সাথে কুতুব-উল-আলমের সুসম্পর্ক ছিল। সুলতান তার নিকট হতে পরামর্শ নিয়ে রাষ্ট্রীয় কাজ পরিচালনা করতো। প্রায় আইনই তিনি কুতুব-উল-আলম এর ছিল। তিনি ১৬০০ সালে মারা যান।
২. হযরত শাহজালাল (রা.) : হযরত শাহ জালাল (রা.) ইসলামের গুরুত্বপুর্ণ আর একজন সুফি সাধক। তাকে পীর বলা
হয়। তাকে এখন পর্যন্ত মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে থাকে। শাহজালালের আস্থানা ছিল সিলেট জেলায়। মরক্কো থেকে আগত বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা তার সাথে দেখা করার জন্য বাংলায় এসেছিলেন ইবনে বতুতা তার ভ্রমণ কাহিনীতে হযরত শাহজালারের যশ ও খ্যাতির পরিচয় পাওয়া যায় ।
৩. হযরত শেখ আলাউল হক (রা.) : ইলিয়াস শাহী শাসনামলের একজন প্রখ্যাত সুফি সাধক ছিলেন হযরত শেখ আলাউল হক (রা.), তিনি জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতেন নিজ৷ হাতে এবং নিজের ও মুসাফিরদের চাদরও ধৌত করতেন। তৎকালীন সুলতানের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল।
৪. অন্যান্য সুফি-সাধকগণ : সারা বাংলা জুড়ে আরো অসংখ্য সুফি সাধক ছড়িয়ে ছিলেন। তারা সবাই ধর্মপ্রচারে রত ছিলেন। পাশাপাশি সমাজ-সংস্কার, জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমেও
তারা যুক্ত ছিলেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতানি বাংলার রাজনীতিতে সুফিদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল খুব কম। কিন্তু পরোক্ষভাবে সুফিদের সুদূরপ্রসারী প্রভাব ছিল । সুলতানগণ রাজ্য
পরিচালনায় সুফিদের পরিপন্থি আইন প্রণয়ন করতেন না এবং রাজ্য পরিচালনায় সুফিদের পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করতেন। রাজ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সুফিদের যথেষ্ট ভূমিকা ছিল মনে হয়। সুফি-সাধকেরা এদেশে এদেশ সামগ্রিক, বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করেন। সাধারণ জনগণ, শাসকবর্গ এমনকি অন্যান্য
ধর্মাবলম্বীরাও সুফি-সাধকদেরকে মনে-প্রাণে মেনে নেন এবং তাদেরকে শ্রদ্ধা ও অনুসরণ করতেন।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%86/