উত্তর : ভূমিকা : “After 1526 Nusrat Shah had to contend with the Mughal ascendency and also suffered a
reverse at the hands of the Ahom Kingdom” Wikipedia অর্থাৎ- ‘১৫২৬ সালের পরে নসরাত শাহ মুঘলদের সাথে এবং উল্টাদিকে অহম রাজ্যের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। নসরত শাহ তার রাজত্বের শুরুতে পিতার ন্যায় রাজ্যবিস্তার নীতি অনুসরণ করে। তবে সম্রাট বাবর মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপন করলে নসরত শাহের রাজ্য বিস্তার নীতি হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। এ সময়ে তিনি রাজ্যকে সুরক্ষা করার দিকে মনোযোগী হন।
মুঘলদের সাথে সংঘর্ষ : নসরত শাহ মুঘল সাম্রাজ্য স্থাপন হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। নিম্নে নসরত শাহের সাথে মুঘলদের সংঘর্ষের বর্ণনা দেয়া হলো-
১. আফগান নেতাদের আশ্রয়দান : ১৫২৬ সালে বাবর লোদী সাম্রাজ্যের অবসান ঘটিয়ে উভয় ভারতের অধীশ্বর হন। এসময়ে পলায়মান আফগান নেতাগণ নসরত শাহের কাছে সাহায্যপ্রার্থী হন। মানবতার খাতিরে নসরত শাহ তাঁদের সাহায্য দিলেন। ১৫২৭ সালে বাবর গোগরা নদী পর্যন্ত অগ্রসর হন।
ফলে নসরত শাহের সাথে বাবরের সংঘর্ষের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
২. দূত বিনিময়ে সমঝোতা : বাবর ভোগরা নদী পর্যন্ত এসে নসরত শাহের দরবারে একজন দূতকে প্রেরণ করেন। এ পরিস্থিতিতে নসরত শাহ কোন স্পষ্ট উত্তর না দিয়ে বাবরের
দূতকে প্রায় এক বৎসর কাল নিজ দরবারে রেখে ছিলেন। এরপর নসরত শাহ বহু উপঢৌকনসহ তার দূতকে বাবরের নিকট প্রেরণ করলে বাবর বাংলা আক্রমণের পরিকল্পনা ত্যাগ করেন।
৩. আফগানদের যুদ্ধ প্রস্তুতি : ১৫২৯ সালে আফগান নেতাগণ বাবুরের বিরুদ্ধে সৈন্য পরিচালনা করে। আফগানরা বারানসী ও গোরক্ষপুর অভিমুখে অগ্রসর হতে থাকে। বাবরও সসৈন্যে বিহার অভিমুখে অগ্রসর হন। বাবর সৈন্য নিয়ে এগিয়ে এলে শেরখান ও জানার খান তার বশ্যতা স্বীকার করে।
৪. বাংলার সৈন্যের মুখোমুখি বাবর : বাবর তীরহুত অধিকার করে আফগান সৈন্য দলকে পরাজিত করেন। ফলে বাংলার সৈন্যদল বাবুরের সৈন্যদলের মুখোমুখি হলো। বাবর দূত পাঠিয়ে নসরত শাহের সৈন্যদলকে গোগরা নদীর তীর ত্যাগ করতে আদেশ প্রদান করেন। নসরত শাহ উত্তর দিতে বিলম্ব করেন। অবশেষে ৩ দিনব্যাপী যুদ্ধ চলল। বাংলার সৈন্যবাহিনী বীরত্ব প্রদর্শন করেও পরাজিত হলো। ফলে গোগরা নদীর পূর্বতীরে বাবুরের আধিপত্য স্থাপিত হলো।
৫. যুদ্ধবিরতি : কূটনৈতিক কারণে বাবুর বিহার ও অযোধ্যা জয়ের পূর্বে বাংলা আক্রমণ করা সমীচীন মনে করেননি। এই সময়ে বাবর কর্তৃক আরোপিত শর্তাবলি বাংলার সুলতান স্বীকার করেন । মুঘলদের প্রত্যক্ষ আক্রমণের হাত থেকে বাংলায় মুসলিম রাজ্য রক্ষা পায়।
৬. হুমায়ূনের বাংলা আক্রমণের পরিকল্পনা : ১৫৩০ সালে বাবরের মৃত্যু হলে নসরত শাহ কিছুটা স্বস্তি লাভ করেন। তবে বাবরের উত্তরাধিকারী হুমায়ূন বাংলা আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। হুমায়ূন বাংলা আক্রমণের উদ্যোগ করলেও বাহাদুর শাহ হুমায়ূনের
বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন করলে তিনি বাংলা আক্রমণের পরিকল্পনা বাদ দেন। ফলে বাংলা আসন্ন যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা পায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, নসরতের সময়োপযোগী কূটনীতি বাংলাকে আসন্ন যুদ্ধ থেকে রক্ষা করে। তার কূটনৈতিক দক্ষতা বাংলায় মুঘল শাসনের প্রবেশকে রোধ করে। মুঘল শক্তির বিরুদ্ধে বাংলার মুসলিম রাজ্যকে যুদ্ধে লিপ্ত না করে নশরত শাহ দূরদর্শিতারই পরিচয় দিয়েছেন।