উত্তর : ভূমিকা : “নৃপতি হুসেন শাহ এ মহামতি,
পঞ্চম গৌড়ে যার পরম সুখ্যাতি” কবীন্দ্র পরমেশ্বর তার মহাভারতে হুসেন শাহ সম্পর্কে প্রশস্তি রচনা করেছেন। কবীন্দ্র পরমেশ্বর হুসেন শাহকে কৃষ্ণের অবতার বলেও আখ্যায়িত করেছেন। হুসেন শাহের শাসনামলে শাসন ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল ব্যাপক উন্নতি হয়েছিল। শাসন ব্যবস্থায় উদারতার ফলে তিনি সকল ধর্মের মানুষের কাছে সমভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেন
→ বাংলার আকবর হিসেবে আলাউদ্দিন হুসেন শাহ : মুঘল সম্রাট আকবরের সাথে বাংলার শাসক হুসেন শাহের তুলনা করার
যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আকবর তার শাসন ক্ষেত্রে যে সকল নীতিগ্রহণ করেছিলেন হুসেন শাহ তার শাসন ক্ষেত্রে সে সকল নীতির
প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন। নিম্নে আকবরের শাসনের সাথে হুসেন শাহের শাসনের তুলনা করা হলো।
১. শান্তি শৃঙ্খলা ক্ষেত্রে : আকবর তার রাজ্যে একটি অস্থিতিশীল সময়ের পরে শান্তি স্থাপন করেছিলেন। বৈরাম খানের সহযোগিতায়
তিনি রাজ্যের সকল বাধাসমূহকে দূর করেন। হুসেন শাহও হাবশি শাসনের অরাজকতাপূর্ণ সময় থেকে বাংলায় শান্তি শৃঙ্খলা আনয়ন
করেন। তার শাসনকালকে শান্তি ও সমৃদ্ধির যুগ বলা হত ।
২. উদারতার ক্ষেত্রে : আকবর একজন উদার শাসক হিসেবে সমগ্র বিশ্বে নজির স্থাপন করেন। এ কারণে তাকে “AKBAR THE GREAT” বলে আখ্যায়িত করা হয়। হুসেন
শাহ তার এ নীতিকে অনুসরণ করে মেধার যোগ্যতায় তার কর্মচারীদের নিয়োগ দেন। তিনি সকল ধর্মের ব্যক্তিদেরকে তার রাজসভায় স্থান প্রদান করেন।
৩. সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি অনুরাগ : আকবর সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। তিনি সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রসারে পৃষ্ঠপোষকতা
করেন। তার সময়ে সকল পণ্ডিত ব্যক্তিমাত্রই সমাদর লাভ করতেন। হুসেন শাহ তার শাসন ব্যবস্থায় শিল্প-সাহিত্যের ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা
করেন । তিনি স্থানীয় সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন। তার অবদানের ফলেই বাংলার সাহিত্য জগৎ উৎকর্ষ লাভ করেছিল ।
৪. ধর্মীয় সহাবস্থান : আকবর তার সাম্রাজ্যে ধর্মীয় সহিঞ্চুতা বজায় রেখেছিলেন। ধর্মীয় সম্প্রীতি গড়েতোলার লক্ষ্যে তিনি
অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি হিন্দু পত্নীও গ্রহণ করেছিলেন। হুসেন শাহ একজন ধর্মসহিঞ্চু শাসক ছিলেন। শ্রী চৈতন্য তার সময়ে ধর্মবাণী প্রচার করলেও কোন বাঁধা দেয়া হয়নি। হিন্দুরা এ সময়ে স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করত।
৫. সামরিক সাফল্য : সাম্রাজ্যের শাসক হিসেবে আকবর অনেক যুদ্ধ করেছিলেন। যুদ্ধে তিনি বিজেতা হিসেবেই প্রমাণিত
হতেন। হুসেন শাহ আকবরের তুলনায় কম যুদ্ধ করেন। তবে তার সামরিক সাফল্য কোনোভাবেই আকবরের থেকে কম নয়।
৬. স্থাপত্য শিল্পে অবদান : আকবর তার রাজত্বকালে বিশাল বিশাল অট্টালিকা গড়ে তুলেছিলেন। বিশাল সাম্রাজ্যের শাসক হিসেবে তিনি প্রচুর খরচ করতে পেরেছিলেন। হুসেন শাহ শুধুমাত্র বাংলার শাসক ছিলেন। তবে তার স্থাপত্য শিল্পে অবদান অনুপাতিকহারে কম নয়। ‘ছোট সোনা মসজিদ’ ও ‘গুমতি দ্বার’
তার অমর কীর্তির স্বাক্ষর বহন করছে।
৭. উপাধিলাভ : আকবরকে “The Great” নামে ইতিহাসে আখ্যায়িত করা হয়। আকবর তার শাসনকালে বিভিন্ন উপাধি দ্বারা ভূষিত হয়েছিলেন। হুসেন শাহকেও ‘নৃপতি’, ‘তিলক জগৎ ভূষণ’, ‘কৃষ্ণবতার’ প্রভৃতি উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আলাউদ্দিন হুসেন শাহ মুঘল সম্রাট আকবর থেকে কোনো অংশেই কম ছিলেন না
যোগ্যতার বিচারে। শুধুমাত্র সাম্রাজ্যের আকারে তাদের পার্থক্য দেখা যায়। তাই যোগ্যতার বিচারে আলাউদ্দিন হুসেন শাহকে
‘বাংলার আকবর’ হিসেবে ভূষিত করা অযৌক্তিক নয়, বরং যথার্থ ।