মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে বাংলায় ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ দাও।

উত্তর : ভূমিকা : মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে বাংলার ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক অবস্থা মোটামুটিভাবে ভালো ছিল। বাংলা ধনসম্পদে
পরিপূর্ণ ছিল বলে বিদেশি বণিকরা বাংলায় বাণিজ্য করতে আসত। বাংলার মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত।
অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসারে ফলশ্রুতিতে তৎকালীন বাংলা সমৃদ্ধিশালী ও প্রাচুর্যপূর্ণ হয়ে উঠে। প্রাচীন বাংলায়
মানুষের নিজস্ব ধর্ম ছিল। সেন আমলে জোরপূর্বক হিন্দু ধর্মগ্রহণে বাধ্য করা হত।
→ অর্থনৈতিক অবস্থা : মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল কৃষিনির্ভর। নিম্নে বাংলার অর্থনৈতিক
অবস্থা বর্ণনা করা হলো-
১. কৃষি : বাংলা ছিল কৃষিপ্রধান দেশ। প্রাচীনকাল থেকেই বাযালিরা কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। গ্রামে কৃষকরা কৃষিকাজ করে উৎপন্ন পণ্য থেকে জমিদারকে কর প্রদান করতেন। জমির মালিক ছিলেন রাজা। কৃষকরা ধান, পাট, তুলা ও ইক্ষু ইত্যাদি উৎপাদন করত।
২. শিল্প : সেই সময় অর্থনৈতিক জীবনের অন্যতম অঙ্গ শিল্প উৎপাদন। বস্ত্র শিল্পের জন্য বাংলাদেশ প্রসিদ্ধ ছিল। বাংলার কার্পাসজাত বস্ত্রাদি ভারতজুড়ে সমাদৃত ছিল। প্রস্তর শিল্প
ও ধাতু শিল্পে তৎকালীন বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নত ছিল।
৩. ব্যবসা বাণিজ্য : তৎকালীন বাংলার শিল্পের উন্নতির সাথে সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যের যথেষ্ট উন্নতি লাভ ঘটেছিল। ব্যবসা বাণিজ্য স্থল ও জলপথে উপমহাদেশের বিভিন্ন রাজ্যে
পণ্যসামগ্রী পাঠানো হতো। পাল ও সেন আমলে গ্রাম বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা সবচেয়ে বেশি উন্নত হয়।
৪. কুটির শিল্প : গ্রামের ক্ষুদু আয়ের লোক কুটির শিল্পের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কুটির শিল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য
হলো বস্ত্রশিল্প, চামড়াশিল্প, মৃৎশিল্প ও ধাতুশিল্প ইত্যাদি।
৫. জলপথ : বাংলার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জলপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। পণ্য সামগ্রীর সিংহভাগ জলপথে বিভিন্ন দেশে
পাঠানো হতো। জাহাজ ও নৌকায় নিয়োজিত থেকে অনেক লোক জীবিকা নির্বাহ করত।
৬. স্থলপথ : বাংলার পণ্য রপ্তানি আমদানি স্থলপথে হতো। উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে পণ্য সামগ্রী স্থলপথে পরিবহন করা হতো। স্থলপথ দিয়ে নেপাল, ভুটান ও তিব্বতের সাথে বাণিজ্য চলত।
৭. বাংলা বাণিজ্যে মুসলিম বণিক : প্রাচীনকাল থেকেই আরবদেশের নাবিকরা ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে বাংলায় আগমন
করে । মুসলিম বণিকগণ বাংলার অর্থনীতি সমৃদ্ধ করেছে।