উত্তর : ভূমিকা : বঙ্গে একটি স্বাধীন সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাংলায় ইতিহাসে এক বিশেষ
স্থান দখল করে আছেন। দক্ষ শাসক হিসেবে সুলতান ইলিয়াস শাহের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনিই প্রথম স্বাধীন সুলতান বাংলার মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। হাজি ইলিয়াস শাহকে শাহে বাংলা বা ‘শাহ-ই-বাঙ্গালাহ’ বলার কারণ : সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহের পূর্ব নাম ছিল হাজি ইলিয়াস। তিনি ছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন আলী শাহের ধাত্রীভাতা । হাজি ইলিয়াস শাহকে শাহে বাংলা বলার কারণ নিম্নে দেওয়া হলো :
১. সোনারগাঁও দখল : সোনারগাঁও টাকশাল হতে উৎকীর্ণ মুদ্রা হতে জানা যায় যে ১৩৫২ সালে ইলিয়াস শাহ ইখতিয়ারউদ্দিন গাজি শাহের নিকট হতে সোনারগাঁও অধিকারের
ফলে তিনি সমগ্র বাংলাদেশের অধিপতি হন।
২. সাতগাঁও দখল : ইলিয়াস শাহ ১৩৪৬ সালে সাতগাঁও দখলের প্রচেষ্টা চালান। সাতগাঁও টাকশাল থেকে মুদ্রিত ইলিয়াস শাহের মুদ্রা থেকে জানা যায় যে তিনি ১৩৪৬ সালে কিংবা তার পূর্বে সাতগাঁও অধিকার করে নিজ রাজ্যসীমা বৃদ্ধি করেন।
৩. উড়িষ্যা বিজয় : ইলিয়াস শাহ উড়িষ্যা আক্রমণ করেন। তাতে তার সেনাবাহিনী বিজয়ী বেশে চিলকা হ্রদ পর্যন্ত অগ্রসর
হয় এবং শামসুদ্দিন ৪৪ হস্তীসহ অগণিত ধনসম্পদ লাভ করেন।
৪. বিহার দখল : ইলিয়াস শাহ বিহার আক্রমণ করেন। এইসময় বিহার ছিল দিল্লির সাম্রাজ্যভুক্ত । তিনি বিহার দখল করেন।
ইলিয়াস শাহ সমগ্র বাংলা জয় করেন। এর পূর্বে কোনো সুলতান সমগ্র বাংলা জয় করতে পারেননি। একারণে ঐতিহাসিক শামস-ই-সিরাজ আফিফ ইলিয়াস শাহকে শাহ-ই-বাঙ্গালীয়ান ও সুলতান-ই-বাঙ্গালাহ উপাধিতে ভূষিত করেন। সুতরাং সবদিক থেকে বিচার করলে হাজী ইলিয়াস শাহকে
শাহে বাংলা বলে আখ্যায়িত করা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইলিয়াস শাহ সিংহাসনে বসেই বাংলার উন্নয়নে মনোযোগ দেন। বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠায় ইলিয়াস শাহের নাম বাংলায় ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ইলিয়াস শাহ বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা ও কামরুপ দখল করেন।


