উত্তর : ভূমিকা : সুলতানি আমলে রাজদরবারে খুব বেশি সাহিত্য চর্চা হতো না। এজন্য সুলতানি আমলের বেশি ইতিহাসের উৎস খুঁজে পাওয়া যায় না। মুঘল আমলে ইতিহাস চর্চা হলেও তা ছিল দিল্লি কেন্দ্রিক। সাহিত্যচর্চায় বাংলার জনগণ ছিল অনেকটা পিছিয়ে তবে দিল্লি কেন্দ্রিক কিছু রচনা
আছে, যেখানে বাংলা সম্পর্কে সামান্য লেখা অথবা একটি বা দুটি অধ্যায় সংযোজিত আছে দিল্লির সাহিত্যের সাথে। এসব অল্প পরিমাণ থাকা তথ্যই বাংলার ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
→ তারিখ-ই-ফিরোজশাহী : জিয়াউদ্দিন বারানীর লিখিত তারিখ-ই-ফিরোজশাহী’ গ্রন্থটি বাংলার সুলতানি আমলের ইতিহাস বিষয়ে রচিত দ্বিতীয় তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থ। বারানীর গ্রন্থের সময়সীমা হচ্ছে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের সিংহাসন আরোহণের সময় (১২৬৬ খ্রিঃ) থেকে শুরু করে সুলতান ফিরোজশাহ তুঘলকের রাজত্বের প্রথম ছয় বছর পর্যন্ত (১৩৫৭ খ্রিঃ)। বলবন এবং প্রথম দুই একজন খলজী সুলতানের ইতিহাস
রচনার জন্য তিনি তাঁর আত্মীয় এবং অন্যান্য উচ্চ পদস্থ রাজকর্মচারীদের নিকট হতে তথ্য সংগ্রহ করেন। তবে সমস্যার দিকটা হলো যে, জিয়াউদ্দিন বারানী কোনো সময় বাংলায়
আসেনি। বাংলার ঘটনাবলি জানার জন্য তিনি বাংলাদেশ প্রত্যাগত সৈনিক বা সুলতানের দরবারস্থ দবীর (সেক্রেটারি) দের নিকট হতে তথ্য সংগ্রহ করেন। বরানী যে সময়ের ইতিহাস
লিখেন (১২৬৬-১৩৫৭ খ্রিঃ), তার অধিকাংশ সময়ে বাংলা স্বাধীন ছিল। মাত্র দুই একটি বিষয় ছাড়া বারানী ‘তারিখ-ই-
ফিরোজশাহী’ গ্রন্থে বাংলার ঘটনাবলি অতি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি স্বল্প পরিমাণ তথ্য লিপিবদ্ধ করেছেন, বিশেষ ভুল
তথ্য পাওয়া যায় না। আধুনিক ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে, দিল্লির সুলতানের আস্থাভাজন হবার জন্য বারানী বাংলার সমালোচনা করেন। বাংলাকে তিনি বলাগাকপুর বা বিদ্রোহী দেশরূপে আখ্যায়িত করেন এবং বাংলার স্বাধীন সুলতান সম্পর্কেও প্রায়ই বিরূপাত্মক মন্তব্য করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বারানী নিজে বাংলায় না গেলেও বাংলা হতে প্রত্যাগত সৈনিকদের নিকট হতে তিনি শুনে এ গ্রন্থ লিখেন। এ গ্রন্থটি বাংলার ইতিহাস রচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তৎকালীন বাংলার সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন ও ফিরোজশাহ তুঘলকের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমৃদ্ধ ছিল এ গ্রন্থটি।