উত্তর : ভূমিকা : বাংলার ইতিহাস আলোচনার ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় উৎসের অভাব। যেসব উৎসব পাওয়া যায় সেগুলো হলো বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের লিখিত
গ্রন্থ বা বিবরণ মাত্র। তবে ঐতিহাসিক গ্রন্থগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবকাৎ-ই-নাসিরী’ সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
মধ্যযুগের ইতিহাসের উৎস হিসেবে “তবকাৎ-ই-নাসিরী” : ‘তবকাৎ-ই-নাসিরী’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন মিনহাজ-ই-
সিরাজ। এটি বাংলার উপর ফার্সি ভাষায় রচিত হয়েছিল । মিনহাজ এটি রচনা করেন দিল্লির সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদের শাসনামলে। মিনহাজ ১২৪২-১২৪৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা পরিদর্শনে এসে সুলতানের নামে গ্রন্থটি উৎসর্গ করেন। ‘তরাকাৎ-ই- নাসিরী’র অর্থ হলো স্তরসমূহ। ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায় সুলতান নাসিরের আমলে ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহগুলোকে যেভাবে স্তরীভূত করা হয় তাঁর সংকলিত রূপ হলো ‘তবকাৎ-ই-নাসিরী’ ।
অন্যভাবে বলা যায় যে, সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদের নামে এ গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয় বলে এর নামকরণ করা হয় ‘তবকাৎ-ই-নাসিরী’। এ গ্রন্থে ইওয়াজ উদ্দিন তুঘরিল খানের
উড়িষ্যা বিজয়, সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের পরবর্তী দু’দশকের ঘটনা, গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ কর্তৃক পিতৃহত্যা এবং
একইভাবে নিজ সন্তান কর্তৃক তার হত্যার কাহিনী চমৎকারভাবে বর্ণিত আছে। এছাড়া রাজা গণেশের রাজত্ব কাল ও ইলিয়াস
শাহের রাজত্বকাল সম্পর্কেও বেশ কিছু তথ্য আছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলার ইতিহাস রচনায় মিনহাজ-ই-সিরাজ রচিত ‘তবকাৎ-ই-নাসিরী’ ছিল গুরুত্বপূর্ণ
তথ্যনির্ভর গ্রন্থ। এটি থেকে মধ্যযুগের বাংলার অনেক শাসকের বিবরণ পাওয়া যায়। এছাড়াও এ গ্রন্থ থেকে সমকালীন বাংলার
রাজাদের সার্বিক দিক পূর্ণাঙ্গ না হলেও কিছুটা জানা যায়।