অথবা, সমাজ অনুসন্ধানের পদ্ধতিগত নকশার স্বরূপ বর্ণনা কর।
অথবা, সমাজ অনুসন্ধানের বিভিন্ন পদ্ধতিগত নকশা ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সমাজ অনুসন্ধানের বিভিন্ন পদ্ধতিগত নকশা বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : গবেষক সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তুর জন্য তথ্য সংগ্রহ, তথ্য বিশ্লেষণ এবং তাত্ত্বিক কাঠামো বিনির্মাণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির ব্যবহার করে থাকেন। বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে গবেষক আরও সামাজিক অনুসন্ধানে কাজে প্রয়োগ করে সামাজিক ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক বিশ্লেষণ, ঘটনার সবিস্তর স্বরূপ উদ্ঘাটন ও মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করে থাকেন। আর গবেষণার উদ্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য তাই সমাজিক উপাদান বিবেচনা করে গবেষককে সঠিক গবেষণা পদ্ধতি ও নকশাটি তৈরি করতে হয় ।
সমাজ অনুসন্ধানের পদ্ধতিগত নকশার স্বরূপ : Earl R. Babbie সমাজ অনুসন্ধানের জন্য গবেষণা নকশার পদ্ধতিগত দিকের যেসব বিষয় আলোচনা করেছেন এর মধ্যে গবেষণার বিষয়, গবেষণার উদ্দেশ্য, বিশ্লেষণের একক, সময়ের বিভিন্নতা ও গবেষণার প্রেষণা ইত্যাদি সবিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে । এগুলো নিম্নে যথাপরিসরে আলোচনা করা হলো :
ক. গবেষণার উদ্দেশ্য : যে কোনো সামাজিক গবেষণায় গবেষক তাঁর গবেষণা সমস্যা নির্ধারণ করে এর কয়েকটি বিষয় অর্জনের চেষ্টা করে থাকেন । যেমন-১. তথ্য উদঘাটন, ২. ঘটনার বর্ণনা এবং ৩. ঘটনার ব্যাখ্যাকরণ ।
খ. বিশ্লেষণের একক : সামাজিক গবেষণায় সমস্যা নির্ধারণের পর সে অনুযায়ী গবেষক তাঁর বিশ্লেষণের একক নির্ধারণ করে থাকেন । তবে, সাধারণ সমাজ গবেষণায় যেসব একক সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা হয়ে থাকে সেগুলো হলো : ১. ব্যক্তি, ২. দল, ৩. সংগঠন এবং ৪. অন্যান্য সামাজিক উপাদান; যেমন- বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, দুর্ঘটনা, কুসংস্কার, অপরাধ ইত্যাদি ।
গ. গবেষণার বিষয় : Earl R. Babbie এর মতে, সমাজ গবেষণায় একজন গবেষক তার গবেষণা নকশা প্রণয়ন করতে গিয়ে অনেকগুলো বিষয় নির্ধারণ করে থাকেন । এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :
১. পরিচিতি : উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ব্যক্তিগত বিশ্বাস মনোভাব, সংস্কার, নীতিবোধ, বিধিব্যবস্থা ইত্যাদি ।
২. অবস্থা : যেমন- ব্যক্তিগত বয়স, লিঙ্গ, পেশা, আয়, অবস্থান, দলগত অবস্থান ইত্যাদি ।
৩. কার্যক্রম : উদাহরণ, ব্যক্তিগতভাবে ভোট প্রদান, বিনিয়োগ, উপাসনালয়ে গমন, দলগত ও প্রতিষ্ঠানগতভাবে সহযোগিতা, মূল্য নির্ধারণ
প্রভৃতি ।
ঘ. সময়ের বিভিন্নতা : সময়ের দৃষ্টিতে সামাজিক ঘটনাগুলো স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। আর তাই সমাজ গবেষককে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সমাজিক ঘটনাগুলো সময় ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে গবেষণা পরিকল্পনা বা গবেষণা নকশা তৈরি করতে হয়। যেমন-
১. প্রস্থচ্ছেদ পদ্ধতি : সমাজ গবেষণায় একজন গবেষক একটি নির্দিষ্ট সময়ের বন্ধনে আবদ্ধ বিশ্লেষণ করে অর্থাৎ গবেষণার এককগুলো পর্যবেক্ষণ করা হয় সময়ের জ্ঞানকে বিবেচনায় রেখে ।
২. দীর্ঘায়িত পদ্ধতি : সমাজ গবেষণায় গবেষক দীর্ঘ সময় বা বিভিন্ন সময়ব্যাপী পর্যবেক্ষণ কাজ করে থাকেন । এ পদ্ধতিকে আবার তিন ভাবে গবেষণার কাজে লাগিয়ে থাকেন । যেমন-ধারা সমীক্ষা, গোত্র সমীক্ষা এবং প্যানেল সমস্যা।
ঙ. গবেষণার প্রেষণা : সমাজ অনুসন্ধানে পদ্ধতিগত নকশা তৈরিতে গবেষক তার পর্যবেক্ষণ কাজ বিভিন্ন প্রেষণার দ্বারা উদ্ভূত হন । প্রেষণার বিভিন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজ গবেষণায় পরিকল্পনা বা গবেষণা নকশা ও ভিন্নতর হয়ে থাকে । যেমন— ১. নির্দিষ্ট প্রকল্প যাচাই, ২. সাধারণ তত্ত্ব যাচাই, ৩. স্বেচ্ছামূলক গবেষণা, ৪. চুক্তিবদ্ধ গবেষণা, ৫. অসঙ্ঘবদ্ধ আগ্রহ উদঘাটন ইত্যাদি ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজ গবেষকের জন্য Earl R. Babbie এর উল্লিখিত সমাজ অনুসন্ধান পদ্ধতিগত নকশার বিষয়াদি বিবেচনায় রেখে গবেষণা নকশা তৈরি করলে তাতে সাফল্য ও সহজ- স্বাভাবিকতা বজায় থাকে বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করে থাকেন । সমাজ গবেষণার বা অনুসন্ধানের পদ্ধতিগত নকশা যেহেতু বিভিন্ন ধরন হয়, সেহেতু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে সমাজ গবেষণার নকশা তৈরি করলে তা যথাযত ও উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয় এবং তা যাচাইয়ের সময়ও যৌক্তিকতা বজায় থাকে ।