উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই UNICEF শিশুদের জন্য নানা ধরনের কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে যুদ্ধে আক্রান্ত শিশুদের অবস্থার উন্নয়নে জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হলেও বর্তমানে পৃথিবীজুড়ে শিশুদের শারীরিক, সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশের লক্ষ্যে জাতিসমূহকে বিভিন্ন ধরনের
সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে UNICEF। পৃথিবীজুড়ে যে সকল শিশু ও নারীদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে তাদের স্বাভাবিক বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে UNICEF বিশেষ অবদান রেখে যাচ্ছে।
→ UNICEF এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঃ যুদ্ধোত্তর পৃথিবীতে শিশুদেরকে জরুরি সহযোগিতা প্রদানের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও বর্তমানে এর কার্যক্রম অনেক বিস্তৃতি লাভ করেছে, ফলে উদ্দেশ্যেও এসেছে ভিন্নতা। নিম্নে UNICEF –
এর উদ্দেশ্যসমূহ তুলে ধরা হলো :
১. শিশুদের মন্তব্য সর্বোত্তম জীবন শুরুর নিশ্চয়তা প্রদান।
২. শিশুদের রোগ ও মৃত্যু প্রতিরোধ করা।
৩. গর্ভধারণ ও শিশু জন্ম নিরাপদ করা।
৪. প্রাকৃতিক দুর্যোগ কার্যকরভাবে মোকাবেলার মাধ্যমে স্বাভাবিক জনজীবন দ্রুত ফিরিয়ে আনা।
৫. ছেলে ও মেয়ে শিশুর মধ্যকার বৈষম্য দূর করা।
৬. কিশোরদের জন্য টিকে থাকার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা
৭. শিশুকল্যাণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে মাতৃকল্যাণ নিশ্চিত করা।
৮. যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে শিশু কিশোরদের রক্ষা ও পুনর্বাসন।
৯. জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, নির্বিশেষে সকল শিশুর মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ প্রভৃতি ।
→ শিশু স্বাস্থ্য বিকাশে UNICEF -এর অবদান ঃ বিশ্বব্যাপী অনুর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুহার এবং শিশুদের পুষ্টির ক্ষেত্রে UNICEF -এর গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। নিম্নে শিশুস্বাস্থ্য বিকাশে UNICEF এর গুরুত্বপূর্ণ অবদানগুলো তুলে ধরা।
১. পোলিও নির্মূলে টিকা কর্মসূচি ঃ UNICEF ও WHO -এর যৌথ প্রয়াসে পরিচালিত বিশ্বজুড়ে টিকা কর্মসূচির ফলশ্রুতিতে প্রতিবছর ২৫ লক্ষ্যের বেশি শিশুকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। UNICEF3 WHO-এর প্রচেষ্টার ফলে পোলিও এখন নির্মূলের দ্বারপ্রান্তে।
২. লবণে আয়োডিনযুক্তকরণে : UNICEF শিশুদের মানসিক প্রতিবন্ধীর রোধে আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য লাভ করেছে। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ আয়োডিনযুক্ত লবণ ব্যবহার করছে। দাতা ও স্থানীয় লবণ উৎপাদকের সঙ্গে UNICEF ও WHO এর প্রচেষ্টার ফলে পোলিও এখন নির্মূলের দ্বারপ্রান্তে । তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখার মাধ্যমে উৎপাদিত লবণে আয়োডিনযুক্তকরণ নিশ্চিত করা হয়েছে।
৩. ভিটামিন “এ” ক্যাপসুল বিতরণ ঃ ভিটামিন “এ”-র অভাবজনিত কারণে অনুর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের রোগ মৃত্যুর ঝুঁকি য়েছে। UNICEF ও WHO এর প্রচেষ্টার ফলে পোলিও এখন নির্মূলের দ্বারপ্রান্তে। ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের মধ্যে ভিটামিন “এ” ক্যাপসুল বিতরণ এবং ভিটামিন যুক্ত শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনসাধারণকে অভিহিত করে সহজে প্রতিরোধযোগ্য ও স্বচ্ছ সমস্যার সমাধানে দেশসমূহকে সাহায্য করছে।
৪. জল ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ঃ ১৯৯৯ সালের হিসেব মতে ১০ হাজার লক্ষের বেশি মানুষ পরিষ্কার পানীয় জল ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত, প্রায় ২৪ হাজার লক্ষের অপর্যাপ্ত বা কোনো পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাই নেই। প্রায় ৩০ লক্ষ শিশু এখনও ডায়রিয়াসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগে মারা যায়। এজন্য তাদের নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের
ব্যবস্থা করতে UNICEF সহযোগী অন্যান্য সংস্থা ও সরকাকে সাহায্য করে যাচ্ছে।
৫. স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান ৪ মাতৃত্ব ও শিশু জন্মজনিত কারণে অল্পবয়সী নারীসহ প্রতিবছর প্রায় ৮ লক্ষ মহিলা মৃত্যুসহ লক্ষ মহিলা প্রতিবন্ধীত্ব ও আজীবন শারীরিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে।
UNICEF প্রসব পূর্ববর্তী ও স্বাস্থ্যকর প্রসব ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণে সহায়তা করেছে।
৬. “শিশুবান্ধব” হাসপাতাল নির্মাণ : UNICEF, WHO ও অন্যান্য অংশীদার সংস্থার সহযোগিতায় “শিশু বান্ধব” হাসপাতালের উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হচ্ছে। এতে শিশু স্বাস্থ্য রক্ষায় মাতৃস্তন পানকে উৎসাহিত করা হয়।
৭. শৈশব সংরক্ষণ : বিশ্বব্যাপী শিশুদের শৈশব সংরক্ষণে UNICEF নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। “UNICEF act to make certain that children survive and thrive all that way to adult hood” এক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন অভিযান এবং শিশু ও নারী ক্ষমতায়ন পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে।
৮. মীনা ইনিশিয়েটিভ ঃ নারী ক্ষমতায়ন ও মেয়ে শিশুর বিকাশে ইউনিসেফ এর গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ মীনা ইনিশিয়েটিভ (মীনা কার্টুন) এর মাধ্যমে মেয়ে শিশুর প্রতি সমাজ ও মাতা-পিতার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সাধিত হয়।
উপসংহার। পরিশেষে বলা যায় যে, জাতিসংঘের একটি বিশেষায়িত সংস্থা হিসাবে UNICEF বিশ্বব্যাপী শিশু স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, ও কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিশেষ করে শিশুস্বাস্থ্য বিকাশে UNICEF বিশ্বব্যাপী সম্মান অর্জনে সচেষ্টা হয়েছে। যার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৬৫ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করে।