উত্তর ঃ ভূমিকা : জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ হচ্ছে স্থানীয় স্বায়ত্তশায়িত সরকারি সংস্থা। জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদকে সাহায্য করার জন্য দেশের ৬৪টি জেলায় জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ রয়েছে। জেলা প্রশাসক জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি হিসেবে কাজ করেন। একটি জেলার সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতেই
জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদের অগ্রযাত্রা ঘটে থাকে। তাই জাতীয় উন্নয়নে এই পরিষদের ভূমিকা অনন্য হয়ে দেখা দিয়েছে। যা কখনও অস্বীকার করার অবকাশ নেই।
→ জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যাবলি : জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যাবলিগুলো নিম্নে আলোচিত হলো :
১. গ্রাম ও শহরাঞ্চলের সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধান সুপারিশ দান ঃ প্রতিটি জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ গ্রাম ও শহরাঞ্চলের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করে পাশাপাশি কিভাবে তা সমাধান করা যেতে পারে। এজন্য উপযুক্ত সুপারিশমালা প্রণয়ন ও দান করে থাকে। ফলে সংশ্লিষ্ট জেলার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের পথ সুগম হতে থাকে।
২. স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে অনুদান প্রদানে সহায়তা ঃ সংশ্লিষ্ট জেলায় অবস্থিত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থা সমূহকে অনুদান প্রদানের মাধ্যমে অগ্রগতির দিকে ধাবিত করতে জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের বরাবর সুপারিশ প্রেরণ করে থাকে।
৩. স্বউদ্যোগে স্বেচ্ছামূলক কার্যক্রম গ্রহণ ঃ বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার অধিকাংশ বাসিন্দাদের আর্থিক অবস্থা তেমন একটা ভাল নয়। তাদের জীবনমানের উন্নয়ন সাধনকল্পে এই পরিষদ স্বউদ্যোগে স্বেচ্ছামূলক কার্যক্রম গ্রহণ ও তা বাস্ত বায়নে বেশ তৎপরতা দেখায়।
৪. বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদন : বাংলাদেশে বিদ্যমান জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ তার সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদনের যাবতীয় ব্যবস্থা করে থাকে।
৫. অনুদান পর্যালোচনা : বাংলাদেশে জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন সংস্থাকে অনুদানের পর্যালোচনাও করে থাকে এই পরিষদ। প্রয়োজনে ঐসব সংস্থার ব্যবস্থাপনা ও তাল্লাশ করে থাকে।
৬. কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ঃ বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ কর্তৃক নিবন্ধিত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমস্ত কার্যক্রমকে পর্যবেক্ষণ করে থাকে। যা সমাজকল্যাণকে আরো উন্নত হতে সাহায্য করে থাকে ।
৭. ত্রৈমাসিক পরামর্শদান ঃ বাংলাদেশে জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ বা সরকারকে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পরামর্শদান করা। ফলশ্রুতিতে এদেশে সমাজকল্যাণ কার্যক্রম বেশ ফলপ্রসূ হতে পারে।
৮. অনুদান সংগ্রহ ঃ অনুদান সংগ্রহ ও জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদের অন্যতম কাজ হিসেবে বিবেচিত হয়। সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সুতরাং, এ ক্ষেত্রে সরকারের প্রদত্ত অনুদান যথেষ্ট হতে পারে না। এ হেন পরিস্থিতিতে জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ সমাজকল্যাণ কার্যক্রমে আগ্রহী ও স্বেচ্ছায় দানশীল ব্যক্তিবর্গের নিকট হতে উপযুক্ত রশিদ প্রদান ও যথাযথ হিসেবে সংরক্ষণ সাপেক্ষে অনুদান গ্রহণ করে থাকে ।
৯. ষান্মাসিক প্রতিবেদন প্রেরণ : সরকারি ও অসরকারি পর্যায়ে জেলার সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের ওপর
ষান্মাসিক ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রতিবছরের ৩১ জুলাই ও ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ
পরিষদে প্রেরণ। ফলশ্রুতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণের ও বেশ সুযোগ সৃষ্টি যা দেশের উন্নয়নকে পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে।
১০. অসরকারি খাতের সংগঠনকে সাহায্যদান ঃ বাংলাদেশ জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সদা তৎপরতা দেখায়। তাই জেলায় অসরকারি খাতে যে সকল সংগঠন বা ব্যক্তি বিশেষ সমাজকল্যাণে কাজ করছেন তাদেরকে সর্বপ্রকার সাহায
্য ও সহযোগিতা প্রদান করছে। এমনকি মাঝে মাঝে ঐসব সংগঠনের কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করছে।
১১. স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শক্তিশালীকরণ ঃ জেলাগুলোতে অবস্থিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শক্তিশালীকরণেও এই পরিষদ অবদান রেখে চলেছে। ব্যবস্থাপনা উন্নত করার নির্দেশাবলি প্রদানের পাশাপাশি সাংগঠনিক কাঠামো দৃঢ় করতে বৈদেশিক অনুদানের ব্যবস্থাও করে থাকে। তাছাড়া অন্যান্য সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখে।
১২. পরিষদের উন্নয়ন সাধন : জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনার তাগিদে এ পরিষদের অবকাঠামোসহ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সাধনে কাজ করে থাকে।
১৩. অন্যান্য দায়িত্ব পালন : উপরোক্ত কার্যাবলি সম্পাদনের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্দেশিত ও জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের গৃহীত নানান দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে থাকে।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের অন্যতম অঙ্গ হিসেবে জেলাস্থিত সর্বস্তরের মানুষের সামাজিক কল্যাণ সাধনের নিমিত্তে কাজ করে যাচ্ছে। যার দরুন হাজার হাজার দরিদ্র, অসহার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত হচ্ছে। তাই সরকারকে জেলা সমাজকল্যাণ পরিষদের কার্যক্রমকে প্রসারিত করতে হবে।