উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ বাংলাদেশে রেডক্রস সোসাইটির অভিযাত্রা ঘটে ১৯৭২ সালে রেডক্রস নামে। যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির এক আদেশবলে বর্তমান নাম পরিগ্রহ করতে থাকে। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সমস্ত কার্যক্রমই আর্তমানবতার সেবার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়ে আসছে। যুদ্ধাহত, দুর্যোগকবলিত অগণিত অসহায় দুর্বল জনগোষ্ঠীর পাশে সাহায্যের হাত নিয়ে রেডক্রিসেন্ট দাঁড়িয়েছে। রেডক্রিসেন্টের কিছু স্বতন্ত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ । এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ভূমিকা অনন্য হয়ে উঠেছে। তাই বাংলাদেশে এর কার্যক্রমগুলো প্রসারিত করতে হবে।
→ বাংলাদেশে রৈডক্রস সোসাইটির কার্যক্রমগুলো : বাংলাদেশে রেডক্রস সোসাইটির কার্যক্রমগুলো অতীব
প্রয়োজনীয় বলে গণ্য হয়। সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. কমিউনিটিভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলা কর্মসূচি ঃ বাংলাদেশে দুর্যোগ নিয়মিত ঘটনা। প্রতিবছর বাংলাদেশে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙ্গন, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। ফলশ্রুতিতে মানুষের প্রাণহানিসহ আবকাঠামোর ধ্বংস সাধন ঘটে। আর বাংলাদেশের এসব অসহায় মানুষের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে রেডক্রস সোসাইটির তার কমিউনিটি ভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলা কর্মসূচি নিয়ে। উক্ত কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য, পানি সরবরাহ, ওষুধপত্র প্রদান ও ত্রাণ তহবিল গঠন করা হয়ে থাকে। বর্তমানে এ কর্মসূচি উপকূলীয় ৫টি জেলা
থেকে ৩৪টি দুর্যোগপ্রবণ এলাকাতে সম্প্রসারিত হয়েছে।
২. ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি ঃ বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে জোরালো অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশের দুর্যোগকালীন দুঃস্থ-অসহায়দের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ ও সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে এটি। ফলশ্রুতিতে বন্যায় পীড়িত ২,৪২,০০০ পরিবারকে পুনর্বাসিত করা
সম্ভব হয়েছে।
৩. কমিউনিটি ক্ষমতায়ন কর্মসূচি : কমিউনিটি ক্ষমতায়ন কর্মসূচি বাংলাদেশের মত গরিব রাষ্ট্রের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। কেননা কমিউনিটি উন্নয়ন মানেই সমাজের উন্নয়ন সাধন। রেডক্রিসেন্টের এ কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামীণ পর্যায়ে দলগঠন, উদ্বুদ্ধকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। IFAD এর সহায়তায় সরকার এ
কর্মসূচিকে বেগবান করছে।
৪. সাংগঠনিক উন্নয়ন কর্মসূচি ঃ বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সাংগঠনিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এর ব্যবস্থাপনা সম্প্রসারিত করতে এ কর্মসূচি গৃহীত হয়ে থাকে। রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সাংগঠনিক উন্নয়নের জন্য ৬টি বিষয়কে অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। বিষয়গুলো হলো- (ক) তহবিল সংগ্রহ; (খ) মানবসম্পদ উন্নয়ন ; (গ) প্রশিক্ষণ ; (ঘ) আর্থিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন; (ঙ) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সামর্থ্য ও দক্ষতা উন্নয়ন ; (চ) যুব রেডক্রিসেন্ট ও স্বেচ্ছাসেবক উন্নয়ন।
৫. এতিম পুনর্বাসন কর্মসূচি : রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ১০০ এতিম শিশুদের লালন পালন ও পুনর্বাসনের জন্য একটি এতিমখানা পরিচালনা করছে। এটি ভাবষ্যতে আরো ৮টি এতিমখানা পরিচালনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৬. জরুরি খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি ঃ জরুরি খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি হচ্ছে রেডক্রিসেন্টের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হিসেবে গণ্য। এদেশের সব অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভাব দূর করতে ও শিশু খাদ্য সরবরাহ করতে এটি তৎপরতা দেখায়। উদাহরণস্বরূপ প্রায় ৭ লাখ হিন্দুদেরকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে।
৭. স্বাস্থ্য উন্নয়ন কর্মসূচি : স্বাস্থ্য উন্নয়ন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণে সিদ্ধহস্ত বাংলাদেশে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি। বাংলাদেশে দরিদ্র -অসহায় জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা প
্রদানের লক্ষ্যে ঢাকায় রয়েছে হলিফ্যামিলি হাসপাতাল। এ ছাড়া সারাদেশে রয়েছে-
(ক) ৫টি হাসপাতাল; (খ) ৬০টি গ্রামীণ মাতৃসদন কেন্দ্র; (গ) ৫টি মাতৃসদন; (ঘ) ১টি মেডিকেল কলেজ; (ঙ) ৩টি বহির্বিভাগ ক্লিনিক; (চ) ২টি চক্ষু ক্লিনিক; (ছ) ২টি ধাত্রী প্রশিক্ষণ সেন্টার; (জ) ১টি নার্সিং স্কুল; (ঝ) অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও (ঞ) পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি ইত্যাদি।
৮. রক্তদান কর্মসূচি ঃ রক্তদান কর্মসূচি রেডক্রিসেন্টের অন্যতম গুরুত্বকপূর্ণ কর্মসূচি বলে প্রতিভাত হয়েছে। রক্তদানকে সহজ করতে ১৯৮০ সাল থেকে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি এ কর্মসূচির সূচনা ঘটায়। সারাদেশের ৫টি কেন্দ্রের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সরবরাহের ব্যবস্থা করছে। আর সেই লক্ষ্যে ২০০৪ পর্যন্ত প্রায় ১৮,৯৯৪
ব্যাগ সংগ্রহ করে মুমূর্ষু রোগীদের মাঝে বিতরণে সাফল্য দেখিয়েছে।
৯. ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি : বাংলাদেশে প্রতিবছরে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ কমাতেই এই কর্মসূচি গ্রহণ করেছে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি। ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে ২০০৪ সাল পর্যন্ত রেডক্রিসেন্ট ও সরকারের যৌথ প্রচেষ্টার ১০৪৫৭ জন ছাত্র-ছাত্রী, ১১৫০ জন জেলে ও ৩৩.৩২৪ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে
ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস জনগণের নিকট পৌঁছানো, চিকিৎসা প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধার, চিকিৎসা প্রদান ও ঘূর্ণিঝড়ের
পরবর্তী সম্পর্কে করণীয় প্রভৃতির কার্যক্রম আরো বেগবান হয়েছে।
১০. পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি : তিনটি পার্বত্য জেলায় আধিবাসী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, বাসস্থান চিকিৎসাসহ যাবতীয় উন্নয়নে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি অনবদ্য ভূমিকা রেখে চলছে ।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কার্যক্রমগুলো দ্রুত আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে
সহায়ক। যা খুবই জরুরি। তাই এই সোসাইটির কার্যক্রমগুলোর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।