উত্তর ঃ ভূমিকা : Bangladesh Rural Advancement Committee বা সংক্ষেপে BRAC বাংলাদেশের বৃহত্তম দেশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এ প্রতিষ্ঠান প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭২ সালে। যুদ্ধোত্তর জরুরি তাৎক্ষণিক সাহায্য এবং পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রথম এর কাজ শুরু হয় সিলেটের শাল্লা অঞ্চলে ।
→ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিসেবে ব্র্যাকের ভূমিকা ঃ বর্তমানে ব্র্যাক আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বিশাল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং এর বাৎসরিক বাজেট হলো ৫ কোটি টাকা। কর্মীর সংখ্যা ১,৫০০। সেবা লাভকারী দল সংখ্যা ৪৮০টি ও সেবা লাভকারী পরিবার সংখ্যা ১৬,০০০।
→ দারিদ্র্য বিমোচন ও কমংসংস্থানের লক্ষ্যে ব্র্যাক যেসব ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে তা নিম্নরূপ :
১. আউরিচ কর্মসূচি ঃ দরিদ্র মানুষদের সামাজিকভাবে সচেতন হয়ে দলবদ্ধ হওয়ার জন্য এ কার্যক্রম গ্রহণ করে। এতে দরিদ্র মানুষের যথাযথ মজুরি ভাগ চাষ, সরকারি ঋণ, স্বাস্থ্যগত সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি পেতে সচেতন করে তোলা হয়।
২. গ্রামীণ ঋণ ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ঃ এ কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র নারী-পুরুষদের সচেতন সংঘবদ্ধ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে ঋণভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ঋণ পাওয়ার জন্য কতকগুলো শর্ত মেনে চলতে হয়। যেমনঃ গ্রুপ সদস্য হতে হবে।
(খ) নিয়মিত সাপ্তাহিক সভায় থাকতে হবে এবং সপ্তাহে মাথাপিছু ১ টাকা করে দিতে হবে।
(গ) ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে।
(ঘ) সঞ্চয় থাকতে হবে, যাতে ঋণ যে প্রকল্পের জন্য নেওয়া হচ্ছে তার শতকরা ১০ ভাগ নিজে বহন করতে পারে।
(গ) গ্রুপকে দায়িত্ব অর্জন করতে হবে।
৩. সিলেট প্রকল্প : সিলেটের ৩টি উপজেলার ৭টি ইউনিয়নজুড়ে রয়েছে ব্র্যাকের প্রাচীনতম শাল্লা প্রকল্প। ৮৫টি গ্রামে ১২৪টি গ্রুপ আছে। ১২৪টি গ্রুপের প্রতিনিধি নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় ফোরাম গড়ে তোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ফোরামে
নিয়োজিত কর্মচারীরা ফোরামের প্রস্তাব বাস্তবায়ন, খাসজমি বরাদ্দ গ্রহণ এবং অন্যান্য সরকারি সুবিধার জন্য সরকারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা, ব্যাংক ঋণের জন্য যোগাযোগ, স্বাস্থ্য কার্যক্রম পরিচালনা এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো গ্রাম সংগঠনকে অবহিত করার দায়িত্ব পালন করে।
এ ছাড়া ও ব্র্যাকের গ্রামাঞ্চলে মহিলাদের গ্রুপ গঠন ও তাদের বিভিন্ন সেলাই কাজে ঋণ প্রদান ইত্যাদি কর্মসূচির পরিপূরক হচ্ছে আড়ং। গ্রামীণ মহিলাদের থেকে তাদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের কাপড় কিনে আড়ং এর মাধ্যমে শহরে বাজারজাতকরণ করা হয়। এর একটি অংশ রপ্তানি ও হয়। ঢাকার ২টি এবং চট্টগ্রামে ও সিলেটে ১টি করে মোট ৪টি আড়ং দোকানে ২০০ মহিলা উৎপাদক গ্রুপের তৈরি দ্রব্যাদি বিক্রি করে। ১৯৮৬ সালে এর বিক্রির পরিমাণ ছিল প্রায় .আড়াই কোটি টাকা।
৪. জামালপুর প্রকল্প : জামালপুর এলাকার শুধুমাত্র দরিদ্র নারীদের জন্য এ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এদের মধ্যে শতকরা ৩০ জনের স্বার্থ নেই। তাদের উপার্জনমুখী প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পশুপালন গবাদি পশুর চিকিৎসা, মধুচাষ, বৃক্ষরোপণ, হাঁস- মুরগির খামার, মৎস্য চাষ, তেলের ঘানি, সেলাই কাজ, পাটের দ্রব্য তৈরি, চুলা তৈরি, কাপড় বোনা, ছোট ব্যবসায়, নকশিকাঁথা, শিকা তৈরি, প্রভৃতি। এ অঞ্চলে ব্র্যাকের উদ্যোগ ৩টি নকশিকাঁথা কেন্দ্র রয়েছে।
৫. মানিকগঞ্জ প্রকল্প ঃ মানিকগঞ্জ এলাকায় এ প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র লোকদের দলবদ্ধভাবে ঋণভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম গ্রহণে সাহায্য সহযোগিতা করা হয়। এ প্রকল্পে সামাজিক শিক্ষা ও স্বাক্ষরতার উপর জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়া ব্র্যাক মানিকগঞ্জ সমন্বিত প্রকল্প নামে বৃহৎ উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় ১৮২টি গ্রামে ৩০০টির ও বেশি গ্রুপ গঠন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে এলাকার হাঁস-মুরগি পালন, পশুপালন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা
ইত্যাদি বি
ষয়ে প্রশিক্ষণ ও ঋণ সহায়তা।
৬. বিবিধ ঃ ব্র্যাকের অন্যান্য আর ও বেশ কিছু প্রকল্প আছে এগুলো হল শিক্ষা কর্মসূচি, খাবার স্যালাইন, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য কর্মসূচি, আইনের সহযোগী সেবা প্রকল্প ইত্যাদি। ব্র্যাকের সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক হিসেবে রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, গবেষণা ও মূল্যায়ণ বিভাগ লাইব্রেরি এবং কম্পিউটার সেন্টার। ব্র্যাক ইতোমধ্যে দুটো
বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও স্থাপন করেছে। এগুলো হচ্ছে ব্র্যাক প্রিন্টার্স এবং আলু হিমাগার ও বরফ কল। শিক্ষা কর্মসূচিতে ব্র্যাক পাওলো ফ্রেইবীর শিক্ষা কাঠামোতে পাঠক্রম ও পাঠ্যপুস্তক তৈরি করেছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জনগণের কল্যাণের ক্ষেত্রে ব্র্যাকের ভূমিকা অপরিহার্য। কারণ ব্র্যাকের কর্মকৌশল হলো গ্রাম এবং অঞ্চল পর্যায়ে যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার সৃষ্টি ও বিকাশ সাধন। এর মাধ্যমে লক্ষ্য দল
সম্পর্কে সংগঠিত করা এবং নিজেদের উন্নয়নে তাদের বিভিন্ন কাজে লাগানোতে সার্বিক সাহায্য ও সহযোগিতা দান করা । এভাবে ব্র্যাক বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।