উত্তর : ভূমিকা ঃ আফটার কেয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মুক্ত কয়েদিদের পুনর্বাসনে সহায়তা করা হয়। মুক্ত কয়েদিরা আমাদের সমাজেরই অংশ। আফটার কেয়ার সার্ভিস মুক্ত কয়েদিদের কল্যাণে কাজ করে থাকে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণ রাষ্ট্র। বাংলাদেশের অপরাধীদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন পরিচালনায় সংশোধনমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয় আর এরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আফটার কেয়ার সার্ভিস। আফটার কেয়ার সর্ভিস অফিসাররা কারামুক্ত কয়েদীদেরকে মুক্ত পরিবেশে সহজেই খাপ খাওয়াতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এই সেবা কর্মসূচির মাধ্যমে কারামুক্ত কয়েদির মানসিকতা উন্নত করে পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। বর্তমানে এ সার্ভিসের প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক।
→ আফটার কেয়ার সার্ভিসের উদ্দেশ্যসমূহ ঃ উদ্দেশ্যের নিরিখে পরিচালিত হলেই যে-কোনো কর্মসূচি সফল হতে পারে। আফটার কেয়ার সার্ভিসেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এর কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। এই উদ্দেশ্যগুলো নিম্নরূপ :
১. আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ৪ আফটার কেয়ার সার্ভিসের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদিদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। আর এ লক্ষ্যে আফটার কেয়ার সার্ভিস অফিসাররা কয়েদিদেরকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
২. অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ ৪ অপরাধ যাতে পুনরায় অপরাধী কর্তৃক সংঘটিত হতে না পারে সেজন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয় । উদাহরণস্বরূপ বলা যায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করে থাকে এটি।
৩. শিক্ষা প্রদান ঃ এ সার্ভিসের মাধ্যমে কয়েদিদেরকে হালকা সাধারণ শিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষা ও ধর্ম নৈতিকতার শিক্ষা প্রদান করা হয় । যাতে করে কয়েদিরা নিজে থেকে চারিত্রিক সংশোধনে তৎপর হতে পারে।
৪. বিভিন্ন দফতরে সংযোগ সাধন ঃ আফটার কেয়ার সার্ভিস কর্মকর্তাগণ মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদিদের কল্যাণার্থে বিভিন্ন দফতর ও বিভাগে সংযোগ সাধন করে থাকে।
৫. হস্তশিল্প ও কুটির শিল্পের বিকাশ ঃ আফটার কেয়ার সার্ভিসের একটি উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য হলো হস্তশিল্প ও কুটির
শিল্পের বিকাশ । সেজন্য অফিসাররা মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদিদেরকে কারিগরি জ্ঞান, প্রশিক্ষণ ও স্বল্প ঋণ সুবিধা প্রদান করে থাকে।
৬. পারিবারিক সম্পর্ক স্থাপন ঃ মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদিদেরকে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের খোঁজ খবর ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনেও আফটার কেয়ার সার্ভিসের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর এই কেয়ার সার্ভিসের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর এই উদ্দেশ্যটি বাস্তবায়িত হলে অপরাধীর অনুপস্থিতি কোনো পরিবারকেই আর্থিক ও মানসিক দিক দিয়ে ক্ষতির মধ্যে ফেলতে পারবে না।
৭. আত্মপক্ষ সমর্থনে সহায়তা ঃ শুধুমাত্র এই সার্ভিসের মাধ্যমেই মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদিদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে।
৮. চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা : বাংলাদেশে আফটার কেয়ার সার্ভিসের অন্যতম উদ্দেশ্য মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদিদের জন্য চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা করা। আর এজন্য এতে বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠমালার আয়োজনের ব্যবস্থা গৃহীত হয়ে থাকে।
৯. মানসিকতার পরিবর্তন ঃ অপরাধী হিসেবে সাব্যস্তদেরকে মানসিক দিক দিয়ে পরিবর্তন করাও আফটার কেয়ার সার্ভিসের আরেকটি উদ্দেশ্য।
উপসংহার।পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের সংশোধনমূলক কার্যক্রমের অন্যতম একটি আফটার কেয়ার সার্ভিস। যা মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েদিদেরকে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি প্রশিক্ষণদানের ব্যবস্থা করে ও সুষ্ঠুভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও গ্রহণ করে থাকে। ফলশ্রুতিতে সমাজ থেকে অপরাধের মাত্রা তুলনামূলকভাবে অনেকটা হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছে। তাই এর উদ্দেশ্যগুলো অত্যন্ত তাৎপর্যময় স্বীকার করতেই হবে।