উত্তর ৪ ভূমিকা ঃ পরিকল্পনা হচ্ছে প্রত্যাশিত কোনো কার্যসম্পাদনের পূর্ব প্রস্তুতি। এই প্রস্তুতি সম্পন্ন হয় মূলত কোনো কার্যক্রম, প্রক্রিয়া বা কৌশলের অনুসরণের মাধ্যমে কখন, কোথায়, কিভাবে, কার মাধ্যমে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে তাই পরিকল্পনা নির্দেশ করে। যে-কোনো সমাজ বা দেশের আর্থ-সামাজিক কল্যাণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে
মূল চাবিকাঠি ও পূর্বশর্ত শর্ত হচ্ছে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা।
→ উত্তম পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করা অনেকটা সহজসাধ্য হলেও পরিকল্পনাকে সার্থক ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন তুলনামূলক কঠিন, কষ্টসাধ্য একটি বিষয়। পরিকল্পনা শুধু প্রণয়ন করলে হবে না, তা বাস্ত বায়নযোগ্য হতে হবে। অর্থাৎ পরিকল্পনা শুধুমাত্র কল্পনা করলে চলবে না, এর বাস্তব রূপ দিতে হবে। যে কোনো
পরিকল্পনাকে উত্তম পরিকল্পনা বলা যায় না, একটি পরিকল্পনাকে তখনই উত্তম বা ভাল পরিকল্পনা বলা যায়, যখন এটি সুষ্ঠু পদ্ধতিগত এবং বাস্তব ভিত্তিকভাবে প্রণীত এবং সুষ্ঠু সার্থকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
HB Tracker (1950) উত্তম পরিকল্পনার যেসকল বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলো হলো :
১.পরিকল্পনার উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও ভূমিকা নির্ধারণ,
২. কর্মসূচি ধার্য করা,
৩. নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের সময়সীমা নির্দিষ্ট করা।
অন্যদিকে M.L. Seth (1984) উত্তম পরিকল্পনার যে সকল পূর্বশর্ত উল্লেখ করেছেন তা হলো :
১. পরিসংখ্যানিক তথ্য,
২. অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান,
৩. সরকারের স্থায়িত্ব,
৪. আয়ের যৌক্তিক সমতা এবং
৫. জনগণের সহযোগিতা।
→ উত্তম পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য বা পূর্বশর্তগুলো তুলে ধরা হলো ঃ
১. সারল্য ও স্পষ্টতা : পরিকল্পনা মাত্রই সরল ও স্পষ্ট হতে হবে অর্থাৎ এমন হওয়া উচিত নয় যা কঠিন ও অস্পষ্ট হবে। যে প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য পরিকল্পনা প্রণীত হবে সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নিকট এটি সহজ ও বোধগম্য হতে হবে। এর ব্যতিক্রম ঘটলে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সারল্য ও স্পষ্টতা উত্তম পরিকল্পনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ।
২. তথ্যভিত্তিক ঃ উত্তম পরিকল্পনার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি তথ্যভিত্তিক। আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সম্পদ ও শক্তি প্রভৃতি নির্ধারণের উদ্দেশ্যে এ ধরনের পরিকল্পনা তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। তথ্যসংগ্রহ করার পর এগুলো যাচাই- বাছাই করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় ।
৩. সুস্পষ্ট নিরবচ্ছিন্নতা ঃ উত্তম পরিকল্পনার অপর একটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি অবিরাম চলতে থাকবে। এজন্য একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাথে সাথে আরেকটি পরিকল্পনার কাজ শুরু করতে হয়। ফলে বর্তমান পরিকল্পনায় কোনো শূন্যতা সৃষ্টি হয় না ।
৪. সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য ঃ উত্তম পরিকল্পনার নির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকতে হবে। আবার প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যের সাথে পরিকল্পনা সংগতিপূর্ণ হতে হবে। লক্ষ্যবিহীন কোনো কাজই সফল হয় না। তাই উত্তম পরিকল্পনায় সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য থাকবে।
৫. ঐক্য ও সমন্বয় ঃ পরিকল্পনায় সমঝোতা ও ঐক্য থাকবে। সামগ্রিক পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিকল্পনা থাকতে পারে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপর প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক পরিকল্পনার সফলতা নির্ভর করে। তাই উত্তম পরিকল্পনা মানেই ঐক্য, যোগাযোগ ও সমন্বয় থাকবে।
৬. নির্ভুলতা ঃ নির্ভুলতা উত্তম পরিকল্পনার অন্যতম পূর্বশর্ত। পরিকল্পনা যত নির্ভুল হবে এর ফল ততই ভালো হবে। তাই পরিকল্পনা পূর্বানুমান, পূর্বঅভিজ্ঞতা, পূর্ববর্তী ঘটনা প্রভৃতির ভিত্তিতে প্রণীত হলে তা ত্রুটিমুক্ত হবে।
৭. নমনীয়তা ঃ নমনীয়তা উত্তম পরিকল্পনার অপর একটি বৈশিষ্ট্য। ভবিষ্যতে পরিকল্পনা পরিবর্তন হতে পারে। তাই এটি যে কোনো সময় পরিবর্তন করতে হয় বিধায় একে নমনীয় নীতি গ্রহণ করতে হ
য়। তা-না হলে পরিকল্পনা তার কার্যকারিতা হারায় ।
৮. বিশেষজ্ঞ দ্বারা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও পরিকল্পনায় তথ্যসমূহ বাছাই করা একটি বুদ্ধিবৃত্তীয় কাজ। আর এ কাজটি সম্পন্ন করা হয় অভিজ্ঞতা ও যোগ্য বিশেষজ্ঞদের দ্বারা বয়স্ক, জ্ঞানী অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ বিশেষজ্ঞ হিসেবে অভিহিত হয় । তাই বিশেষজ্ঞ কর্তৃক পরিকল্পনা প্রণয়ন উত্তম পরিকল্পনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৯. আধুনিক কলাকৌশলের ব্যবহার ও উত্তম পরিকল্পনায় বিশেষজ্ঞ কর্তৃক আধুনিক কলাকৌশলের ব্যবহার অত্যাবশ্যক ! কলাকৌশল ও প্রযুক্তির অনুপস্থিতিতে ভারসাম্যপূর্ণ ও যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব হয় না।
১০. সময় উল্লেখ ঃ উত্তম ও ভালো পরিকল্পনার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এতে সময়ের কথা উল্লেখ থাকে। পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ কখন শুরু হবে এবং কখন শেষ হবে তা এতে নির্দিষ্ট করা থাকে। যেমন, বার্ষিক পরিকল্পনা, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রভৃতি।
১১. সম্পদের পূর্ণ ব্যবহার ঃ একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনার অন্যতম দিক হলো এতে সম্পদ ও সুযোগের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত থাকে। এজন্য বাস্তবমুখী পরিকল্পনা রচিত হয়। ফলে সম্পদের অপব্যয় পরিকল্পনায় নিষিদ্ধ।
১২. বাস্তবমুখী পরিকল্পনা ঃ উত্তম পরিকল্পনা মানেই বাস্তবমুখী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, কর্মসূচি, কলাকৌশল নীতি প্রভৃতি সব কিছু হতে হবে বিজ্ঞানসম্মত ও যুগোপযোগী। তাই বাস্তবসম্মত হলেই এটি উত্তম পরিকল্পনার সফলতা অনেকাংশে নির্ভরশীল।
১৩. গ্রহণযোগ্যতা : ভালো পরিকল্পনা যথাযথভাবে প্রণীত হবে এবং তা সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এছাড়া এর ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের উপর থেকে শুরু করতে হবে। কেননা প্রতিষ্ঠানের ও উচ্চস্তর থেকে কার্যক্রম ভালোভাবে অনুধাবন করা ও অবলোকন করা যায়।
১৪. মূল্যায়নের সুযোগ ৪ পরিকল্পনার সফলতা ব্যর্থতা মূল্যায়নের সুযোগ থাকা উত্তম পরিকল্পনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পরিকল্পনায় মূল্যায়নের সুযোগ থাকলে পরবর্তী পরিকল্পনা প্রণয়ন সহজ কম ক্রুটিযুক্ত হয়। ফলে পরিকল্পনা গতিশীল ও
ধারাবাহিক হয়।
উপসংহার। পরিশেষে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি উত্তম পরিকল্পনায় অপরিহার্য। এগুলো হলো উত্তম পরিকল্পনার আদর্শ গুণাবলি হিসেবে বিবেচিত। সামাজিক উন্নয়নের জন্য উত্তম পরিকল্পনার বিকল্প নাই। তাই এসব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পরিকল্পনাকে উত্তম পরিকল্পনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।