সাংগঠনিক কাঠামোগুলো সম্পর্কে বর্ণনা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : পরিকল্পনা আধুনিককালের একটি বহুল প্রচলিত শব্দ। এটা প্রশাসন বা ব্যবস্থাপনার প্রাথমিক বা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কার্য। যে-কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক কল্যাণ ও উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি ও পূর্বশর্ত হচ্ছে পরিকল্পনা । সুষ্ঠু ও কার্যকর পরিকল্পনা ব্যতিরেকে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। পরিকল্পনা হচ্ছে ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের রূপরেখা বা সুশৃঙ্খল পদক্ষেপ।
→ পরিকল্পনার কৌশল বা পদ্ধতি : পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি ও কৌশল। পরিকল্পনাকে অধিক কার্যকরী ও ফলপ্রসূ করার জন্য প্রতিটি দেশেই যুক্তিসংগত পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। তাই পরিকল্পনার গ্রহণযোগ্যতা এর পদ্ধতি বা কৌশলের উপর নির্ভরশীল। প্রখ্যাত লেখক M.L. Seth (1984 PP-89-124) পরিকল্পনার
কতকগুলো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন। নিম্নে পরিকল্পনার এসব পদ্ধতিগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো :
১. উদ্দেশ্য (Objective) : পরিকল্পনার অন্যতম কৌশল হচ্ছে পরিকল্পনার উদ্দেশ্যসমূহ সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা
এবং এর যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা প্রদান করা। একটি দেশের আর্থ-সামাজিক সমস্যা, চাহিদা, উন্নয়ন প্রভৃতির প্রেক্ষিতে উন্নয়নের খাত নির্বাচন, সম্পদ আহরণ ও কৌশল প্রণয়ন প্রভৃতির সফল বাস্তবায়ন সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ব্যতীত সম্ভব নয় ।
২. লক্ষ্য নির্ধারণ (Plan target) : পরিকল্পনার উদ্দেশ্য নির্ণয়ের পর এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। এজন্য পরিকল্পনার উদ্দেশ্যসমূহকে গুণগত দিক থেকে পরিমাণগত দিকে রূপান্তর করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, দেশের জনগণের শিক্ষার উন্নয়ন যদি উদ্দেশ্য হয়, তাহলে এর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হবে শিক্ষা স্তর ৬০% থেকে ৭০% এ উন্নীত করা। লক্ষ্য নির্ধারণ ব্যক্তিগত পর্যায় বা সামগ্রিক পর্যায়ে হতে পারে।
৩. প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ (Determination of growth rate) : পরিকল্পনার পরবর্তী কৌশল হলো পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ, এতে পরিকল্পনার আকার ও সময়সূচি উল্লেখ থাকে। সাধারণ পরিকল্পনা বাস্ত বায়নে সরকারের সমর্থন, জনগণের অংশগ্রহণ, প্রাপ্ত সম্পদের পর্যাপ্ততা পূর্ব থেকে অনেক সময় নির্ধারণ করা সম্ভব হয়
না। এক্ষেত্রে পরিকল্পনার প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করতে হয়।
৪. বিনিয়োগ নির্ধারণ : পরিকল্পনা প্রণয়নে প্রাথমিক পর্যায়ে পরিকল্পনার যে লক্ষ্যমাত্রা, উদ্দেশ্য প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছিল তা অর্জনের জন্য কি পরিমাণ সম্পদ বিনিয়োগের প্রয়োজন তা নির্ধারণ করেন। পরিকল্পনাবিদগণ কতকগুলো প্রবৃদ্ধির মডেল ব্যবহার করে বিনিয়োগের হার নির্ধারণ করেন। এক্ষেত্রে একটি জনপ্রিয় মডেল হচ্ছে Harrod
Domar Model যা ভারতের পরিকল্পনা কমিশন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকে।
৫. মূলধন-আয় অনুপাত ঃ একটি নির্দিষ্ট সময়ে এক একক আয় বৃদ্ধির জন্য কতটুকু মূলধন বিনেয়োগ করতে হবে তার সম্পর্কই মূলধন আয়-অনুপাত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মূলধন আয় অনুপাত ৫:১ হয়। তাহলে বুঝতে হবে একক আয় বৃদ্ধির জন্য ৫ একক মূলধন বিনিয়োগ করতে হবে।
৬. পরিকল্পনার সামঞ্জস্যবিধান : অর্থনৈতিক সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন খাতের মধ্যে সামঞ্জস্যাবিধান করা পরিকল্পনার অন্যতম পদ্ধতি। এর উপর পরিকল্পনার সুষ্ঠু ও সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করে। পরিকল্পনাতে তিন ধরনের সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করা হয় । যথা : (ক) দুই প্রান্তের ভারসাম্য খ পশ্চাৎ প্রান্তের ভারসাম্য ও (গ) অর্থনৈতিক বা
আর্থিক ভারসাম্য।
৭. পরিকল্পনার সময়সীমা ঃ প্রত্যেকটি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ভিত্তিতে পরিকল্পনাকালীন সময় নির্ধারণ করা
হয়। সময়ের ভিত্তিতে পরিকল্পনা কে M.L.Seth নিম্নোক্ত নামকরণ করেছেন :
(ক) বার্ষিক পরিকল্পনা ঃ মেয়াদ ১ বছর।
(খ) মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা ঃ মেয়াদ ৫ বছর ।
(গ) প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ঃ মেয়াদ ১৫-২০ বছর।
(ঘ) পরিকল্পনা ধারাবাহিকতা ঃ পরিকল্পনা একটি গতিশীল বা চলন প্রক্রিয়া হওয়ায় কার্যত পরিকল্পনা প্রণয়নকালে অতীত পরিকল্পনার সূত্র ধরে নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় । তাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কে বাস্তবায়িত ও ফলপ্রসূ করার জন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সেগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার দিকে লক্ষ্য করা হয়।
৮. ঘূর্ণায়মান পরিকল্পনা ঃ প্রতিবছর তিন ধরনের পরিকল্পনা করা উচিত। যেমন ঃ প্রথমত, এক বছরের জন্য,
দ্বিতীয়ত, কয়েক বছরের জন্য এবং তৃতীয়ত, ১৫ থেকে ২০ বছরের জন্য ।
৯. পরিপূরক পরিকল্পনা : সাধারণত অর্থনৈতিক সম্পদের অপর্যাপ্ততা এবং বেসরকারি খাতে সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষিতে
অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহে দুই ভাগে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। কত প্রয়োজনীয় অথবা মূল অংশ এবং খ. অনিশ্চিত বিষয়।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, উপর্যুক্ত পদ্ধতিসমূহ পরিকল্পনা প্রণয়নে ব্যবহার করা হয়। এগুলো পরিকল্পনা প্রণয়নের কৌশল হিসবেও বিবেচিত হয়। এসব পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগের উপর পরিকল্পনা প্রণয়নের সফলতা বহুলাংশে নির্ভর করে। পরিকল্পনার কৌশলের উপর ভিত্তি করে একে বাস্তকরণ করতে পারলে সফলতা অর্জন সম্ভব।