শিশুদের কল্যাণে জাতীয় শিশুনীতির গুরুত্ব বর্ণনা কর ।

উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ এদেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ শিশু। শিশুদের সার্বিক দিক উন্নয়নের জন্য জাতীয়
শিশুনীতি প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। শিশুনীতির বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়ে থাকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। পৃথিবীর সকল শিশুকে তাদের প্রাপ্ত অধিকার এবং প্রয়োজনীয় পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে জাতীয় শিশুনীতি প্রণয়ন করা হয়।
→ শিশুনীতির গুরুত্ব ঃ নিম্নে এদেশের শিশুদের কল্যাণে জাতীয় শিশুনীতির গুরুত্ব আলোচনা করা হলো –
১. শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঃ শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে শিশুনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে স্বাস্থ্যে, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাত কর্মসূচি শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শিশু স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেবা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে।
২. শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস ঃ শিশুনীতির আরেকটি উল্লেখ দিক হলো এর ফলে শিশুর মৃত্যুর হার কমেছে। ২০১০ সালে শিশুমৃত্যুর হার ছিল (প্রতি হাজারে জীবিত জন্মে এবং বয়স ১ বছরের কম) ৪১, যা পূর্বের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে।
৩. শিশু শিক্ষার হার বৃদ্ধি ঃ জাতীয় শিশুনীতির ফলে শিশুশিক্ষার হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কেননা শিশুনীতিতে শিশুর জন্য বাধ্যতামূলক অবৈতনিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার কর্মসূচির ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার ।
৪. শিশুশ্রম নিরসন ঃ দেশে শিশুশ্রম নিরসন করা অতি জরুরি। এ লক্ষ্যে দারিদ্র্য নিরসন কৌশল হিসেবে সরকার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুর পিতামাতাকে ঋণ প্রদান করে চলেছে। এ প্রকল্পটি শিশুনীতির আলোকে প্রণয়ন করা হয়। ফলে শিশুশ্রম অনেক হ্রাস পেয়েছে।
৫. শিশুর নিরাপত্তা ঃ শিশুর নিরাপত্তা বিধান শিশুনীতির ভূমিকা রয়েছে। এজন্য শিক্ষা শিশুর মৌলিক চাহিদা পূরণের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শিশুর জন্য মৌলিক শিক্ষা প্রকাশ পরিচালনা করা হয়।
৬. মানব সম্পদের বিকাশ ঃ শিশুনীতিতে শিশুর বিকাশের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর ফলে দেশের মানব সম্পদের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে। এক্ষেত্রে এতিমখানাগুলোকে ফান্ড দেয়া হয়।
৭. নারী ও শিশুর উন্নয়ন ৪ নারী ও শিশুর উন্নয়নের অংশ হিসেবে জাতীয় শিশুনীতিকে শিশুর স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় শিশু বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
৮. শিশুর বঞ্চনা ও নির্যাতন প্রতিরোধ ঃ শিশুর বঞ্চনা ও নির্যাতন বন্ধের জন্য শিশুনীতির ভূমিকা অত্যধিক। এজন্য
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
৯. কিশোর-কিশোরীর উন্নয়ন ঃ শিশুনীতিতে কিশোর-কিশোরীদের অধিকার ও উন্নয়নে দিক নির্দেশনা রয়েছে। এজন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, শিশুদের কল্যাণে শিশুনীতির গুরুত্ব অতি জরুরি। বিশেষ করে শিশুদের নানা সমস্যা সমাধান ও তাদের অধিকার আদায় ও উন্নয়নে এ নীতি পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করে।