জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির মূল লক্ষ্যসমূহ উল্লেখ কর।

উত্তর। ভূমিকা ঃ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি। স্বাস্থ্যসেবাকে প্রতিটি নাগরিকের
নাগালের মধ্যে নিয়ে যাওয়াই হলো এ নীতির মূল লক্ষ্য। এ নীতির গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো স্বাস্থ্যখাতে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে নীতিমালা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা।
→ জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির মূল লক্ষ্যসমূহ : জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির মূল লক্ষ্যসমূহ উল্লেখ করা হলো :
১. সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে সাংবিধানিক অনুচ্ছেদ ১৫ (ক) (অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা) অনুযায়ী চিকিৎসার মৌলিক উপকরণ পৌছে দেয়া এবং অনুচ্ছেদ ১৮ (১) অনুযায়ী জনগণের পুষ্টির উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করা।
২. জনসাধারণের বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের ও শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সহজলভ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার উপায় উদ্ভাবন করা।
৩. প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার মান গ্রহণ যোগ্যতা ও সহজলভ্য নিশ্চিত করা।
৪. জনসাধারণের মধ্যে বিশেষ করে শিশু ও মায়েদের অপুষ্টি হ্রাস করা এবং সকল শ্রেণির মানুষের পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য কার্যকর ও সমন্বিত কর্মসূচি প্রদান করা
৫. এদেশে বর্তমান শিশু ও মাতৃ-মৃত্যুর হার হ্রাস করে আগামী পাঁচ বছর এ হারকে একটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে উপনীত করার যথোপযুক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা।
৬. ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যন্ত মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সন্তোষজনক ব্যবস্থা ও
গ্রামে নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন সন্তান প্রসব সংক্রান্ত সুযোগ- সুবিধার ব্যবস্থা করা।
৭. প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সুযোগ- সুবিধা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন করা।
গ্রহণ এবং যতশীঘ্র সম্ভব প্রতিটি
৮. প্রতিটি উপজেলায় হেলথ কমপ্লেক্স এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য সহযোগী কর্মকর্তা/কর্মচারীর উপস্থিত ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্রের সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা।
৯. জনসাধারণ যাতে সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারে তার উপায় উদ্ভাবন ও বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতালসমূহের ব্যবস্থাপনা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও প্রাপ্ত সেবার মান সন্তোষজনক হয়।
১০. মেডিক্যাল কলেজ ও প্রাইভেট ক্লিনিকসমূহের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন এবং এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা সেবার মান সম্পর্কে যথাযথ আইন প্রণয়ন ও নিয়মনীতি প্রচলন করা ।
১১. আগামী ২০০৫ সালের মধ্যে রিপ্লেসমেন্ট লেভেল অব ফার্টিলিটি অর্জন করার লক্ষ্যে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে আরো জোরদার ও গতিশক্তি করা।
১২. অতি দরিদ্র ও অতি অল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য, সহজলভ্য ও কার্যকর করার পন্থা উদ্ভাবন করা।
১৩. মানসিক প্রতিবন্ধী ও শারীরিক বিকলাঙ্গদের সাথে সাথে বয়োবৃদ্ধদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবায় ব্যবস্থা করা।
১৪. পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে আরও দক্ষ মানব সম্পদ আয়োজনের মধ্য দিয়ে জবাবদিহিতামূলক
ও Cost-effective অর্থাৎ ব্যয় সাশ্রয়ী করার পন্থা নির্ধারণ করা।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, জাতীয় স্বাস্থ্যনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। এ নীতির মাধ্যমে সবার জন্য কার্যকর স্বাস্থ্য সেবা প্রদান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি- প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থাসমূহ সমন্বিত প্রয়াসের সুযোগ সৃষ্টি ও সহযোগিতা প্রদান করে থাকে।