সামাজিক নীতি মডেল আলোচনা কর।

উত্তর ৪ ভূমিকা : সামাজিক নীতি মডেলের সাথে সমাজকর্ম মডেলের সম্পর্ক বিদ্যমান। সমাজকর্ম অনুশীলন মডেল হলো সামাজিক নীতি মডেল বাস্তবায়নের জন্য একটি ব্যবহারিক রূপ আনয়ন এবং সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা হয়। তবে সমাজকর্ম অনুশীলন মডেল পেশাগত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রণীত, গৃহীত ও পেশাদার সামাজকর্মী কর্তৃক প্রদত্ত সেবামুলক কর্মসূচি দ্বারা বাস্তবায়িত হয়ে থাকে।
→ সামাজিক নীতি মডেল আলোচনা করা হলো ঃ
১. এলিট মডেল : সমাজে যারা এলিট তারা ক্ষমতাধর এবং বিভিন্ন বিষয়ে অবহিত থাকেন। তাই নীতি তৈরির সময় তাদের মতামত গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা অত্যধিক। এছাড়া এলিটদের এ বিশ্বাস আছে। যে, বিষয়টি তাদের জন্য মঙ্গলজনক সেটি দেশের জন্যও মঙ্গলজনক। তাই তাদের সুবিধা ও স্বার্থই নীতি গ্রহণ অগ্রাধিকার চেয়ে থাকে।
২. প্রাতিষ্ঠানিক মডেল : নীতি প্রণয়নে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। কেন্দ্রীয় সরকারের আইন প্রণয়নে তারা হলেন নীতি তৈরির কর্তৃপক্ষ। তাই দেশের প্রয়োজনে তাদের মতামতের ভিত্তিতে নীতি প্রণীত হয়। থমাস ডাই এ নীতির ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের কথা বলেছেন যেমন-
(ক) জনগণের জন্য সকলের কল্যাণ নিশ্চিত হয়।
(খ) সরকারই নীতি প্রয়োগকারী ।
(গ) জনগণের জন্য নীতি গ্রহণের ক্ষমতা।
(ঘ) জনগণের জন্য নীতি গ্রহণের ক্ষমতা একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠানের।
৩. স্বার্থকেন্দ্রিক দল মডেল ঃ নীতি তৈরির সময় সরকারি প্রতিষ্ঠানকে স্বার্থকেন্দ্রিক দলের স্বাধীনতার দিকটি দেখতে হয়। আর এরূপ স্বাধীনতার মধ্যে নীতি তৈরি বা গ্রহণ হয় সরকার ও স্বার্থ কেন্দ্রিক দলের মধ্যকার ক্ষমতার পারস্পরিক ভারসাম্যতায় নীতি প্রণীত হলে তা হয় আদর্শ নীতি।
৪. যুক্তিবাদী অভিনেতা মডেল ঃ যৌক্তিক সমস্যা সমাধানের ওপর ভিত্তি করে যুক্তিবাদী অভিনেতা মডেল অনুসরণ হয় যৌক্তিক নীতি প্রক্রিয়া ৫টি ধারাবাহিক তৎপরতায় নির্ধারিত হয়। যেমন-
(ক) সমস্যা নির্বাচন
(খ) লক্ষ্য ব্যাখ্যাকরণ ও ক্রমবিন্যাস
(গ) লক্ষ্য অর্জনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় সংগ্রহ
(ঘ) প্রত্যেক জটিলতা নির্ধারণ
(ঙ) সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বিকল্প নির্বাচন।
৫. প্রশাসনিক অভিনেতা মডেল ঃ প্রশাসনিক অভিনেতা মডেল নীতি প্রণয়নের একটি আদর্শ মডেল। প্রশাসনিক অভিনেতাদের মতামতের ভিত্তিতে নীতি প্রণীত হলে তা বাস্তবায়নযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য হয়। এ ধরনের মডেলের সুবিধা হলো দ্রুত সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায় এ মডেলের অসুবিধা হলো রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা থাকে।
৬. দরকষাকষি ও সমঝোতা মডেল ঃ বিভিন্ন দল ও সংস্থার মধ্যকার দরকষাকষি ও সমঝোতার মাধ্যমে নীতি তৈরি হল এ মডেল বিশেষত্ব। বিভিন্ন দল সংস্থার মধ্যে স্বার্থ ও চাহিদাকে কেন্দ্র করে দরকষাকষির ভিত্তিতে নীতি প্রণীত হয়। দরকষাকষি ও সমঝোতার ভিত্তিতে আদর্শ কল্যাণধর্মী ও বাস্তবায়নযোগ্য নীতি প্রণীত হয়ে থাকে।
৭. ব্যবস্থা মডেল ঃ ব্যবস্থা মডেল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মডেল এ মডেল অনুযায়ী নীতি প্রক্রিয়াকে একটি সামগ্রিক ব্যবস্থা হিসেবে দেখা হয়। এখানে নীতি প্রণয়নের সময় আইন প্রণেতা প্রশাসনিক সংস্থা, রাজনৈতিক দল, স্বার্থকেন্দ্ৰিক দল নির্বাচিত নির্বাহী ও সাধারণ নাগরিক ভূমিকা রাখে।
৮. রাজনৈতিক অভিনেতা হিসেবে নিজের অন্তর্ভুক্তি : যারা রাজনৈতিক নেতা তারা দেশের সার্বিক পরিস্থতি ও জনগণের চাহিদা সম্পর্কে অবগত থাকেন। তাই তাদের চিন্তা, চেতনা ও বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে নীতি প্রণীত হলে তা কল্যাণধর্মী হয়ে থাকে।
৯. তৃণমূল গণতন্ত্র ঃ একজন প্রতিনিধি সকলের কথা পর্যাপ্তভাবে বলতে পারে না। তাই প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের পরিবর্তে তৃণমূল গণতন্ত্রের প্রেক্ষিতে সমষ্টি পর্যায়ে সকলের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে নীতি তৈরি করা যায় ।
১০. জ নসমষ্টি রাজনীতি মডেল ঃ রাজনীতি, সরকার সংস্থা ও সমষ্টির বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে সমষ্টি পর্যায়ে জোরালো আদর্শ নীতি তৈরি করা সম্ভব। এরূপ নীতিতে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। ফলে এ নীতি বাস্তবায়ন সহজ হয়।
১১. মূল্যবোধভিত্তিক নীতি ঃ যে নীতিতে জনগণের চিন্তা, চেতনা, রীতি-নীতি, আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে সে নীতি সকলের দ্বারা প্রশংসিত হয় এবং এ ধরনের নীতি বাস্তবায়নে সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে । গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ ও মূল্যবোধের অনুশীলন প্রত্যেক নাগরিকের ভূমিকা পালনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নীতি প্রণয়নে মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষা, প্রেরণা ও শক্তি যোগায় ।
১২. উত্তম সমাজ হিসেবে রাষ্ট্র : অনেকগুলো সমষ্টি নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত। রাষ্ট্র একটি উত্তম সমাজ। উত্তম সমাজ হিসেবে রাষ্ট্রের কল্যাণধর্মী নীতি প্রণয়নের জন্য দরকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা রাষ্ট্রনায়ক ও সরকারের দূরদর্শিতা রাজনৈতিক মতবাদ ।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, উপযুক্ত মডেলের ভিত্তিতে যদি নীতি প্রণীত হয় তাহলে তা বাস্তবায়নে হবে এবং জনগণের কল্যাণে ভূমিকা রাখবে। তবে নীতি প্রণয়নকালীন সময়ে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যা তা যেন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না আনে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখে এবং প্রচলিত রীতিনীতি, মূল্যবোধ ও চিন্তাচেতনার
পরিপন্থী না হয়। এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে যে-কোনো মডেলের ভিত্তিতে তা প্রণীত হলে জনগণের চাহিদা পূর্ণ হবে এবং নীতির প্রকৃত উদ্দেশ্য হাসিল হবে।