সামাজিক নীতি মডেলের ভিত্তিতে সেবাদান কি? সামাজিক নীতি প্রণয়নে সমাজকর্মীর ভূমিকা বর্ণনা কর ।

উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ “সামাজিক নীতি” নীতি প্রণয়নের বৃহত্তর ক্ষেত্রের একটি সুনির্দিষ্ট দিকমাত্র। একটি রাষ্ট্রের অনেক ধরনের নীতি থাকতে পারে। পররাষ্ট্র নীতি অর্থ-বাণিজ্য নীতি, রাজস্বনীতি, শিক্ষা নীতি প্রভৃতি। এগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে ক্রিয়াশীল। এসব নীতির মাঝে যেসব নীতি সামাজিক সমস্যা ও গণমানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার সাথে সংশ্লিষ্ট সেগুলো সামাজিক নীতি।
→ সামাজিক নীতি মডেলের ভিত্তিতে সেবাদান ঃ সামাজিক নীতি মডেলের ভিত্তিতে সেবাদানকে মনীষী তিনভাগে
ভাগ করেছেন। নিচে তা তুলে ধরা হলো ঃ
১. প্রতিকারমূলক উদ্বৃত্ত সেবা ঃ প্রতিকারমূলক সেবাদান বলতে বুঝায় কোনো দুর্ঘটনার কারণে যে সেবা ব্যবস্থা প্রদান করা হয়ে থাকে। যেমন-দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ওষুধ, খাদ্য বিতরণ ইত্যাদি। এখানে মানবিক দিকটি বেশি প্রাধান্য হয়ে থাকে।
২. প্রতিরোধমূলক উদ্বৃত্ত সেবা : ভবিষ্যতের উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে প্রতিরোধমূলক সেবাদান ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। যেমন-শিশুদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে টিকাদান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
৩. পুনর্বাসনমূলক উদ্বৃত্ত সেবা ঃ প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কর্মসূচির পর রয়েছে পুনর্বাসনমূলক উদ্বৃত্ত সেবা। পুনর্বাসনমূলক সেবা দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী সমস্যা সমাধানের জন্য প্রদান করা হয়ে থাকে। যেমন শারীরিক প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন, বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন, নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসন, মাদাকাসক্তদের পুনর্বাসন ইত্যাদি ।
→ সামাজিক নীতি প্রণয়নে সমাজকর্মীর ভূমিকাঃ সামাজিক নীতি প্রণয়নে সমাজকর্মীর ভূমিকা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. সামাজিক নীতির জন্য অনুভূত চাহিদা চিহ্নিতকরণে সমাজকর্মী : সামাজিক নীতির যাত্রা শুরু হয় সামাজিক কোনো সমস্যা সমাধানের বা কোনো অনুভূত চাহিদাকে কেন্দ্র করে। অর্থাৎ কোনো ক্ষেত্রে নীতি প্রণয়ন প্রয়োজন তা নির্ধারণের মাধ্যমে সামাজিক নীতি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়। এক্ষেত্রে জনগণের অনুভূত চাহিদার ভিত্তিতে সামাজিক নীতি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা চিহ্নিত করা হয়। একজন সমাজকর্মী সামাজিক পরিমণ্ডলে কাজ করতে গিয়ে জনগণের অনুভূত প্রয়োজন। চাহিদা চিহ্নিতকরণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। বিভিন্ন ব্যক্তির প্রয়োজন ও চাহিদা বিভিন্ন রকমের । তাই বলে প্রত্যেকের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে সামাজিক নীতির ক্ষেত্র স্থির করা সম্ভব নয়।
২. উপাত্ত সংগ্রহ ঃ সমাজকর্মী নীতি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকেন। যথার্থ উপাত্ত ব্যতীত নীতির কার্যকারিতা থাকে না। সামজকর্মী সংগৃহীত উপাত্ত যাচাইবাছাই কারে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।
৩. উপাত্ত বিশ্লেষণ করা ঃ সমাজকর্মী সংগৃহীত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে থাকেন। সমাজকর্মী নীতি সম্পর্কে জনগণের
মতামত যাচাই করে থাকেন।
৪. খসড়া নীতি তৈরি করা ঃ খসড়া নীতি তৈরিতে সমাজকর্মী ভূমিকা রাখে। চূড়ান্ত নীতি প্রণয়নের পূর্বে খসড়া নীতি তৈরি করা হয় । নীতি প্রণয়নে যে সকল তথ্যের প্রয়োজন হয়। তা সমাজকর্মী সংগ্রহ করে থাকেন।
৫. চূড়ান্ত নীতি প্রণয়ন ঃ সমাজকর্মী নীতি প্রণয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে থাকেন। চূড়ান্ত নীতি যথাযথ কর্তৃপক্ষ প্রণয়নের পূর্বে সমাজকর্মী নীতিকে বাস্তবসম্মত করে তোলেন। নীতিকে অনুমোদনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়। খসড়া নীতি প্রণয়ন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত নীতি প্রণয়নের প্রতিটি পর্যায়েই সমাজকর্মীরা তথ্য সংগ্রহ বিশ্লেষণ নীতির সম্ভাব্যতা ও প্রয়োগ উপযোগিতা বিশ্লেষণের মাধ্যমে নীতিকে বাস্তব উপযোগী এবং কার্যকর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, একজন স মাজকর্মী একাধারে একজন সংগঠক, জনমত গঠনকারী একজন বিশেষজ্ঞ এবং একজন গবেষক। অর্জিত জনগণ ও দক্ষতার মাধ্যমে একজন সমাজকর্মী অনুভূত প্রয়োজন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত নীতি প্রণয়ন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরের কার্যকর ভূমিকা রাখার মাধ্যমে নীতিকে বাস্তব ও সময় উপযোগী করে তুলতে পারেন ।