অথবা, তথ্য সংগ্রহ কাকে বলে? প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কী কী কৌশল অনুসরণ করা হয়? আলোচনা কর।
অথবা, তথ্য সংগ্রহ কী? প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কী কী অ্যাপ্রোচ অনুসরণ করা হয়? আলোচনা কর।
অথবা, তথ্য সংগ্রহের সংজ্ঞা দাও? প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কি কি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়? আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : আধুনিক বিশ্ব তথ্যবহুল। যার কাছে যত তথ্য বেশি তার শক্তি তত বেশি। তথ্য সংগ্রহ পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যের উপর পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করেই বিভিন্ন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারা যায়। তাই বলা যায়, পরিসংখ্যান পদ্ধতিসমূহ প্রয়োগের ক্ষেত্র তথ্য। তথ্য বা উপাত্ত ব্যতীত পরিসংখ্যান শাস্ত্র অর্থহীন। পরিসংখ্যানের দৃষ্টিকোণ থেকে তথ্য বলা হয় “পরিসাংখ্যিক গবেষণার কাঁচামালই তথ্যমালা।” সুতরাং সুনির্দিষ্ট উপায়ে তথ্য সংগ্রহ করা অতীব জরুরি।
তথ্য সংগ্ৰহ : তথ্যবিশ্ব সম্পর্কে অবগত হওয়া এবং সংগৃহীত তথ্য কার্যকরীভাবে ব্যবহারযোগ্য করাই হল পরিসংখ্যানের উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তথ্যবিশ্বের প্রতিটি একক সম্পর্কে পৃথক পৃথকভাবে যে সংখ্যাত্মক খবরাদি নেওয়া হয় তাকে তথ্য বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে, তথ্য হল তথ্যবিশ্বের প্রতিটি এককের পরিবর্তনশীল বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত তথ্যাদি। এ তথ্যাদি যখন সংখ্যাত্মক আকারে প্রকাশ করা হয় এবং যথাযথভাবে গণনাযোগ্য করা হয় তাই তথ্য। যেমন- কোন শিল্পকারখানায় এক হাজার জন শ্রমিক রয়েছে। তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন স্কেলে বেতন প্রদান করা হয়। এখন কেউ যদি শ্রমিকদের আয় সম্পর্কে জানতে চায় তবে তাকে শ্রমিকদের সকলের বা কিছু অংশের মাসিক আয় সম্পর্কে জানতে হবে।
এখানে এক হাজার জন শ্রমিকের পৃথক পৃথক আয় সংক্রান্ত বিষয় হল তথ্য
প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি : তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত পরিমাপের একক, তথ্যের নির্ভুলতা, তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতি ও প্রশ্নপত্রের উৎকর্ষতা ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাতটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। নিম্নে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হল :
১. সরাসরি ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ : এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে গবেষক ব্যক্তিগতভাবে তথ্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত থাকেন। এ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানকারী বাস্তব ক্ষেত্রে গিয়ে উত্তরদাতার সাথে সাক্ষাৎ করে বা পর্যবেক্ষণ করে তথ্য সংগ্রহ করেন। এভাবে সংগৃহীত তথ্য যথার্থ হয়। তবে এ পদ্ধতিতে সময় ও অর্থ খরচ বেশি লাগে।
২. পরোক্ষ অনুসন্ধান : এ পদ্ধতি একটু ভিন্ন ধরনের। যেসব জটিল ক্ষেত্রে উত্তরদাতা তথ্য সংগ্রহকারীকে তথ্য সরবরাহ করতে চান না বা ইতস্তত করেন অথবা সঠিক উত্তর দিবেন না বলে মনে হয়, সেক্ষেত্রে পরোক্ষ অনুসন্ধান পদ্ধতি কার্যকর করা হয় । এখানে তথ্য অনুসন্ধানকারী তৃতীয় ব্যক্তির ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে ঘটনার সাথে জড়িত বা তথ্য সম্বন্ধে
সঠিকভাবে অবগত আছে এমন বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ পরিচিত কোন ব্যক্তির নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কোন কোন উত্তরদাতা ব্যক্তিগত দুর্বলতা বা রেষারেষির দরুন অনেক সময় ভুল তথ্য দিয়ে থাকেন। তাই তার জবাবের যথার্থতা যাচাইয়ের জন্য প্রত্যক্ষ প্রমাণ দরকার হয়।
৩. গণনাকারীর মাধ্যমে অনুসন্ধান : এ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনুসন্ধানকারীকে তথ্য সংগ্রহের কাজে লাগানো হয়। এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহকারী প্রয়োজনীয় তথ্যের একটি প্রশ্নমালা নিয়ে উত্তরদাতার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে উত্তর লিপিবদ্ধ করেন। ব্যাপক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করতে অনেক সময় লাগে এবং প
্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। প্রশ্নের জটিলতা বিশদভাবে বিশ্লেষণ করে উত্তরদাতাকে বোধগম্য করতে না পারলে উত্তরদাতা অনেক সময় তথ্য দিতে চায় না। তাই প্রশ্নপত্র সহজবোধ্য, সাবলীল ও বাস্তবমুখী হতে হবে।
৪. স্থানীয় উৎস : এ পদ্ধতিতে সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন থানায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রতিনিধি নিয়োগ করেন। তাঁরা সর্বদা সেখানে অবস্থান করেন। আর এ কারণে সে এলাকা সম্পর্কে গবেষণাকারীর মোটামুটি ধারণা সৃষ্টি হয়। এ ধারণার উপর ভিত্তি করে মাঝে মাঝে সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তারা প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেন এবং প্রতিষ্ঠানের নিকট পাঠিয়ে দেন। তাঁরা বিভিন্ন স্থানে সংবাদদাতা নিয়োগ করেন। যেমন- শস্যের উৎপাদন, বন্যা পরিস্থিতি, অগ্নি, ঝড়
ইত্যাদি এ পদ্ধতির মাধ্যমে করা হয়।
৫. ডাকযোগে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে গবেষণার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে তার উপর একটি সহজবোধ্য প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয় এবং উক্ত প্রশ্নপত্র ডাকযোগে উত্তরদাতার নিকট প্রেরণ করা হয়। উত্তরদাতা প্রশ্নপত্রটি যথাযথভাবে পূরণ করে ফেরত পাঠান। এ পদ্ধতিতে সময় কম লাগে কিন্তু প্রশ্ন বুঝতে না পেরে মাঝে মাঝে ভুল উত্তর দিয়ে থাকেন। আবার কেহ কেহ উত্তরপত্র ফেরত পাঠান না বা অসম্পন্ন উত্তর দেন। সাধারণত কোন বিষয় সম্পর্কে মতামত যাচাই ও
জাতীয় বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।৬. তথ্য সংগ্রহকারীর সরাসরি পর্যবেক্ষণ : এ পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও যথার্থ। এ পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণকারী গবেষণার প্রশ্নপত্র নিয়ে সরাসরি উত্তরদাতার নিকটে গমন করেন এবং সঠিক তথ্য সংগ্রহ করেন। এখানে তৃতীয় কোন
। মাধ্যম ধরতে হয় না। এখানে ব্যক্তিগত বুদ্ধি, বিবেক, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়। তবে ঈখানে ব্যক্তিগত দুর্বলতা, পক্ষপাতিত্ব, ভুল তথ্য পরিবেশন প্রভৃতির সুযোগ থাকে।
৭. টেলিফোন সাক্ষাৎকার : এ পদ্ধতি অতি অল্প সময়ে ও প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে অনুসরণ করা হয়। কারণ জরুরি ভিত্তিতে স্বল্প পরিসরে এবং স্বল্প সময়ে তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। উত্তরদাতার থেকে নিজস্ব বুদ্ধি বিবেচনা প্রয়োগ করে তথ্য বের করে নিতে হয়। তবে তথ্য সংগ্রহকারীর কথাবার্তা মার্জিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এ
পদ্ধতিতে অনুন্নত দেশসমূহে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কারণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিফোন নাও থাকতে পারে। আবার উত্তরদাতা টেলিফোনে সব তথ্য প্রদান নাও করতে পারে, যেমনটা তার উপস্থিতিতে করতে পারে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পরিসংখ্যানে তথ্য সংগ্রহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ তথ্য ব্যতীত পরিসংখ্যানের কার্যাবলি সম্ভব নয়। এ তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দু’টি প্রক্রিয়া বিদ্যমান। আবার প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয় নানাবিধ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিগুলোর যথার্থ সমন্বয় দরকার।