ডকুমেন্ট স্টাডি (Document study) বলতে কি বুঝ?

অথবা, সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে নমুনায়নের ভূমিকা বা উপযোগিতা আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে নমুনায়নের গুরুত্ব আলোচনা কর ।
অথবা, সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে নমুনায়নের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক গবেষণায় গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্র অনেক বেশি ব্যাপক ও বিস্তৃত। তাই সমগ্রক হতে তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা করতে গেলে গবেষণার উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে। সেজন্য সমগ্রকের প্রতিনিধিত্বশীল কোন অংশ নির্বাচন করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সমগ্রকের এ প্রতিনিধিত্বশীল অংশকে নমুনায়ন বলে।
সামাজিক গবেষণায় নমুনায়নের উপযোগিতা বা গুরুত্ব : সামাজিক গবেষণার নমুনায়নের
উপযোগিতাসমূহ নিম্নরূপঃ
১. মিতব্যয়ী পদ্ধতি : সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে নমুনায়নের অন্যতম উপযোগিতা হল এটি একটি মিতব্যয়ী পদ্ধতি । অর্থাৎ নমুনায়নের মাধ্যমে কম ব্যয় হয়। নমুনায়নের মাধ্যমে সমগ্রক থেকে শুধুমাত্র একটি নমুনা সংগ্রহ করে উপস্থাপন করা হয়। সমগ্রক উপস্থাপনে সমগ্র তথ্যই উপস্থাপনের প্রয়োজন হয়, যা অনেক ব্যয়বহুল। নমুনায়ন নিঃসন্দেহে মিতব্য পদ্ধতির অন্যতম।
২. স্বল্প সময় : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় সমগ্রক থেকে একটি নমুনা বাছাই করা হয়। একটি নমুনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ সহজ এবং স্বল্প সময়সাপেক্ষ। গবেষণার জন্য নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় খুব কম সময়ের প্রয়োজন হয়। মান্নান ও মেরী বলেছেন, নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট একটি অংশের উপর জরিপ চালানো হয় বিধায় খুব সহজে এবং কম সময়ে তথ্য সংগৃহীত হয়। কাজেই সময়ের বিবেচনাতেও শুমারির চেয়ে নমুনায়ন পদ্ধতি অধিকতর
সুবিধাজনক পদ্ধতি।”
৩. দ্রুত ফলাফল লাভ : নমুনায়ন পদ্ধতিতে বেশি তথ্যের প্রয়োজন হয় না। স্বল্প বিষয়ে গবেষণা করতে স্বল্প সময় ব্যয় হয় এবং ফলাফল দ্রুত প্রকাশ করা যায়। দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করলে অপরাপর গবেষণার কাজে গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। এ প্রসঙ্গে মান্নান ও মেরী বলেছেন, “এমন অনেক গবেষণা আছে যেগুলোতে দ্রুত এবং জরুরি ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হয়। শুমারি একটি বিস্তৃত পদ্ধতি বলে এর মাধ্যমে জরুরি অবস্থার প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ সম্ভব হয়
না। কাজেই জরুরি ভিত্তিতে দ্রুত তথ্য সংগ্রহের জন্য নমুনায়নকে বেছে নেওয়া হয়।”
৪. কম শ্রমসাপেক্ষ : নমুনায়ন পদ্ধতিতে বেশি শ্রমের প্রয়োজন হয় না। এখানে কম সময়ে কার্য সমাধা করা যায়, যার ফলে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। মান্নান ও মেরী বলেছেন, “শুমারি জরিপের মাধ্যমে বিস্তৃত পরিধির সমগ্রকের সম্পূর্ণ অংশ হতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ফলে এ পদ্ধতিতে অতিরিক্ত পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় এবং অনেক সময় শ্রমের
অপচয়ও ঘটে। কিন্তু নমুনা জরিপে তুলনামূলকভাবে অনেক কম পরিশ্রমে সমগ্রকের নির্দিষ্ট একটি অংশ হতে অতি সহজেই তথ্য সংগ্রহ করা যায়।”
৫. অধিক নির্ভরশীল তথ্য : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত তথ্য থেকেই তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। তাই সংগৃহীত তথ্যে ভুলভ্রান্তি কম থাকে। সংগৃহীত তথ্য থেকেই নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তাই নমুনায়ন প্রক্রিয়া অধিক নির্ভরশীল তথ্য পরিবেশন করতে পারে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় সমগ্রকের প্রতিনিধি বাছাই করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় তথ্য বিশ্লেষণ সহজ, মিতব্যয়ী, প্রাঞ্জল ও কম শ্রমসাপেক্ষ। তাছাড়া এর মাধ্যমে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। নমুনায়নের কিছু অসুবিধা থাকলেও এর সুবিধা বেশি। বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশে নমুনায়ন পদ্ধতি সবচেয়ে
গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে।