অথবা, সামাজিক কার্যক্রমের মনদণ্ড আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক কার্যক্রমের বিষয়বস্তু বর্ণনা কর।
অথবা, সামাজিক কার্যক্রমের প্রকৃতি আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা : সামাজিক কার্যক্রমের কতিপয় উপাদান রয়েছে। এসব উপাদানের সমন্বয়ে সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবে রূপদান করে। উপাদানগুলো একটি অপরটির সাথে যোগসূত্র স্থাপন করে আছে।
সামাজিক কার্যক্রমের উপাদান : মনীষী খিনডুকা ও কফলিন (Khinduka & Coughlin) সামাজিক কার্যক্রমের ৩টি উপাদানের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো :
১. সমাজকর্মীর সামাজিক নীতি প্রভাবিতকরণ সংশ্লিষ্টতা;
২. সামাজিক কার্যক্রম প্রক্রিয়ার স্তর নির্ধারণ এবং
৩. সামাজিক কার্যক্রমের দলীয় প্রক্রিয়া অনুধাবন।
নাথান ই কোহেন সামাজিক কার্যক্রমের ৪টি উপাদানকে চিহ্নিত করেছেন। যথা :
১. গবেষণা, ২. পরিকল্পনা, ৩. জনসমর্থন সংশ্লিষ্টকরণ এবং ৪. কর্তৃপক্ষের নিকট বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব উত্থাপন।
সমাজবিজ্ঞানী ফ্রিল্যান্ডার (W. A. Friedlander) সামাজিক কার্যক্রমের কয়েকটি উপাদানের কথা উল্লেখ
করেছেন। যেমন- ১. দলীয় কার্যক্রম, ২. সম্মিলিত আন্দোলন, ৩. সামাজিক পরিবর্তন, ৪. আইনের সাথে সামঞ্জস্যশীল ও
৫. পেশাদার সমাজকর্মী।
এসব উপাদানসমূহ নিম্নে বর্ণনা করা হলো :
১. জনগণের মধ্যে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি : সামাজিক কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ব্যক্তি ও দলের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য উৎসাহ সৃষ্টি করা। সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরির জন্য জনগণের মধ্যে এ ব্যাপারে স্বতঃস্ফূর্ততা আসে।
২. মানব সম্পদের উন্নয়ন : মানব সম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে সম্পদের উন্নয়ন ঘটানো সামাজিক কার্যক্রমের একটি অন্যতম উপাদান। এজন্য নেতৃত্ব তৈরি এবং তাদের মধ্যে সচেতনতা অপরিহার্য। এক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি অতি জরুরি।
৩. জনগণের অনীহা দূর করা : সামাজিক কার্যক্রমের পথে অনীহা একটি মারাত্মক বাধা। এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। অনীহা দূর করে জনগণের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করা যায়। এজন্যই জনগণের অনীহা দূর করা সামাজিক কার্যক্রমের উপাদান হিসেবে বিবেচিত।
৪. ঐকমত্যের আন্দোলন : সামাজিক কার্যক্রম ঐকমত্যের ভিত্তিতে গড়ে উঠলে এর নেতিবাচক দিক দুর্বল হয়ে পড়ে। এজন্য এক্ষেত্রে সমন্বিত আন্দোলনের প্রয়োজন হয়। এ প্রসঙ্গে সমাজকর্ম বিশ্বকোয়ে বলা হয়েছে, যৌথ ও সমন্বিত আন্দোলন সাধারণত অভিন্ন লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে।
৫. জন অংশায়ন : জনগণের অংশগ্রহণ সামাজিক কার্যক্রমের একটি স্বীকৃতি বিষয়। কেননা সামাজিক কার্যক্রম ও জন অংশায়ন ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। সামাজিক কার্যক্রমকে সফল করার জন্য জনগণের ছোঁয়া লাগবেই। অর্থাৎ এ ব্যাপারে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন অত্যাবশ্যক।
৬. ইতিবাচক মানসিকতা সৃষ্টি : ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সামাজিক কার্যক্রমকে বেগবান করে তোলে। জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিতে নেতিবাচক কুসংস্কারে আচ্ছন্ন থাকলে সামাজিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। তাই সনাতন স্থবির দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সামাজিক কার্যক্রমের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
৭. নিয়মতান্ত্রিক আইন: সামাজিক কার্যক্রম প্রত্যাশিত আইনের উপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী আইন কাঠামোর পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। আইন ছাড়া সামাজিক কার্যক্রমকে বাস্তবে রূপদান সম্ভব নয়।
৮. গবেষণা : গবেষণা সামাজিক কার্যক্রমের একটি অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচিত। এর মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যানুসন্ধান করা যায়। তথ্যানুসন্ধানের ফলে সমস্যা সমাধানে পরিকল্পনা গ্রহণ করা সহজ হয়। কর্মসূচি নির্ধারণ ও এর বাস্তবায়নের জন্য অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে সামাজিক কার্যক্রম।
৯. জনসমর্থন আদায় : সামাজিক কার্যক্রমের একটি তাৎপর্যপূর্ণ উপাদান হলো জনসমর্থন আদ
ায় বা তালিকাভুক্তকরণ। সমাজের যে কোন অবাঞ্ছিত বা ক্ষতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামাজিক জনসমর্থন আদায় করে থাকে। জনসমর্থন আদায়ের মাধ্যমে কার্যক্রম সামাজিক কার্যক্রম তার লক্ষ্যে পৌঁছে থাকে।
১০. সমাধান পরিকল্পনা : সামাজিক কার্যক্রম গবেষণার মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যাবলির ভিত্তিতে সমাধান পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে। এ উপাদানের মাধ্যমে সামাজিক কার্যক্রম সামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালায়।
১১. সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা উপস্থাপন : সামাজিক কার্যক্রম সমাজে বিরাজমান সমস্যাকে চিহ্নিত করে এর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তৈরি করে । চিহ্নিত সমস্যার প্রস্তাবনার উপর ভিত্তি করে সমস্যা সমাধান বা এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
১২. কার্যকরীকরণ : সামাজিক কার্যক্রমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো কার্যকরীকরণ। সামাজিক সমস্যা সমাধান বা মোকাবিলায় যত উপাদানই থাকুক না কেন প্রস্তাবনার কার্যকরীকরণ ব্যতীত সামাজিক কার্যক্রম ফলপ্রসূ হবে না। তাই সামাজিক কার্যক্রম পদ্ধতির সফল অনুশীলনে কার্যকরীকরণ উপাদানের উপস্থিতি অতি জরুরি।
১৩. সমাজকর্মীয় সংশ্লিষ্টতা : সামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় সমাজকর্মীর মাধ্যমে। মূলত সমাজকর্মের দর্শন এর মধ্যে নিহিত থাকে। ফলে এর সাথে সমাজকর্মীর সংশ্লিষ্টতা থাকে। সামাজিক কার্যক্রমের কর্মসূচি পরিচালনা করতে সমাজকর্মীর উপস্থিতি অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে, মূলত: সামাজিক কার্যক্রম হচ্ছে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা; যা কতিপয় উপাদানের মাধ্যমে সমাজে বিরাজমান সমস্যাকে চিহ্নিত করে সমাধানের প্রচেষ্টা চালায়। এক্ষেত্রে সামাজিক কার্যক্রম পদ্ধতি সফল অনুশীলনে এসব উপাদানের উপস্থিতি অতি জরুরি।