সামাজিক কার্যক্রম পদ্ধতির ঐতিহাসিক পটভূমি আলোচনা কর ।

অথবা, সামাজিক কার্যক্রম পদ্ধতির উদ্ভব সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক কার্যক্রম পদ্ধতির বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক কার্যক্রম পদ্ধতির উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক কার্যক্রম সমাজকর্মের একটি সহায়ক পদ্ধতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এর পরিপূর্ণ ব্যবহার সাম্প্রতিক হলেও এটি মানব ইতিহাসের মতোই সুপ্রাচীন।
সামাজিক কার্যক্রম পদ্ধতির ঐতিহাসিক পটভূমি : সামাজিক কার্যক্রমের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে রোম সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে নিম্নশ্রেণি কর্তৃক প্রতিরোধ আন্দোলনের শুরু হয়েছিল। যা পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা হিসেবে দেখা দিয়েছিল। রুশ বিপ্লব, ফান্স বিপ্লব, আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভারতীয় উপমহাদেশে ফকির বিদ্রোহ, কৃষক বিদ্রোহ, অসহযোগ আন্দোলন, নীলকরদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, স্বদেশী আন্দোলন প্রভৃতি সামাজিক কার্যক্রমেরই ফলশ্রুতি। এসব বিদ্রোহ বা আন্দোলনে পেশাগত দর্শনের উপস্থাপনা থাকলেও এগুলো ছিল সুসংগঠিত এবং বিরোধীদের প্রতিরোধের জন্য সংঘটিত হয়েছিল। ঊনিশ শতকের শেষার্ধে দরিদ্রদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় যে আন্দোলন (Settlement
House Movement) শুরু হয়েছিল তার পেছনে পেশাগত পদক্ষেপ সূচিত হয়েছিল। এছাড়া এসব দেশে দাস সংগঠন সমিতি সামাজিক কার্যক্রমের রূপ পরিগ্রহ করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব আন্দোলনের মাধ্যমে নির্যাতন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনগণের যৌথ প্রতিরোধ সূচিত হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশে যেসব সামাজিক আন্দোলন মানুষকে সচেতন ও অধিকার আদায়ে উদ্বুদ্ধ করেছিল তার মধে উল্লেখযোগ্য হলো নারী জাগরণ আন্দোলন, সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ, বিধবা বিবাহ প্রচলন, কৃষক আন্দোলন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ব্রিটিশ শাসকদের গড়া দুর্ভিক্ষ, ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা, ভূমি স্বত্ব ব্যবস্থা প্রভৃতি আন্দোলনের মাধ্যমেই স্তিমিত হয়েছিল। ভারতের মুম্বাইতে ১৯৩০ সালে শুরু হয় সেটেলমেন্ট আন্দোলন। উপমহাদেশে পেশাদার সমাজকর্মের
উদ্ভব ও বিকাশ সূচিত হয় ১৯৩৬ সালে টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্স (TISS) প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। এর মাধ্যমে সামাজিক কার্যক্রম সমাজকর্মের অন্যতম পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৫১ সালে আর্নেস্ট হলিস এবং এ্যালিক টেলর সমাজকর্মের শিক্ষা কার্যক্রমে সামাজিক কার্যক্রমের ওপর অধিব
গুরুত্ব প্রদান করে। পরিকল্পিত পরিবর্তনের কৌশল হিসেবে সমাজকর্ম অনুশীলনে সামাজিক কার্যক্রম প্রয়োগ করা হয়
একে সামাজিক পর্যায়ে সমাজকর্ম অনুশীলনের কৌশল হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
উপসংহার : সামাজিক কার্যক্রম বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বহুদেশে সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতি হিসেে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সমাজকর্ম দর্শন, জ্ঞান ও কৌশলের আওতায় একে অনুশীলন করা হচ্ছে।