অথবা, সমাজকল্যাণ প্রশাসনের নীতিমালা বর্ণনা কর।
অথবা, সমাজকল্যাণ প্রশাসনের মূলনীতি বর্ণনা কর।
অথরা, সমাজকল্যাণ প্রশাসনের অ্যাপ্রোচ বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : নীতি হচ্ছে একটি বিবৃতি। সমাজকল্যাণ প্রশাসনের নীতিমালা প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলির মান উন্নয়নে বিশেষভাবে সহায়তা করে। সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে সমাজকল্যাণ নীতিমালা বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনশীল হয়। এরূপ পরিবর্তন ও বিভিন্নতাকে স্বীকার করে নিয়ে সমাজকল্যাণ প্রশাসনের কতকগুলো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব নীতিগুলো সমাজকর্মের দর্শন, মূল্যবোধ এবং জ্ঞানের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে।
সমাজকল্যাণ প্রশাসনের নীতি : নিম্নে সমাজকল্যাণ প্রশাসনের প্রধান প্রধান নীতিসমূহ আলোচনা করা হল :
১. সেবাগ্রহীতাদের মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি : সমাজকল্যাণ প্রশাসন বিশ্বাস করে যে, বিভিন্ন এজেন্সির পরিচালনাধীন কর্মসূচির সেবাগ্রহীতাদের নিজস্ব মূল্য ও মর্যাদা রয়েছে। এ জন্য তাদের মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি প্রদান করা সমাজকল্যাণ প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি।
২. সকলের জন্য সমান সুযোগ দান : সকলের সমান সুযোগ প্রদান করা সমাজকর্মের একটি অন্যতম প্রধান নীতি। সমাজকল্যাণ প্রশাসনও এই নীতি অনুসরণ করে এজেন্সি ও কর্মসূচির আওতাধীন সকল মানুষের সমান সুযোগ প্রদানে বিশ্বাসী।
৩. সকলের অংশগ্রহণ নীতি : সেবা কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারক, পরিকল্পনাবিদ, সমাজকর্মী, উদ্যোক্তা সেবা গ্রহণকারী প্রত্যেকের অংশগ্রহণ ও মতামতের উপর গুরুত্বারোপ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ফলে ভুলত্রুটির সম্ভাবনা কম থাকে।
৪. স্বাতন্ত্রীকরণ : সমাজকর্মের ন্যায় সমাজকল্যাণও বিশ্বাস করে যে, সমাজের সব মানুষ কখনও এক রূপ হতে পারে না। বিভিন্নতার জন্য সমাজকল্যাণ প্রশাসন ব্যক্তি, দল, সমষ্টি, চাহিদা, সমস্যা প্রভৃতিকে স্বাতন্ত্রীকরণের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে।
৫. সম্পদের সদ্ব্যবহার : চাহিদার তুলনায় সম্পদ সবসময় সীমিত থাকে। কাজেই সমাজকল্যাণ প্রশাসন অপচয় রোধ করে সম্পদের সর্বোত্তম ও সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত করার নীতিতে দৃঢ় বিশ্বাসী ।
৬. সুষম কর্মসূচি : জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজন বিশেষ করে অনুভূত চাহিদা এবং সম্পদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সুষম কর্মসূচি প্রণয়ন করা সমাজকল্যাণ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নীতি ।
৭. কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব অর্পণ : সমাজকল্যাণ প্রশাসনে বিশ্বাস করা হয় যে, কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব পরস্পর নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। এ দু’টির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে সমাজকল্যাণ প্রশাসনে কর্মচারীদের কার্যসম্পাদন করার কর্তৃত্ব অর্পণের সাথে সাথে দায়িত্বও প্রদান করা হয়। যাতে তারা কর্তৃত্বের পরিধিতে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়।
৮. গণতান্ত্রিক বিশ্বাস ও মূল্যবোধ : এটি সমাজকল্যাণ প্রশাসনের অন্যতম নীতি। এজন্যই সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন, এজেন্সি পরিচালনাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ প্রশাসন গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও মূল্যবোধ অনুসরণ করে থাকে।
৯. বিকেন্দ্রীকরণ : সমাজকল্যাণ প্রশাসন দৃঢ়ভাবে বিকেন্দ্রীকরণ নীতিতে বিশ্বাস করে। এজন্য এটি প্রশাসক ও কর্মীদের যোগ্যতা, দক্ষতা এবং পদমর্যাদা মোতাবেক সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট ক্ষমতা প্রদান করে থাকে।
১০. ভারসাম্যতা : সমাজকল্যাণ প্রশাসনে যাবতীয় পরিকল্পনা, সিদ্ধান্ত এবং কার্যক্রমের ভিতর ভারসাম্য রক্ষা করার প্রতি সচেতন থাকতে হয়। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি দিকের ভারসাম্য বজায় রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নীতিতে সমাজকল্যাণ বিশ্বাসী ।
১১. উদ্বুদ্ধকরণ : সমাজকল্যাণ সবসময় তার লক্ষ্য অর্জনে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সেবাগ্রহীত
াদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও দায়িত্ব পালনের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাই তাদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টির জন্য সমাজকল্যাণ প্রশাসন উদ্বুদ্ধকরণ নীতি অনুসরণ করে থাকে।
১২. সমন্বয় সাধন : সমন্বয় সাধন সমাজকল্যাণ প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। সম্পদের অপচয়রোধ, সেবার পুনরাবৃত্তি রোধ, প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকলের মাঝে সম্পর্ক স্থাপন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতা কার্যাবলির মাঝে এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাঝে সমন্বয় সাধনের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে।
১৩. দ্বি-মুখী যোগাযোগ : সমাজকল্যাণ প্রশাসন চাপিয়ে দেওয়ার নীতিতে বিশ্বাসী নয়। এজন্য যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন সহ সকল ক্ষেত্রে কর্মকর্তা, কর্মচারী, সমাজকর্মী, সেবাগ্রহীতা সকলের মতামত গ্রহণের জন্য দ্বি-মুখী যোগাযোগ নীতির উপর গুরুত্ব আরোপ করে।
১৪. নমনীয়তা : সমাজকল্যাণ প্রশাসন অত্যন্ত গতিশীল। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করা সামাজিক প্রশাসনের একটি প্রধান কাজ। এজন্য সমাজকল্যাণ অনমনীয় না হয়ে নমনীয়তা নীতি অনুসরণ করে থাকে যাতে পরিস্থিতি মোতাবেক প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও সংশোধন করা সহজ হয়।
১৫. মূল্যায়ন : মূল্যায়ন সমাজকল্যাণ প্রশাসনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতি। কারণ এ নীতি অনুসরণ করেই সমাজকল্যাণ প্রশাসন পরিকল্পনা, কর্মসূচি এবং প্রশাসন প্রক্রিয়ার সফলতা, ব্যর্থতা, দুর্বলতা প্রভৃতি চিহ্নিত করে
প্রশাসনকে অধিকতর বাস্তবমুখী ও কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও সংশোধন করে থাকে।
উপসংহার : উপরিউক্ত নীতিসমূহ অনুসরণ করেই সমাজকল্যাণ প্রশাসন তার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালায় । সমাজকল্যাণ প্রশাসনের নীতিসমূহ মানবিক আচার-আচরণ এবং সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে। মানুষ যেহেতু অত্যন্ত জটিল প্রকৃতির আচার-আচরণের অধিকারী, সেহেতু সমাজকল্যাণের নীতিগুলোও পরিবর্তনীয় এবং নমনীয়.