অথবা, সমষ্টি উন্নয়নের অ্যাপ্রোচ বর্ণনা কর।
অথবা, সমষ্টি উন্নয়নের পদ্ধতিগুলো আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমষ্টি উন্নয়ন বর্তমানে সারাবিশ্বে পরিচিত পদ্ধতি। এটি সাধারণত উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সাহায্য করে। সমষ্টি জনগণের সম্পদের ব্যবহার ও সরকারি সাহায্যের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে জনগণের উন্নয়নের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে থাকে। সমষ্টি উন্নয়ন সমাজকর্মের একটি মৌলিক পদ্ধতি। সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা ও যোগ্যতা দ্বারা কতিপয় কৌশল অবলম্বন করে সমষ্টি জনগণের ভাগ্য উন্নয়ন করে থাকে। সমষ্টি উন্নয়ন পদ্ধতিতে কৌশল খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা সমাজভেদে সমষ্টি উন্নয়নে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হয়।
সমষ্টি উন্নয়নের কৌশল : সমষ্টি উন্নয়ন সমষ্টির জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য কতিপয় কৌশল অবলম্বন করে থাকে। নিম্নে এ কৌশলগুলো আলোচনা করা হল :
১. সমষ্টি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান : সমষ্টি উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হল সমষ্টি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান রাখা। সমষ্টি উন্নয়ন যাদের জন্য করা হবে সে সমষ্টির জনগণের সম্পদ, চাহিদা, দক্ষতা, আন্তরিকতা, কর্ম, সংস্কৃতি, আদর্শ ও মূল্যবোধ সম্পর্কে বাস্তবসম্মত জ্ঞান রাখতে হয়। কারণ সমষ্টির জন্য যখন কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে তখন এসব জ্ঞানের প্রয়োজন হবে। তাই সমষ্টির যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান রাখা সমষ্টি উন্নয়নের একটি কৌশল।
২. সমষ্টির প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন করা : সমষ্টির প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন করে তোলা সমষ্টি উন্নয়নের একটি অন্যতম কৌশল। যে সমষ্টির জন্য সমষ্টি উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে সে সমষ্টিতে অনেক সমস্যা থাকতে পারে। তবে সব সমস্যা সমান গুরুত্ব পাবে না। সেজন্য সমষ্টি উন্নয়নকর্মীকে ঠিক করতে হবে কোন সমস্যাটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারপর
ঐ সমস্যা সম্পর্কে সমষ্টির জনগণকে সচেতন করে তোলা হয়। জনগণকে বিভিন্নভাবে বুঝাতে হবে কোন সমস্যাটি বেশি গুরুত্বের এবং কোন সমস্যাগুলো আগে সমাধান করতে হবে।
৩. স্থানীয় নেতৃত্ব চিহ্নিত করা : সমষ্টি উন্নয়নের অন্যতম কৌশল হল স্থানীয় নেতৃত্ব চিহ্নিত করা। সমষ্টি উন্নয়নের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এতে সরকার ও জনগণের যৌথ প্রচেষ্টা থাকবে। জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে সমষ্টি উন্নয়নে। তবে সব জনগণ এ কাজে অংশ নেবে না। এজন্য স্থানীয় নেতারা জনগণের পথ থেকে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু কারা স্থানীয় নেতা
হিসেবে ভূমিকা রাখবে তা ঠিক করা সমষ্টি উন্নয়নের অন্যতম কৌশল ।
৪. জনগণের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগানো : সমষ্টি উন্নয়নের অন্যতম কৌশল হল জনগণের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগানো। সমষ্টির সমস্যাগুলো অত্যন্ত জটিল ও বহুমুখী। কিন্তু জনগণের সম্পদ ও জনগণের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই তারা ভাবতে পারে যে, এসব জটিল ও বহুমুখী সমস্যা সমাধান তাদের দ্বারা সম্ভব নয়। ফলে তারা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে
ফেলতে পারে। কিন্তু জনগণের মধ্যে যে সম্পদ ও প্রতিভা রয়েছে তার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। তাই জনগণের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে।
৫. সমস্যা বিশ্লেষণে জনগণের অংশগ্রহণ : সমষ্টি উন্নয়নের অন্যতম কৌশল হল সমষ্টির সমস্যা বিশ্লেষণে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সমষ্টি জনগণের যেসব সমস্যা রয়েছে তা নিয়ে যখন কোন আলোচনার ব্যবস্থা
করা হবে তখন সেখানে জনগণের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে জনগণ সমস্যা সম্পর্কে তাদের মতামত
তুলে ধরতে পারবে। জনগণের মতামতের উপর ভিত্তি করে উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। তাহলে সে কর্মসূচি অধিক ফলপ্রসূ হবে।
চির উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, সমষ্টি উন্নয়ন সারা বিশ্বব্যাপী অনুন্নত ও অবহেলিত জনগণের
আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সমষ্টি উন্নয়ন তার কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে জনগণের চাহিদা ও সম্পদ চিহ্নিত করে থাকে। এসব চাহিদা ও সম্পদের আলোকে কৌশল প্রয়োগ করে সমষ্টির উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়। যদি সমষ্টি উন্নয়নের সবগুলো কৌশল অবলম্বন করা হয় তাহলে সমষ্টি উন্নয়ন কর্মসূচি। অনেকাংশে সফল হবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় ।