গ্রাম্য এবং শহর জনসমষ্টির মাঝে বিদ্যমান পার্থক্যগুলো আলোচনা কর।

অথবা, গ্রামীণ ও শহর জনসমষ্টির মধ্যে বিদ্যমান বৈসাদৃশ্যসমূহ তুলে ধর।
অথবা, গ্রামীণ ও শহর জনসমষ্টির মধ্যে বিদ্যমান নেতিবাচক সম্পর্ক আলোচনা কর।
অথবা, গ্রামীণ ও শহর জনসমষ্টির মধ্যে বিদ্যমান অসামঞ্চস্য আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা : ‘Survival is the fittest’ এ নীতির বিপরীত দর্শন থেকেই সমষ্টি বা সমষ্টি সংগঠন প্রত্যয়টির উদ্ভব। সামাজিক জীব হিসেবে সমাজে সকল মানুষের যেমন বেঁচে থাকা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করার অধিকার আছে তেমনি দুর্বলেরও সমাজে বেঁচে থাকা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করার অধিকার আছে। সমাজের সকল লোক ও সকল দলের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সমাজকে আরও সুন্দর করে গড়ে তোলা যায়। মূলত এ দর্শন থেকেই সমষ্টি বা সম্প্রদায় প্রত্যয়ের উদ্ভব।
গ্রামীণ এবং শহর জনসমষ্টির মাঝে বিদ্যমান পার্থক্য (Differences between Urban and
Rural Community) : গ্রামীণ এবং শহর জনসমষ্টির অবস্থা, সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি সুচারুভাবে পর্যালোচনা করলেই গ্রামীণ এবং শহর জনসমষ্টির মাঝে বিদ্যমান পার্থক্য, বৈসাদৃশ্য সুস্পষ্টভাবে আমাদের চোখের সামনে ফুটে ওঠে। নিম্নে গ্রামীণ এবং শহর জনসমষ্টির মাঝে বিদ্যমান প্রধান প্রধান পার্থক্য ও বৈসাদৃশ্যসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা করা হল :
১. অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে : গ্রামীণ জনসমষ্টির অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। খুব কমসংখ্যক লোকই অন্যান্য পেশার সাথে জড়িত। অপরদিকে, শহরের জনসমষ্টির পেশা বিভিন্নমুখী। তাছাড়া গ্রামীণ লোকদের আয় শহরের লোকদের আয়ের তুলনায় অনেক কম।
২. মানবিক দৃষ্টিতে : শহরের জনসমষ্টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণত কুসংস্কারমুক্ত, উদার দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী। শিক্ষা প্রসারের ফলে শহরের লোকজন সংস্কৃতি চেতনা সম্পন্ন হয়। অপরদিকে, গ্রামীণ জনসমষ্টি ধর্মীয় গোঁড়ামিতে আচ্ছন্ন ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন সংকীর্ণ মনের অধিকারী।
৩. গতিশীলতা : গ্রামীণ জনসমষ্টি সাধারণত স্থবির এবং স্থিতিশীল। অপরদিকে, শহরের জনসমষ্টি সদা পরিবর্তনশীল। তারা যে কোন পরিবর্তন সহজে মেনে নেয় এবং যে কোন পরিবর্তিত অবস্থার সাথে সহজেই নিজেদেরকে খাপখাইয়ে নিতে পারে।
৪. স্তরবিন্যাস : গ্রামীণ জনসমষ্টিতে সাধারণত অর্জিত পদমর্যাদার পরিবর্তে আরোপিত পদমর্যাদা বেশি দেখা যায় এবং একেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয় অপরদিকে, শহরে স্ব-স্ব যোগ্যতার ভিত্তিতে এবং আর্থিক অবস্থার উপর পদমর্যাদা
নির্ভর করে।
৫. দৃষ্টিভঙ্গিতে : গ্রামীণ জনসমষ্টি আন্তরিকতাপূর্ণ হৃদয়ের অধিকারী। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সাহায্য সহযোগিতার ছাপ সুস্পষ্ট। অপরদিকে, শহরের জনসমষ্টি কৃত্রিমতায় বিশ্বাসী। তারা সবসময় নিজ স্বার্থকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়।
৬. ধর্মীয় মূল্যবোধ : গ্রামীণ জনগণ সাধারণত ধর্মভীরু হয়। ধর্মীয় নিয়মনীতির আওতায় তাদের জীবন অতিবাহিত হয়। অপরদিকে, শহরের জনসমষ্টি হয় বাস্তববাদী। ধর্মীয় মূল্যবোধ তাদের জীবনে তেমন কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।
৭. নেতৃত্ব : গ্রামীণ জনসমষ্টিতে বংশানুক্রমে নেতৃত্ব লক্ষ্য করা যায়। অপরদিকে, শহর জনসমষ্টিতে দক্ষতা, যোগ্যতা এবং শিক্ষানুযায়ী নিজ নিজ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব গড়ে ওঠে।
৮. জনসংখ্যা : শহর জনসমষ্টিতে জন্মমৃত্যু হার গ্রামীণ জনসমষ্টির তুলনায় কম। গ্রামে একক পরিবারের পরিবর্তে যৌথ পরিবারের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। অপরদিকে, শহর জনসমষ্টিতে যৌথ পরিবারের তুলনায় একক পরিবারের প্রাধান্য বেশি পরিলক্ষিত হয়।
৯. বিবাহ : গ্রামীণ জনসমষ্টিতে বিবাহ একটি বড় ধরনের উৎসব। গ্রামে বিবাহ উৎসবে প্রতিবেশির ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তাছাড়া শহরের তুলনায় গ্রামে বহুবিবাহ বেশি। অপরদিকে, শহরে বিবাহ অনেকটা শুধুই পরিবার এবং নিকটাত্মীয় কেন্দ্রিক। এখানে পাড়া-প্রতিবেশির ব্যাপক উপস্থিতি খুব কমই লক্ষ্য করা যায়।
১০. শ্রম বিনিয়োগ : গ্রা মীণ জনসমষ্টিতে শ্রম বিনিয়োগের প্রধান ক্ষেত্র কৃষি। শহরে শ্রম বিনিয়োগের বহুমুখী ক্ষেত্র লক্ষ্য করা যায়। গ্রামীণ জনসমষ্টিতে একের বিপদে অন্যরা এগিয়ে আসে। কিন্তু শহর জনসমষ্টিতে এ প্রবণতা খুব কমই লক্ষ্য করা যায়।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার সমাপ্তি রেখা টানতে গিয়ে বলা যায় যে, গ্রামীণ শহর জনসমষ্টির কাঠামো, বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা এবং বৈষম্য পর্যালোচনা করলে তাদের মাঝে কতিপয় পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্য সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে, যা উপরে আলোচনা করা হল। সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের স্বার্থেই এই পার্থক্য ও বৈসাদৃশ্য যতদূর সম্ভব দূর করার চেষ্টা
করা আজ সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%9f%e0%a6%bf/