আত্মীকরণের অন্তরায়সমূহ আলোচনা কর ।

অথবা, আত্মীকরণের পথে বাঁধাসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, আত্মীকরণের পথে প্রতিবন্ধকতাগুলো লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক বা দলীয় জীবনে প্রত্যেকেই নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে চলতে চায়। যখন বিভিন্ন ব্যক্তির নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে তখন জীবনে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সেজন্য প্রয়োজন প্রত্যেক ব্যক্তির বা গোষ্ঠীর আদর্শ বা নীতির সঙ্গে অপরাপর ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর আদর্শ বিধান নীতির সামঞ্জস্য রক্ষা করা। সমাজে যখন বিপরীতধর্মী দুই বা ততোধিক সংস্কৃতি বা ব্যক্তির সামঞ্জস্য ঘটে তখন সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে এরূপ সামঞ্জস্য বিধানকে আত্মীকরণ বলা হয়।
আত্মীকরণের অন্তরায়সমূহ : আত্মীকরণের অন্তরায়গুলো নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো : লাশ
১. বিচ্ছিন্নতা (Isolation) : সামাজিক জীবনে পারস্পরিক ক্রিয়ার অভাব ঘটলেই পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেজন্য সমাজবিচ্যুত কোন ব্যক্তির পক্ষে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আত্মীকরণের প্রশ্নও অবাস্তব। সামাজিক জীবনে তখনই টিকে থাকা সম্ভব হয় যখন পারস্পরিক ক্রিয়ার সংমিশ্রণ ঘটে।
২. সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা (Cultural differences) : আত্মীকরণ তখনই সম্ভব হয় যখন দুটি সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও মূলগত বৈষম্য অবর্তমান থাকে। আবার যখন মূলগত বৈষম্য দুটি সংস্কৃতির মাঝে বিরাজমান আকারে থাকে তখন আত্মীকরণ সম্ভব হয়ে উঠে না।
৩. বর্ণগত এবং দেহগত বৈশিষ্ট্যের বিভিন্নতা (Difference of colour and physiological characteristics) : মানুষে মানুষে সাংস্কৃতিক জীবনে মিল থাকা সত্ত্বেও বর্ণগত বা দেহগত বৈষম্যের জন্যও আত্মীকরণ সহজ হয় না। এক্ষেত্রে মানুষের পারস্পরিক ঐক্যে বা সামাজিক সংহতিতে ফাটল ধরায়; যেমন- আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গদের সাথে থাকা সত্ত্বেও
কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে আত্মীকরণ গড়ে উঠে নি। কারণ শ্বেতাঙ্গরা নিজেদেরকে উন্নত জাতি বলে মনে করে।
৪. সামাজিক নির্যাতন (Social persecution) : সমাজে যখন উচ্চশ্রেণী কর্তৃক নিম্নশ্রেণী বা শাসক কর্তৃক শাসিত
গোষ্ঠী শোষিত হয় তখন সমাজে পারস্পরিক বিদ্বেষভাব ঘটে। এরূপ ক্ষেত্রে আত্মীকরণে বিঘ্ন ঘটে।
উপসংহার :পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আত্মীকরণ একটি শিক্ষাগত কার্যপ্রক্রিয়া। আত্মীকরণের দ্বারা কোন ব্যক্তির সাংস্কৃতিক জীবনে ভারসাম্য রক্ষার জন্য কিছুটা পরিবর্তন সম্ভব হয়। মূলত এটি সংস্কৃতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ।