সামাজিক জীবনে সহযোগিতা এবং দ্বন্দ্বের সম্পর্ক আলোচনা কর।

অথবা, দলীয় জীবনে সহযোগিতা এবং দ্বন্দ্বের সম্পর্ক আলোচনা কর।
অথবা, দলীয় জীবনে সহযোগিতা এবং দ্বন্দ্বের সাদৃশ্য উল্লেখ কর।
অথবা, দলীয় জীবনে সহযোগিতা এবং দ্বন্দ্বের ইতিবাচক সম্পর্ক লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক বা দলীয় জীবনে পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, একদিকে মানুষ যেমন অন্যের সাহায্য ও সহযোগিতা ব্যতীত চলতে পারে না, অপরদিকে পারস্পরিক ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বও বিদ্যমান রয়েছে। জীবনে দ্বন্দ্ব ও সহযোগিতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সমাজবিজ্ঞানী চার্লস কুলির উক্তি এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, “দ্বন্দ্ব এবং সহযোগিতা বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়, একই কার্যপ্রক্রিয়ার একটি দিক যার মধ্যে উভয়েরই কিছু অন্তর্ভুক্ত।”
সামাজিক/দলীয় জীবনে সহযোগিতা এবং দ্বন্দ্বের সম্পর্ক : সহযোগিতা ও দ্বন্দ্ব সমাজজীবনের দুটি মৌল উপাদান। উভয়ই অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ। এদের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে নিম্নে আলোকপাত করা হলো :
প্রথমত, দ্বন্দ্ব সহযোগিতাবিচ্ছিন্ন বিষয় নয়, একই কার্যপ্রক্রিয়ার একটি দিক, যার মধ্যে উভয়েরই কিছু অন্তর্ভুক্ত থাকে । সুতরাং সহযোগিতা ও দ্বন্দ্ব উভয়ই সমাজে সহাবস্থান করছে।
দ্বিতীয়ত, দ্বন্দ্ব ও সহযোগিতা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। সামাজিক মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং কার্যপ্রক্রিয়ার এক বিস্তৃত এলাকা জুড়ে দ্বন্দ্ব ও সহযোগিতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
তৃতীয়ত, MacIver and Page এর মতানুযায়ী, সমাজ দ্বন্দ্বসংযুক্ত সহযোগিতা। অর্থাৎ সহযোগিতার সাথে দ্বন্দ্ব, আড়াআড়িভাবে যুক্ত । তাই বলা হয়, “Society is co-operation crossed by conflict.”
চতুর্থত, সহযোগিতা এবং দ্বন্দ্ব পাশাপাশি বিদ্যমান। শুধু সহযোগিতা আছে কিন্তু দ্বন্দ্ব নেই, কিংবা শুধু দ্বন্দ্ব আছে, সহযোগিতা নেই এমন কোন সমাজের অস্তিত্ব মানব ইতিহাসে নেই ।
পঞ্চমত, সহযোগিতা এবং দ্বন্দ্বের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হতে দেখা যায়। সমাজস্থ একই ব্যক্তির আচরণের মাধ্যমে সহযোগিতা ও দ্বন্দ্বের অভিব্যক্তি ঘটতে দেখা যায়।
ষষ্ঠত, পরিবারের সদস্য, খেলার সাথী ইত্যাদি প্রাথমিক গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতার মাত্রা সুতীব্র হওয়া সত্ত্বেও এদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সহযোগিতা একই সাথে বিদ্যমান থাকে।
সপ্তমত, দ্বন্দ্বের মধ্যে যেমন সহযোগিতার উপাদান থাকে তেমনি বিপরীতভাবে সহযোগিতার মধ্যেও দ্বন্দ্বের উপাদান
খুঁজে পাওয়া যায়। ফলে উভয়ের মধ্যে সংযোগ সেতু গড়ে উঠে।
অষ্টমত, সহযোগিতা এবং দ্বন্দ্ব পূর্ণাঙ্গভাবে স্বতন্ত্র কোন জিনিস নয়। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব উজ্জীবিত করে অভ্যন্তরীণ সহযোগিতাকে। বিবদমান দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে প্রত্যেক গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতা অধিকতর সুদৃঢ় হয়।
নবমত, সমাজজীবনে সহযোগিতা এবং দ্বন্দ্বের সংযোগমূলক সম্পর্ক বিদ্যমান। কেননা দ্বন্দ্বমূল ক্রিয়া সহযোগিতাকে বর্জন করতে পারে না।
দশমত, সমাজজীবনে সংহতি এবং ঐক্য বজায় রাখার জন্য সহযোগিতা এবং দ্বন্দ্ব উভয়েরই অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। সহযোগিতাকে সুদৃঢ় করার জন্য দ্বন্দ্বকে পরিহার করতে মানুষ উৎসাহিত হলেও সমাজের ভারসাম্য রক্ষার তাগিদেই দ্বন্দ্বের প্রয়োজন দেখা দেয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, সহযোগিতা ও দ্বন্দ্ব পারস্পরিক সম্পর্কসূত্রে আবদ্ধ এবং দ্বন্দ্বমূলক ক্রিয়া সহযোগিতাকে বর্জন করতে পারে না বলেই মানুষের সামাজিক জীবনে সহযোগিতা এবং দ্বন্দ্বের সংযোগ লক্ষ্য করা যায়। সমাজের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সহযোগিতা এবং দ্বন্দ্ব উভয়ই পাশাপাশি অবস্থান করে। তথাপি একথা বলতেই হয়
যে, আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ তথা সমাজের সার্বিক কল্যাণে সহযোগিতার মাত্রা তীব্রতর হওয়া আবশ্যক।