অথবা, সমাজে প্রতিযোগিতার গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, সমাজে প্রতিযোগিতার তাৎপর্য লিখ।
অথবা, সমাজে প্রতিযোগিতার প্রয়োজনীয়তা লিখ ।
উত্তর৷ ভূমিকা : প্রতিযোগিতা হলো সামাজিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি মৌলিক রূপ। কোন একটি বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে প্রতিযোগিতার সূত্রপাত হতে পারে। কেননা মানুষের চাহিদার তুলনায় তার যোগান সীমিত হলেই সমাজে এই প্রতিযোগিতা জাগতিক দ্রব্য, ক্ষমতা, সামাজিক মর্যাদা, খ্যাতি প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে
দেখা দেয়।
সমাজে প্রতিযোগিতার গুরুত্ব : সমাজে প্রতিযোগিতার ভূমিকা বা গুরুত্ব নিম্নে দেয়া হলো :
১. সামাজিক ভূমিকা : প্রতিযোগিতার সামাজিক ভূমিকা হলো এই যে, এর মাধ্যমে প্রতিটি পদের জন্য যোগ্যতা বিচার হয়। এর জন্য অবশ্য ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা থাকা বাঞ্ছনীয়। এরূপ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা সমাজকে গতিশীল করে তোলে।
২. সংগতিবিধান : সমাজে প্রচলিত মূল্যবোধের সঙ্গে প্রতিযোগিতা সম্পর্কিত নিয়মের সংগতি থাকে। এই সংগতি বজায় রেখে প্রতিযোগীগণ পরস্পর পরস্পরকে অতিক্রম করে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে চেষ্টা করে। ফলে মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা নানাভাবে এবং নানাদিকে প্রসার লাভ করে।
৩. অনুমোদিত নিয়ম মেনে চলা : সমাজস্থ মানুষ ব্যক্ত অথবা অব্যক্ত কতকগুলো অনুমোদিত নিয়ম মেনে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। প্রায় প্রতি সমাজেই প্রতিযোগিতা একটি সমাজ অনুমোদিত ব্যবহার। আমেরিকার সামাজিক জীবনে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবহার শুধু বাঞ্ছনীয়ই নয়, এরূপ ব্যবহার আদর্শরূপে পরিগণিত।
৪. ব্যবহার : কোন কোন সমাজে অবশ্য প্রতিযোগিতামূলক ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায় না; যেমন- জুনী (Zuni) এবং ডেকোটা (Dakota) সমাজে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবহারকে অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়। কারণ তাদের কাছে প্রতিযোগিতার ইতিবাচক দিকগুলো থেকে নেতিবাচক দিকগুলোই বিশেষভাবে বিবেচ্য। 1
৫. নেতিবাচক দিক : প্রতিযোগিতার যেমন ইতিবাচক দিক রয়েছে, তেমনি এর কতকগুলো নেতিবাচক দিকও রয়েছে; যেমন- সমাজে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবাধ প্রতিযোগিতা চলতে দিলে প্রাচুর্যের সঙ্গে দারিদ্র্য পাশাপাশি থাকতে পারে।
৬. প্রাচুর্যতা : সমাজবিজ্ঞানী কিংস্লে ডেভিস বলেন, “প্রতিযোগিতা প্রাচুর্যের মধ্যে অভাব, ভীতি, অস্থিরতা এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।”
৭. অশুভ প্রভাব : অনেকে মনে করেন, প্রতিযোগিতা পারস্পরিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবিমিশ্র কল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে না। অনেকে প্রতিযোগিতার অনেক অশুভ প্রভাব লক্ষ্য করেছেন। এ প্রসঙ্গে ক্যারেন হর্নাই (Karen Horney) এর উক্তি উল্লেখ করা’ যেতে পারে। তিনি বলেন, “পাশ্চাত্য সভ্যতায় প্রতিটি সদস্যের জন্য প্রতিযোগিতা একটি সমস্যা।”
৮. মনো-দৈহিক বিকাশ : প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মানুষের মনো-দৈহিক ও সামাজিক গুণাবলি বিকশিত হয়।
৯. উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি : প্রতিযোগিতা প্রতিযোগীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বা অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে থাকে।
১০. নিয়মের শাসন : এটি সমাজব্যবস্থায় নিয়মের শাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে।
১১. শ্রমবিভাজন । প্রতিযোগিতা শ্রমবিভাজন বা কর্ম বিশেষীকরণ সৃষ্টি করে।
১২. দলীয় লক্ষ্যার্জন : এটি দলীয় লক্ষ্যার্জনে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে।
১৩. সুসংগঠিত করা : প্রতিযোগিতা দলকে সুসংগঠিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
১৪. প্রগতি ও উন্নতি : এটি উন্নয়ন বা প্রগতির ধারক ও বাহক।
১৫. বিবিধ : প্রতিযোগিতার অন্যান্য ভূমিকা বা প্রভাবসমূহ হলো- ন্যায়নীতি কেন্দ্রীভবন, সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, ব্যক্তিস্বাধীনতার চেতনা প্রভৃতি।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, প্রতিযোগিতা সব সমাজে একরূপ নয়। বিভিন্ন সমাজে তা বিভিন্নভাবে ক্রিয়াশীল। প্রতিযোগিতার ইতিবাচক দিক তখনই নেতিবাচক দিক হ
তে অধিক ক্রিয়াশীল হবে যখন প্রতিযোগিতার বিস্ময় প্রভাবকে পরিহার করে সুস্থ প্রতিযোগিতার আশ্রয় গ্রহণ করা যাবে।