অথবা,সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির কী ধরনের সুবিধা রয়েছে আলোচনা কর।
অথবা, পর্যবেক্ষণের সুবিধাগুলো লেখ।
অথবা, সামাজিক গবেষণায় পর্যবেক্ষণের সবলদিকসমূহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক গবেষণায় প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহের জন্য পর্যবেক্ষণ কৌশল প্রয়োগের কতিপয় সুবিধা রয়েছে৷ এসব সুবিধার কারণে সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় উপাত্ত সংগ্রহের জন্য পর্যবেক্ষণ কৌশল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সামাজিক গবেষণায় পর্যবেক্ষণের সুবিধাসমূহ : এ কৌশলের উল্লেখযোগ্য সুবিধাগুলো নিয়ে আলোচনা
করা হলো :
১. পর্যবেক্ষণ কৌশলের সাহায্যে স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক অবস্থায় মানুষের আচার-আচরণ সামাজিক সম্পর্ক যেভাবে প্রকাশ পায় তা অবিকৃতভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়।
২. পর্যবেক্ষণ কৌশলে গবেষণাধীন ব্যক্তিকে সরাসরি প্রশ্ন না করে তার বাস্তব আচরণ পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। ফলে উপাত্ত প্রাপ্তি গবেষণাধীন ব্যক্তির ইচ্ছা বা অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে না। এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে ।
৩. সাধারণত যেসব উত্তরদাতার (Respondent) নিকট থেকে মৌখিক উত্তর (Verbal Response) প্রত্যাশা করা যায় না, তাদের নিকট থেকে উপাত্ত সংগ্রহের জন্য পর্যবেক্ষণই একমাত্র কার্যকর কৌশল হিসেবে স্বীকৃত । যেমন- শিশু, প্রতিবন্ধী, সন্ত্রাসী ব্যক্তি প্রমুখ ।
৪. মানুষের এমন কতিপয় বিষয় রয়েছে যেমন- ব্যক্তিগত আয়, ব্যক্তিগত বিষয়, গোপন তৎপরতা, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রভৃতি ক্ষেত্রে সর্বদা সে গোপনীয়তা রক্ষা করতে চায় এবং এসব বিষয়ে কোন রকম
অনুসন্ধান করার অনুমতি দেয় না কিংবা অনুমতি দিলেও সঠিক তথ্য দিতে চায় না, এসব বিষয় অনুসন্ধানের জন্য পর্যবেক্ষণই একমাত্র উত্তম পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত।
৫. উপাত্ত সংগ্রহের কৌশল হিসেবে পর্যবেক্ষণ বিশেষকরে অকাঠামোগত এবং অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ খুব নমনীয়
প্রকৃতির । ফলে গবেষক ইচ্ছা করলে মাঠ পর্যায় থেকে যে কোন প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারেন ।
৬. পর্যবেক্ষণ কৌশলে বিশেষকরে অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণে গবেষক ও গবেষণাধীন ব্যক্তিবর্গের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ
(Repport Building) সম্পর্ক গড়ে উঠে । ফলে নিখুঁত ও বিস্তারিত উপাত্ত সংগ্রহ করা সহজ হয় ।
৭. পর্যবেক্ষণ মানবীয় আচরণ সম্পর্কে সঠিক ও মৌলিক উপাত্ত সরবরাহ করে থাকে । ফলশ্রুতিতে যে কোন নতুন পূর্বানুমান (Hypothesis) গঠন কিংবা প্রচলিত পূর্বানুমান যাচাই করতে পর্যবেক্ষণ কৌশল কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে ।
৮. কোন সমাজ বা সম্প্রদায়ের রীতিনীতি, মূল্যবোধ, আচার-অনুষ্ঠান, সংস্কৃতি, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি বিষয়ে উপাত্ত সংগ্রহের জন্য পর্যবেক্ষণ সবচেয়ে কার্যকর কৌশল । কেননা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই কেবল এসব অনুষ্ঠানের সঠিক উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব । কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে এসব অনুষ্ঠান সম্পর্কে প্রকৃত উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব নয় ।
৯. পর্যবেক্ষণ কৌশলে গবেষক যেহেতু নিজে পর্যবেক্ষণীয় ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে স্বাভাবিক পরিবেশে নিজের বাস্তব জ্ঞান, দক্ষতা, কৌশল প্রয়োগ করে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকেন, সেহেতু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সংগৃহীত উপাত্ত অধিক সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, সামাজিক গবেষণায় পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির বহুমুখী সুবিধা বিদ্যমান । সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহে পর্যবেক্ষণ কৌশল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।