মুসলিম দর্শনে আল্লামা ইকবালের অবদান কী?

অথবা, মুসলিম দর্শনে আল্লামা ইকবালের ভূমিকা কিরূপ?
অথবা, মুসলিম দর্শনে আল্লামা ইকবাল কী অবদান রেখেছেন সংক্ষেপে লেখ।
অথবা, মুসলিম দর্শনে আল্লামা ইকবালের অবদানের সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে আল্লামা ইকবাল বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। তিনি মুসলিম দর্শনে প্রাচ্যের আধ্যাত্মবাদ ও পশ্চাত্যের বস্তুবাদের মধ্যে সমন্বয়সাধন করেন। ইসলামের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ যে কোন বিষয়কেই তিনি গ্রহণ করেছেন। মুসলিম দর্শনে তিনি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। তাঁর চিন্তা ও কর্ম উপমহাদেশীয় মুসলমান
জাতিকে নবজাগরণে দিকনির্দেশনা দান করেছে।
মুসলিম দর্শনে ইকবালের অবদান : একজন কবি ও দার্শনিক হিসেবে তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সুধী সমাজে সুপরিচিত ছিলেন। মুসলিম দর্শনে তাঁর অবদান তুলে ধরা হলো :
ইসলামের পুনর্জাগরণ : ইসলামি জ্ঞানবিজ্ঞান ও সংস্কৃতির পুনর্জাগরণে আল্লামা ইকবালের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, আমাদের মুসলমানদের দুটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। যথা :
১. কুসংস্কার পরিহার ও ২. অহংকে জাগ্রত করা। তিনি বলেন, কুসংস্কার আমাদের পশ্চাদপদতার কারণ। অন্যদিকে, অহং বা খুদি আমাদেরকে সত্যের পথে পরিচালিত করে।
পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ পরিহার : আল্লামা ইকবাল পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে মুসলমানদের সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদ ও জড়বাদ এবং প্রাচ্যের কর্মহীন অধ্যাত্মবাদ নয়, বরং এ দু’য়ের মধ্যে সংযোগ সাধনের মধ্যেই মানুষের প্রকৃত কল্যাণ নিহিত।
ধর্মীয় চিন্তা সংস্কার ও পুনর্গঠন : ইকবালের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের ইহজাগতিক ও পারলৌকিক উন্নতি সাধন। তিনি ইসলামি ধর্মীয় চেতনার সংস্কার ও পুনর্গঠনে “The Reconstruction of Religious Thought in Islam” নামক গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থে তিনি ধর্মীয় ভাবধারা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দেন। মানবজীবনের পূর্ণাঙ্গ ও সার্থক রূপায়ণের জন্য তিনি ইহকাল ও পরকালের উপর জোর দেন।
প্রগতিবাদী চিন্তাধারা : তিনি প্রগতিবাদী দার্শনিক ও সংস্কারক। কুরআন ও হাদিসের জ্ঞানের উপর অগাধ বিশ্বাস করলেও তিনি রক্ষণশীল গোঁড়া মতবাদের সমর্থন করেন নি। তিনি ধর্মপ্রাণ মুসলমান হয়েও সমাজতন্ত্রের সমর্থন করেন। তিনি ইসলামি সাম্রাজ্যবাদের সমর্থন করেন এবং এতেই মানবকল্যাণ নিহিত রয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। ইসলামের
বিকাশে তাঁর মতবাদ ছিল অনুপ্রেরণামূলক।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, আল্লামা ইকবালের দর্শনের মূল উপজীব্য ছিল মুসলমানদের হারানো অতীত, ঐশ্বর্য, ঐতিহ্যের স্মৃতি এবং বর্তমানের হতোদ্যম মুসলমানদের প্রতি নবজাগরণের উদাত্ত আহ্বান । মুসলমানদের স্বতন্ত্র, শক্তি ও স্বাধীনতার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ইকবালের ঐকান্তিক প্রয়াসের জন্য তাকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ‘ভাবজনক’ বলা হয়। মুসলিম দর্শনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।