অথবা, ইবনে রুশদ দৈহিক পুনরুত্থান সম্পর্কে কী বলেছেন?
অথবা, দৈহিক পুনরুত্থান সম্পর্কে ইবনে রুশদের মতবাদ সংক্ষেপে তুলে ধর।
অথবা, দৈহিক পুনরুত্থান সম্পর্কে ইবনে রুশদ কিরূপ মতবাদ দেন?
অথবা, ইবনে রুশদের দৈহিক পুনরুত্থান সম্পর্কীত মতবাদ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ইসলামি শরিয়তে দৈহিক পুনরুত্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। পবিত্র কুরআনেও পুনরুত্থানের কথা বলা হয়েছে। সাধারণ মুসলমান ও মুসলিম দার্শনিকগণ একটি বিষয়ে একমত যে, পুনরুত্থান হবেই। দৈহিক পুনরুত্থানকে ফালাসিফা সম্প্রদায়ের মুসলিম দার্শনিকগণ স্বীকার করেন না। তাঁদের ধারণা পুনরুত্থান দিবসে মানুষ নতুন করে দেহ ধারণ করে পুনরুত্থিত হবে না, বরং মানুষের আত্মা যা অমর ভাই ঐ দিবসে পুরস্কার ও শাস্তি গ্রহণ করবে।
ইবনে রুশদের অভিমত : ইবনে রুশদ Tahafut al Tahafut’ গ্রন্থের শেষ অধ্যায়ে দৈহিক পুনরুত্থান সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি দৈহিক পুনরুত্থানের বিষয়ে মূলত ফালাসিফা দার্শনিকদেরই সমর্থন করেছেন। কিন্তু তিনি গাজালিকে জোড়ালোভাবে সমালোচনা করেছেন বলে মনে হয় না। ইবনে রুশদের মতে, মুসলিম অমুসলিম সব দার্শনিকদের উপরই গাজালি এ অভিযোগ আরোপ করেন যে, তারা কেউ
দৈহিক পুনরুত্থান স্বীকার করেন না। তবে এ অভিযোগ পুরোপুরি সঠিক নয়। কারণ প্রাচীন দার্শনিকরা এ আলোচনাই করেন নি।.ইবনে রুশদের ধারণা ধর্মতাত্ত্বিকরা ও দার্শনিকরা দৈহিক পুনরুত্থানের বিষয়টিতে নিজস্ব যুক্তি প্রয়োগে ব্যর্থ হয়ে ধর্মতত্ত্বেরই আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা ধর্মতত্ত্বের সঠিক ব্যাখ্যা যুক্তির দ্বারা অনুধাবন করতেও ব্যর্থ হয়েছেন।
ইবনে রুশদ গাজালির প্রশংসা করে বলেন যে, গাজালি আত্মাকে আধ্যাত্মিক দ্রব্য বলে মনে করেছেন এবং একে যৌক্তিক ও ধর্মতাত্ত্বিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রমাণের প্রয়াস নিয়েছেন। তবে ইবনে রুশদ মনে করেন, গাজালি পূর্বে এটা দেখালে ভালো করতেন যে, আমাদের আত্মার সাথে দেহের সংযোগ পুনরায় সংঘটিত হবে না। অর্থাৎ আত্মার পুনরুত্থান হবে তবে দৈহিকভাবে পুনরুত্থান হবে না। মৃত্যুর পরে যে দেহ পচে গলে গেছে, পুনরুত্থানের সময়ে সে দেহই আবার
পুনরুত্থিত হবে না। ইবনে রুশদের মতে, যা পুনরুত্থিত হয় তা মৃত মানুষটির একটি Image মাত্র। কিছু কিছু ধর্মতাত্ত্বিককের ভাষায় আত্মা
হচ্ছে একটি আপতিক বিষয়। ইবনে রুশদ মনে করেন যে, যে বিষয়টি নিতান্তই আপতিক সেখানে কোন নিশ্চয়তা প্রদান করা সম্ভব নয়। যদি দেহের সাথে আত্মা আবারও পরকালে ঐ দেহের সাথেই আবশ্যিকভাবে মিলিত হবে এর নিশ্চয়তা নেই । ইবনে রুশদের ধারণা, যা ধ্বংস হয় এবং যা পুনরায় নতুন হয়ে উঠে তা হতে হবে সুনির্দিষ্ট, একে সামগ্রিকভাবে
হলে চলবে না। ফলে পুনরুত্থান হলেও প্রতিটি সুনির্দিষ্ট দেহের সাথে সুনির্দিষ্ট আত্মার পুনর্মিলন ঘটতে হবে। ফলে দৈহিক পুনরুত্থান সম্ভব নয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইবনে রুশদ দেখাতে চেয়েছেন যে, ধর্মতাত্ত্বিকরা এবং গাজালি দৈহিক পুনরুত্থানের বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ধর্মতত্ত্বের উপর নির্ভর করে যুক্তি প্রদান করেছেন। আল্লাহ কুরআনে খোদ দৈহিক পুনরুত্থানের বিষয়েও যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। দৈহিক পুনরুত্থান বিষয়ে গাজালি এবং দার্শনিকদের মধ্যে মতের অমিল
লক্ষ্য করা গেলেও কোন মুসলমানের দৈহিক পুনরুত্থানের ব্যাপারে অন্তত সন্দেহ থাকার কথা নয়। আর এ ব্যাপারে ইবনে রুশদের ভূমিকা মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে অগ্রগণ্য।