গাজালির রাষ্ট্রদর্শন সংক্ষেপে লেখ।

অথবা, রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে গাজালির অভিমত কী?
অথবা, গাজালির রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
অথবা, গাজালির রাষ্ট্রদর্শন সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, গাজালির রাষ্ট্রদর্শন সংক্ষেপে তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা
: মুসলিম চিন্তা জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও মৌলিক চিন্তাবিদ ছিলেন ইমাম আল গাজালি। তাঁর রাষ্ট্রচিন্তায় ইসলামের প্রভাব রয়েছে। রাষ্ট্রতত্ত্ব বিশ্লেষণে তিনি যে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও মতামত ব্যক্ত করেছেন তাঁর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। নিঃসন্দেহে তিনি মুসলমানদের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে সহানুভূতিশীল পন্ডিত ও পরবর্তীকালের বংশধরদের জন্য একমাত্র ধর্ম শিক্ষক।
গাজালির রাষ্ট্রদর্শন : গাজালির মতে, সামাজিক জীব হিসেবে মানুষকে সৃষ্টি করায় মানুষ একে অপরের সাহায্য কামনা করে। খাদ্য-বস্ত্রের অভাব মেটানোর জন্য অপরের উপর নির্ভর করতে হয়। তাছাড়া মানুষ সংঘবদ্ধ ছাড়া চলতে পারে না। তাই একত্রে বসবাস করে এবং সমাজ গড়ে তোলে। এ সমাজ থেকেই নগর গড়ে ওঠে এবং নাগরিক নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আইনের শাসন ও সেনাবাহিনী গড়ে তোলা হয়। আর এভাবেই রাষ্ট্রের উৎপত্তি। তিনি রাষ্ট্র র্শনে কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন।
১. শাসক : গাজালি রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা রক্ষা এবং মানুষের পার্থিব কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণের জন্য একজন শক্তিশালী শাসকের প্রয়োজন বলে মনে করেন। তাঁর মতে, শাসক হবেন রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ নেতা এবং তিনি পরম নিষ্ঠা ও শৃঙ্খলার সাথে আল্লাহর নির্দেশসমূহ বাস্তবে রূপদান করবেন।
২. রাষ্ট্র ও আইন : গাজালির মতে, মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে সুষ্ঠু জীবনযাপন ও সমাজ পরিচালনার জন্য আইন এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজন রয়েছে। এগুলো মানব জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
৩. রাষ্ট্র ও ধর্ম : তিনি মনে করেন রাষ্ট্র ও ধর্ম পরস্পর সম্পর্কিত। তাঁর মতে, মানব সমাজের ভিত্তি হচ্ছে ধর্ম এবং এর সমকক্ষ হচ্ছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ধর্ম পালনে সহায়ক।
৪. রাষ্ট্র ও জীবদেহের তুলনা : তাঁর মতে, রাষ্ট্রকে একটি জীবদেহের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। শাসন বিভাগের কার্যকর্তা, পুলিশ, মন্ত্রী ও শাসক প্রধান যথাক্রমে কামনা, ক্রোধ, সাধারণ বিবেক বুদ্ধি ও হৃদয়ের প্রতীকরূপে বিবেচ্য।
৫. নাগরিকের শ্রেণিবিভাগ : তিনি রাষ্ট্রের নাগরিকদের চার ভাগে ভাগ করেছেন। যথা : ক. কৃষক খ. শিল্পী ও কারিগর, গ. যোদ্ধা বা সেনাবাহিনী এবং ঘ. শিক্ষিত বা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়।
৬. গুপ্তচর প্রথা : গাজালির মতে, রাষ্ট্রব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বা বিভাগ হচ্ছে গুপ্তচর প্রথা। এর মাধ্যমে শাসক রাষ্ট্রের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারেন।
৭. প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ : গাজালি বলেন, রাষ্ট্রের বিশালায়তনের দিকে নজর রেখে সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা কায়েমের.লক্ষ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ একান্ত দরকার। তাঁর মতে, কেন্দ্রের হাতে সকল ক্ষমতা থাকবে এবং প্রদেশগুলো কিছু কিছু স্বাধীনতা ভোগ করবে।
৮. রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও রাজ কর খাত : তিনি মনে করেন, কর ধার্যের ব্যাপারে এমন রীতি অবলম্বন করা উচিত যার.ফলে প্রজাগণের কর প্রদানে কোন অসুবিধার সৃষ্টি না হয়।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, গাজালি তাঁর রাষ্ট্রদর্শনে ইসলামি ভাবধারা উন্মেষের এক নবদিগন্তের সূচনা করেন। ইসলামি চিন্তা-ধারার প্রেক্ষিতে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের যে পদ্ধতি এবং রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় ধারণার ক্রমবিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন তা রাষ্ট্রনৈতিক দর্শনের ক্ষেত্রে সত্যিই বিস্ময়কর অবদান।