সুফিবাদে আল-গাজালির অবদান সংক্ষেপে লিখ ।

অথবা, সুফিদর্শনে আল গাজালির অবদান লিখ।
অথবা, সুবিবাদে আল-গাজালির অবদান কী?
অথবা, সুফিদর্শনে আল-গাজালির অবদান সম্পর্কে যা জান লেখ।
অথবা, সুফিবাদে আল-গাজালির অবদান উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
আল গাযালি ছিলেন একাধারে ধর্মতাত্ত্বিক দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সুফিসাধক ও সমাজসংস্কারক।
তিনি ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকার ও রক্ষক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। গাযালির দার্শনিক, চিন্তাধারার মূল লক্ষ্য ছিল ইসলামকে ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস হতে রক্ষা করা। ইমাম গাযালি যুক্তির দ্বারা এবং নিজের ইমাম Spirit বা শক্তির দ্বারা মুসলিম সমাজকে জাগ্রত করতে প্রয়াসী ছিলেন।
সুফিবাদে আল গাযালির অবদান : দর্শনের অন্যান্য শাখার মতো সুফি দর্শনেও আল-গাযালির অবদান অনস্বীকার্য। তিনিই সর্বপ্রথম দেখাতে সক্ষম হন যে, সুফিবাদ ধর্মের অন্তর্নিহিত দিকের প্রতি গুরুত্ব দেয়। তাই ইসলামকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হলে সুফি হওয়ার বিকল্প নেই। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. জীবনাদর্শ হিসেবে সুফিবাদ : আল-গাযালি সর্বপ্রথম দেখাতে সক্ষম হন যে, জীবনাদর্শ হিসেবে সুফিবাদের কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেছেন, গ্রিক ভাবধারা ইসলামের মৌলিক আদেশকে ভিন্ন পথে ধাবিত করে। এটি না বুঝতে পেরে মুসলিম চিন্তাবিদগণ গ্রিক প্রভাবকে বিনা প্রশ্নে মেনে নিয়েছেন। এ দৃষ্টিকোণ থেকে তারা ইসলামকে বিচার করেছেন এবং ইসলামের বাইরের দিকের প্রতি সন্তুষ্ট থেকেছেন। তিনিই প্রথম সুফিবাদকে জীবনাদর্শ হিসেবে দাঁড় করাতে সক্ষম হন।
২. শরিয়তের সাথে সুফিবাদের দ্বন্দ্ব নিরসন: শরীয়তপন্থীরা মনে করেন যে, আল্লাহর আদেশ ও রাসূল (স) এর নির্দেশিত পথ আমাদের পরমকল্যাণ দিতে পারে। তারা মূলত ইসলামকে বাহ্যিকভাবে মেনে চলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন কিন্তু গাযালি.দেখান যে, ধর্মের দুটি দিক আছে। যথা : ১. অভ্যন্তরীণ দিক ও ২. বাহ্যিক দিক। অভ্যন্তরীণ দিক বেহেস্তের উচ্চতর সুখের.প্রতিশ্রুতি দেয়। আর বাহ্যিক দিক বেহেস্তের নিম্নতর সুখের আশ্বাস দেয়। গাযালিই প্রথম ব্যক্তি যিনি শরিয়তের কঠোর বিধিনিষেধ ও ধর্মের অভ্যন্তরীণ দিকের উপর গুরুত্বারোপ করে সুফিবাদ ও শরিয়তের মধ্যে সমন্বয়সাধন করতে সক্ষম হয়েছেন।
৩. সুফিবাদের সংস্কার : আল-গাযালি কেবল সুফিবাদের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাই আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন তা ঠিক নয়, তিনি একে একটি যথার্থ মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছিলেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আল-গাযালির দর্শন ছিল প্রজ্ঞা ও বুদ্ধির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। আর এ কারণেই তার
নাম বিশ্ব ইতিহাসে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের ন্যায়। তিনি সুফিবাদকে অনুশীলনের বিষয়বস্তু হিসেবে পরিণত করেছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি ভণ্ড সুফি হতে সকলকে সতর্ক করেছেন। আর

তাই সুফিবাদে তার অবদান অনস্বীকার্য।