অথবা, ইবনে সিনা যুক্তিবিদ্যা ও মনোবিদ্যা সম্পর্কে কী বলেন?
অথবা, সংক্ষেপে ইবনে সিনার যুক্তিবিদ্যা ও মনোবিদ্যা সম্পর্কীত আলোচনা তুলে ধর।
অথবা, ইবনে সিনার যুক্তিবিদ্যা ও মনোবিদ্যা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা : মুসলিম জাহানের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ ছিলেন ইবনে সিনা। তিনি তাঁর মনের গভীরতা, চিন্তাশক্তি ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির জন্য বিশ্বের সুধী সমাজে বিশেষভাবে সুপরিচিত। তিনি এরিস্টটলের দর্শনের একজন সফল ভাষ্যকার। গ্রিক দর্শন বিশেষ করে এরিস্টটলের দর্শন অধ্যয়ন ও অনুশীলনে তিনি ছিলেন ফারাবির চেয়ে অনেক বেশি সংঘবদ্ধ ও প্রাঞ্জল ।
ইবনে সিনার যুক্তিবিদ্যা : ইবনে সিনার যুক্তিবিদ্যা আলোচনা করলে দেখা যায় যে, তিনি আল ফারাবি দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত । দার্শনিক হিসেবে তিনি সত্যানুসন্ধানী। তাঁর মতে, দার্শনিক অনুসন্ধানের শুরু হবে যুক্তিবিদ্যা দিয়ে। তাঁর মতে, যুক্তিবিদ্যা হলো চিন্তামূলক শিল্প। ‘আল নাযাত’ শিরোনামে তাঁর রচনায় আমরা যুক্তিবিদ্যা সম্পর্কে আলোচনার সাক্ষাৎ পাই। এছাড়া ‘আর ইশারাত’ নামক অন্য একটি গ্রন্থে উল্লেখযোগ্যভাবে যুক্তিবিদ্যার আলোচনা পরিলক্ষিত হয়। যুক্তিবিদ্যা আলোচনা করে চিন্তার আকার নিয়ে। যুক্তিবিদ্যার আরেকটি অন্যতম কাজ হলো সংজ্ঞা নিরূপণ। তাঁর মতে, সংজ্ঞা সব সুষ্ঠু চিন্তার ভিত্তিস্বরূপ। তিনি এরিস্টটলের মত প্রতিটি বচনের দুটি ভাগ যথা : উদ্দেশ্য ও বিধেয়র কথা বলেছেন। তিনি সহানুমানের কথা বলেছেন। তাঁর মতে, সহানুমান হলো এমন একটি পদ্ধতি যা সত্যের ভিত্তিতে তৃতীয় কোন সত্যকে অনুমান করা হয়।
ইবনে সিনার মনোবিদ্যা : ইবনে সিনা দেহ ও আত্মার দ্বৈতবাদের কথা বলেছেন। আত্মা স্বতন্ত্র এবং এটি দেহ হতে সম্পূর্ণ পৃথক সত্তা। আকস্মিকভাবে আত্মা মানবদেহের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। আর তাই এটি দেহের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়। প্রতিটি আত্মা বিশ্বাত্মা হতে এসেছে। আত্মা একটি বিশেষ বা স্বতন্ত্র দ্রব্য। আত্মাকে ইবনে সিনা তিন ভাগে ভাগ
করেছেন। যথা : ১. উদ্ভিদ আত্মা ২. জীবাত্মা ও ৩. মানবাত্মা, উদ্ভিদ আত্মার তিনটি বৃত্তি হলো বর্ধন শক্তি, বিকাশ শক্তি ও পুনরুৎপাদন শক্তি । জীবাত্মার রয়েছে প্রধানত দুটি বৃত্তি। প্রথমটি হলো সঞ্চালন শক্তি। এর আরো দুটি দিক ক্ষুন্নিবৃত্তি ও ক্রিয়াকর্ম রয়েছে। দ্বিতীয় হলো প্রত্যক্ষণ শক্তি, যার বহিঃইন্দ্রিয় হলো দর্শন, শ্রবণ, স্পর্শ, স্বাদ, ঘ্রাণ। আর আন্তঃ
ইন্দ্রিয়গুলো হলো সাধারণ বুদ্ধি; কল্পনা, চিন্তামূলক শক্তি ও স্মৃতি। ইবনে সিনা তৃতীয় যে আত্মার কথা বলেছেন-তা হলো মানবাত্মা। মানবত্মার দুটি দিক রয়েছে। যথা : প্রথমটি হলো বিশুদ্ধ বুদ্ধি, যা মূর্ত চিন্তা করে, আর দ্বিতীয়টি হলো ব্যবহারিক বুদ্ধি; যা দৈহিক মানদন্ড সম্পর্কে আলোচনা করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইবনে সিনা ছিলেন একাধারে দার্শনিক, চিকিৎসাবিদ ও কবি। তাঁর জীবন ছিল বৈচিত্র্যময় ঘটনাবলির সমষ্টি। অল্প বয়সে তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যুৎপত্তিমূলক জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি যুক্তিবিদ্যা ও মনোবিদ্যারও অসাধারণ পান্ডিত্য অর্জন করেন। তাই মুসলিম দর্শনে তার অবদানকে অস্বীকার করা যায় না।