আল কিন্দির পরিচয় দাও।

অথবা, আল কিন্দি কে?
অথবা, ‘আল কিন্দির সংক্ষিপ্ত জীবনী লেখ।
অথবা, আল কিন্দির সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, মুসলিম দর্শনে আল কিন্দি কে ছিলেন?
উত্তর৷ ভূমিকা :
মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে যে কয়েকজন খ্যাতনামা দার্শনিক অসামান্য অবদান রেখে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন আল কিন্দি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি প্রখর মেধা ও চিন্তাশক্তির অধিকারী ছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই আরবদের মধ্যে প্রথাগত দর্শন চর্চার সূত্রপাত হয়। মুসলিম দর্শনের সমৃদ্ধি অর্জনে তাঁর চিন্তাভাবনা মূলভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে।
আল কিন্দির পরিচয় : আল কিন্দির পুরো নাম আবু ইউসুফ বিন ইসহাক আল কিন্দি। ল্যাটিন ভাষায় তিনি “Alchendies” নামে পরিচিত। তিনি ৮১৩ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ আরবের কুফা নগরীতে কিন্দা গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মস্থানের নাম অনুসারে তিনি আল কিন্দি নামে পরিচিত। তাঁর পিতা ইসহাক ইবনে আল সাহাব আব্বাসীয় খলিফা আল মাহাদী ও হারুন-অর-রশীদের অধীনে কুফার শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। আল কিন্দি তাঁর জন্মস্থান কুফাতেই প্রাথমিক শিক্ষার্জন করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথমে বসরা এবং তার পরে বাগদাদে গমন করেন। সমগ্র শিক্ষাজীবনে তিনি কুরআন, গণিত, ফিকাহ ও কালাম শাস্ত্র, বিজ্ঞান ও দর্শন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। তিনি গ্রিক ও সিরীয় ভাষায় যথেষ্ট পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। পরিণত বয়সে তাঁর পাণ্ডিত্যের খ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আব্বাসীয় খলিফা আল মামুন, আল মুতাসিম ও আল ওয়াসিকের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন এবং একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর জীবনীকারগণদের মতে, তিনি অধিবিদ্যা, ধর্মতত্ত্ব, সংগীত, জ্যোতির্বিদ্যা, জ্যামিতি, চিকিৎসাবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান এবং আরো অনেক বিষয়ে মৌলিক গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচনা করেন। তাঁর সর্বমোট রচনা প্রায় ২৭০টি যার অধিকাংশ আজ বিলুপ্ত প্রায়। আল কিন্দি একাধারে দার্শনিক এবং বিভিন্ন ভাষা বিদ্যায় পারদর্শী মহাপণ্ডিত। দর্শন ও বিজ্ঞান অধ্যয়নে তিনি আরবীয় মুসলমানদের মধ্যে প্রথম হওয়ায় তাকে “আরব দার্শনিক” বলা হয়। তিনি শুধু মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেছেন তা নয়, গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ অনুবাদও করেছেন। এগুলোর মধ্যে এরিস্টটলের Metaphysics, Poetica, Hermenewtica, Analitica, Postariuwara, Sophistica Alenchi Categoris, Apology, টলেমির Geography, Almasesta প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাঁর মৌলিক রচনার মধ্যে “On the Intelect” এবং “On the Five Essences” সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধি অর্জন করেছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলাম ধর্মের আওতায় থেকে দর্শনের মৌলিক সমস্যা নিয়ে যেসব দার্শনিক আলোচনা করেছেন আল কিন্দি তাদের মধ্যে অন্যতম। মুসলিম দর্শনের বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ‘আল ফাইলাসুফাল আরব’ নামক দার্শনিক গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা। ৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে এ মহান চিন্ত
নায়ক পরলোকগমন করেন।