ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কে মুতাজিলাদের মতবাদ লেখ।

অথবা, মুতাজিলারা ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কে কী বলেন?
অথবা, ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে কিনা এ বিষয়ে মুতাজিলাদের বক্তব্য সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, মুতাজিলাদের মতে ইচ্ছার স্বাধীনতা কতটুকু?
অথবা, মুতাজিলা সম্প্রদায়ের মতে ইচ্ছার স্বাধীনতা কেমন?
উত্তর ভূমিকা :
মুসলিম দর্শনের প্রথম ধর্মতাত্ত্বিক সম্প্রদায় হলো মুতাজিলা সম্প্রদায়। তারা ধর্মের সঙ্গে সঙ্গে দর্শন নিয়েও আলোচনা করেন। তারা ইসলামে স্কলাস্টিসিজমের প্রবর্তক। তাদের মতে, প্রত্যাদেশ নির্ভর সবকিছুর নিষ্পত্তি হতে হবে তাত্ত্বিক বুদ্ধির মাধ্যমে। মানুষ তার যুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে ঠিক বেঠিক, ন্যায় অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করতে সক্ষম হয়। আর এদিক থেকে ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে বলে মনে হয়। ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কে মুতাজিলাদের মত : মুসলিম দর্শনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, কাদারিয়ারা অদৃষ্ট বা পূর্বনির্ধারণবাদকে অস্বীকার করে।
মুতাজিলারাও পূর্বনির্ধারণবাদকে অস্বীকার করেন। তাদের মতে, মানুষের আছে ইচ্ছা ও কর্মের স্বাধীনতা। বস্তুত কাদারিয়া মতবাদের সূত্র ধরেই মুতাজিলারা ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কে তাদের সুচিন্তিত মতবাদ উপস্থাপন করেন। তাই ইচ্ছার স্বাধীনতাকে ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে মুতাজিলারা কালারিয়াদের উত্তরসূরি বলা চলে। মুতাজিলারা ইচ্ছার স্বাধীনতাকে স্বীকার করার মাধ্যমে আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতাকে রক্ষা করেন। তারা বলেছেন, কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ মহিমাময়, পূর্ণময় ও ন্যায়পরায়ণ। রক্ষণশীল মুসলমানরা ধারণা করেন যে, আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কিছু ঘটে না। তাই মানুষ নিয়তির উপর নির্ভরশীল মুতাজিলারা এমতকে খণ্ডন করে বলেছেন, মানুষ তার নিয়তির উপর নির্ভরশীল নয়। মানুষের আছে ইচ্ছার স্বাধীনতা, আর তাই সে ভালো ও মন্দ কাজকে নির্বাচন করে সে অনুযায়ী চলতে পারে। স্বাধীনতা বলতে বুঝায় নির্বাচনের ক্ষমতা ও অধিকারকে। মানুষ যে ইচ্ছার স্বাধীনতা ভোগ করে এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো সে কোন কাজটি করবে তা নির্বাচন করতে পারে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, মানুষকে এমন কোন কাজের জন্য শাস্তি বা পুরস্কৃত করা হয় না, যা তার সাধ্যের বাইরে। স্বাধীনতার ধারণা ছাড়া দায়িত্বের ধারণা অবান্তর।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, মুতাজিলারা বুদ্ধির মাধ্যমে ইসলামের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। আর এর ভিত্তিতে তারা বলেছেন, আমাদের ইচ্ছার স্বাধীনতা আমাদের কাজের কারণ। এর উপর ভিত্তি করে বলতে পারি যে, আমরা আমাদের ভালো কাজের জন্য পুরস্কৃত হবেন এবং মন্দ কাজের জন্য হবো তিরস্কৃত