মুতাজিলারা মানুষের স্বাধীনতা বলতে কী বুঝেন?

অথবা, মানুষের স্বাধীনতা বলতে কী বুঝ?
অথবা, মানুষের স্বাধীনতা সম্পর্কে মুতাজিলাদের মতবাদ কী?
অথবা, মুতাজিলারা মানুষের স্বাধীনতা সম্পর্কে কী বলেন?
অথবা, মুতাজিলাদের মতে মানুষের স্বাধীনতা কিরূপ?
উত্তর৷ ভূমিকা :
মুসলিম দর্শন গ্রিক দর্শন দ্বারা অনেকটা প্রভাবিত হয়েছে। আর গ্রিক দর্শনের প্রভাবে মুসলিম দর্শনে যেসব সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটেছে তাদের মধ্যে মুতাজিলা সম্প্রদায় অন্যতম। মুতাজিলা সম্প্রদায় ছিল খারিজী, মুরজিয়া ও কাদিরিয়া সম্প্রদায়ের পরবর্তী সম্প্রদায়। এ সম্প্রদায় সমকালীন যুক্তিবাদী ভাবধারাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত
করে। মুসলিম দর্শনের ইতিহাসে এ সম্প্রদায় একটি সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিবাদী সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত।
মানুষের স্বাধীনতা : মুতাজিলারা নিজেদেরকে আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতার ধারক বলে পরিচয় দেয়, আর আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতাকে প্রমাণের জন্য তারা ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করেন। মুতাজিলারা ইচ্ছার স্বাধীনতা সম্পর্কে মধ্যপন্থা অবলম্বন করেন। তারা কাদারিয়াদের মতবাদকে সমর্থন করে তাদের চিন্তাধারার বিকাশ ঘটলেও জাবারিয়াদের মতকে পুরোপুরি সমর্থন করেন না। তারা বলেছেন, আমাদের ইচ্ছার স্বাধীনতা আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে এ স্বাধীনতা নিরংকুশ নয়। আবার আমরা পূর্ব নির্ধারিত অদৃষ্টের দ্বারা পরিচালিত হই না। তাদের এ মধ্যবর্তী অবস্থান সৈয়দ আব্দুল হাই তাঁর ‘Muslim Philosphy’ গ্রন্থে সুন্দরভাবে ফুটে তুলেছেন। তাঁর মতে, জীবন, মৃত্যু, স্বাস্থ্যব্যাধি ও অন্যান্য বহিঃস্থ উত্থানপতন আল্লাহর দেয়া শক্তি বা কদর থেকে আসে। আর এ ব্যাপারে মানুষকে দায়ী করা চলে না। আর এজন্য সে শাস্তিও পাবে না। মানুষ এ জগতে স্বাধীন হলেও পরজগতে স্বাধীন নয়। তাঁদের মতে, মানুষের অভ্যন্তরীণ ইচ্ছাশক্তি স্বাধীন হলেও তার বহিঃস্থ ক্রিয়াবলি স্বাধীন নয়। মানুষের কাজ আল্লাহর অনাদি শক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, বরং স্বয়ং আল্লাহ্ তাঁর ভালোত্বের দ্বারা নিরূপিত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মুতাজিলারা বলেছেন, আমাদের ইচ্ছার স্বাধীনতা আমাদের কাজের কারণ। আর এর উপর ভিত্তি করে বলতে পারি যে, আমরা আমাদের ভাল কাজের জন্য পুরস্কার পাব, আর মন্দ কাজের জন্য শাস্তি পাব। মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতাকে স্বীকার করে তারা আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠা করেছেন। সুতরাং মানুষের ইচ্ছার.স্বাধীনতাকে স্বীকার করতেই হয়।