উপনিষদে মায়াকে কীভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে?

অথবা, উপনিষদে মায়া সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
অথবা, উপনিষদীয় মায়াবাদ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, মায়া সম্পর্কে উপনিষদীয় ব্যাখ্যা কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
পুরাকালে ঋষিগণ জীবনের প্রকৃত অর্থ নির্ধারণে উৎসুক হয়ে অরণ্যে বসে ধ্যানের মাধ্যমে যেসব সত্যগুলো উপলব্ধি করেন তাই উপনিষদে স্থান পেয়েছে। উপনিষদের বাণী চিরন্তন এবং এর আবেদন শাশ্বত। উপনিষদগুলো একাধারে গভীর ধর্মশাস্ত্র ও আধ্যাত্মিক তত্ত্বকথা। এতে অতলস্পর্শী সব আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার বর্ণনা আছে। সত্যের মর্ম উদ্ঘাটন করেছে উপনিষদের সব দার্শনিক তত্ত্ব। নিম্নে উপনিষদ অনুসারে মায়া ব্যাখ্যা করা হলো :
উপনিষদের মায়া : উপনিষদে অদ্বৈত ব্ৰহ্ম-আত্মার দুই ধরনের কথা পাওয়া যায়। একটি হলো অদ্বৈত ব্রহ্ম-আত্মা, যেখানে অদ্বৈত ব্রহ্ম-আত্মা বিশ্বের সবকিছুর মধ্যে পরিব্যাপ্ত এবং অপরটি হলো জগতের সবকিছুই আসলে মায়া। উপনিষদে বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে মায়ার অর্থ বিভিন্নভাবে পরিলক্ষিত হয়।
১. প্রপঞ্চরূপে মায়া : শ্বেতাশ্বর উপনিষদে মায়াকে প্রপঞ্চ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। শঙ্করের মতে, জগৎ হচ্ছে হাসিকান্না, সুখদুঃখের সমষ্টি। অধিকাংশ পণ্ডিত ব্যক্তি শঙ্করের এ ব্যাখ্যাকে গ্রহণ করেন এবং মায়াকে তারা জাগতিক বিভ্রান্ত বলে উল্লেখ করেন।
২. ভ্রমরূপে মায়া : মৈত্রী উপনিষদে বলা হয়েছে মানুষের দেহ হচ্ছে পঞ্চভূতের সমষ্টি। স্কুল ও ক্ষয়শীল দেহ এ দেহকে পরিচালিত করে মন বা আত্মা। আবার এ দেহ মায়ার কারণে জগতের বিভিন্ন জিনিসের মোহে পড়ে মোহান্ধ হয়। এভাবে মায়ার কারণে দেহ বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। একজন অভিনেতা যেমন বিভিন্ন পোশাক বদলায় ঠিক দেহটা হচ্ছে
সেই রকম, যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জিনিসের প্রতি আসক্ত হয় এবং পূর্বেরটা ত্যাগ করে। মায়ার কারণে আবদ্ধ হয়ে দেই মনকে ভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। এখানে মায়াকে বলা হয়ে অধ্যংস বা ভ্রান্তি (‘Illusion’)।
৩. রহস্যরূপে মায়া : উপনিষদে মায়াকে একটা রহস্যময় শক্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এ শক্তির দ্বারাই এ বিশাল জগতের সৃষ্টি হয়েছে।
৪. প্রকৃতি হিসেবে মায়া : শ্বেতাশ্বর উপনিষদে মায়াকে প্রকৃতি হিসেবে বলা হয়েছে। উপনিষদে মায়াকে জগৎ সৃষ্টির প্রধান কারণ’ বলা হয়েছে। বিভিন্ন উপনিষদে মায়াকে ‘প্রকৃতি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যা ব্রহ্মের অতি মানবী ক্ষমতার বিভিন্ন আকার হিসেবে দেখানো হয়েছে। কোন অধ্যাস বা অবাস্তবতা হিসেবে নয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় দর্শনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে এ মায়া কথাটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। একইভাবে উপনিষদেও মায়াকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।