স্বপ্ন জগৎ ও জাগ্রত জগৎ সম্পর্কে শঙ্করের মত সংক্ষেপে লেখ ।

অথবা, স্বপ্ন জগৎ ও জাগ্রত জগৎ সম্পর্কে শঙ্করাচার্যের মত সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
অথবা, স্বপ্ন জগৎ ও জাগ্রত জগৎ সম্পর্কে শঙ্করাচার্যের অভিমত কী?
অথবা, শঙ্করাচার্য কীভাবে জাগ্রত জগৎ ও স্বপ্ন জগতের ব্যাখ্যা করেন?
উত্তর৷ ভূমিকা :
মহর্ষি বাদরায়ন (আনু. ৫০০ খ্রি. পূ.) প্রণীত বেদান্তসূত্রে (৫৫৫টি সূত্র) ব্রহ্মতত্ত্ব প্রতিপাদিত হয়েছে বলে একে ব্রহ্মসূত্র বলে। আবার জীবের স্বরূপ বর্ণিত হওয়ায় একে শারীরিকসূত্রও বলা হয়। ব্রহ্মসূত্রের সাতটি ভাষ্যের (শঙ্করের শঙ্কভাষ্য, রামানুজের শ্রীভাষ্য, বল্লভের অনুভাষ্য, মাঝের পূর্ণপ্রজ্ঞাভাষ্য, নিম্বার্কের বেদান্ত পারিজাতসৌরভ, ভাস্করের ব্রহ্মসূত্রভাষ্য এবং বলদেবের গোবিন্দভাষ্য) মধ্যে শঙ্করের শঙ্করভাষ্য এবং রামানুজের শ্রীভাষ্য অন্যতম। আর গৌড়বাদ হলেন শঙ্করের গুরুর গুরু।
নিম্নে প্রশ্নের আলোকে আমাদের আলোচ্য বিষয় আলোচনা করা হলো :
স্বপ্ন ও জাগ্রত জগৎ সম্বন্ধে শঙ্করের মতামত : স্বপ্ন ও জাগ্রত জগৎ সম্বন্ধে শঙ্করের মতামত নিম্নে আলোচনা করা হলো :
প্রথমত, স্বপ্নের বিষয়বস্তু মিথ্যা প্রমাণিত হয় জাগ্রত অবস্থায়। যে কোন স্বপ্ন মিথ্যা প্রমাণিত হয় জাগ্রত অবস্থার দ্বারা। কিন্তু জাগ্রত অবস্থা স্বপ্নের দ্বারা মিথ্যা প্রমাণিত হয় না। কারণ যখন আমরা স্বপ্ন দেখি তখন ঠিকই জাগ্রত জগৎ বিদ্যমান থাকে । সুতরাং স্বপ্ন ও জাগ্রত জগৎ এক নয়।
দ্বিতীয়ত, স্বপ্ন হলো ব্যক্তিগত ও ব্যক্তিনির্ভর। কিন্তু জাগ্রত জগৎ হলো সমষ্টিগত। জাগ্রত জগতের অভিজ্ঞতা ব্যক্তিগত নয়। স্বপ্নের বিষয়বস্তু স্বপ্ন দেখার সময় বিদ্যমান থাকে না। কিন্তু বহির্জগতের বস্তু সবসময় বিদ্যমান থাকে। বাস্তব জগৎ সময়ের দ্বারা বিচ্ছিন্ন নয়।
তৃতীয়ত, স্বপ্নের ঘটনাগুলো স্মৃতির মধ্যে গেঁথে থাকে। স্বপ্ন মনে করতে হয়, স্মৃতি অনেক সময় মনে থাকতে পারে আবার নাও পারে। পক্ষান্তরে, বাস্তব জগৎ স্মৃতিনির্ভর নয়। প্রয়োজনে যাচাই করা যায়।
চতুর্থত, স্বপ্ন মস্তিষ্কের একটা অংশের ব্যাপার মাত্র। জাগ্রত অবস্থা হলো পুরো মস্তিষ্কের ব্যাপার। স্বপ্নের সীমা দেহের একটি সীমিত অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। আবার জাগ্রত অবস্থা বহির্জগতের বিরাট অংশ জুড়ে থাকে। স্বপ্নের ঘটনা অব্যক্ত, অস্ফুট, বাইরের লোক তা বুঝে না। পক্ষান্তরে, জাগ্রত জগৎ জাগ্রত অবস্থার ঘটনা প্রকাশমান।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, স্বপ্ন ও জাগ্রত জগৎ সম্বন্ধে গৌড়বাদ ও শঙ্করের মতের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। গৌড়বাদ স্বপ্ন ও জাগ্রত জগৎকে একই অর্থে দেখেছেন এবং এ দুটিকে অভিন্ন বলে মতো প্রকাশ করেন। স্বপ্ন ও জাগ্রত জগৎ সম্বন্ধে তিনি কোনরূপ পার্থক্য করেন নি। পক্ষান্তরে, শঙ্কর স্বপ্ন ও জাগ্রত জগৎকে এক করে দেখেন নি। তিনি কেবলমাত্র ব্রহ্ম, জাগ্রত জগৎ ও স্বপ্নের মধ্যে একটা তুলনা করেছেন।