অথবা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদানগুলো আলোচনা কর।
অথবা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদানসমূহ বিশ্লেষণ কর।
অথবা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মৌলিক ধারণাগুলো ব্যাখ্যা কর।
উত্তর ভূমিকা : আজকের এ পৃথিবীতে প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে । বিজ্ঞানীগণ এ বিচ্ছিন্ন ঘটনাসমূহকে অবরোহ ও আরোহের ভিত্তিতে সাধারণ ঘটনায় পরিণত করেন। একটি ঘটনার পূর্বাপর বিশ্লেষণ ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াদির সাথে কার্যকারণ সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে একটি সাধারণ নিয়মে প্রতিষ্ঠিত করাই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির অন্যতম লক্ষ্য।বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি তার এ লক্ষ্যকে বাস্তবায়ন করার জন্য কতিপয় উপাদান নিয়ে কাজ করে ।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপাদান বা মৌলিক ধারণা : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যেসব উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. ঘটনা : ঘটনা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রথম ও প্রধান আলোচ্য বিষয়। ঘটনা বস্তুগত বা দৈহিক, মানসিক আবেগীয়, সামাজিক বা পরিবেশগত ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রের হতে পারে। একটি ঘটনা বিভিন্ন মানুষের কাছে তাদের নিজেদের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও বৈশিষ্ট্যের পার্থক্যের কারণে বিভিন্নভাবে প্রতিভাত হতে পারে।
২. ধারণা বা প্রত্যয় : ধারণা বা প্রত্যয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক উপাদান। Kenceth D. Bailey এর মতে, সাধারণ কথায় ধারণা হলো একটি মানসিক অনুভূতি বা প্রত্যক্ষণ। একে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা অসম্ভব। যেমন- মেধা, ভালো, পছন্দ ইত্যাদি। তবে ধারণাকে বস্তুজগতের যেসব উপাদানকে ইঙ্গিত করে তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার পর্যবেক্ষণযোগ্য। যেমন- জীবজন্ত, গাড়ি ইত্যাদি।
৩. অনুকল্প : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির একটি অন্যতম হাতিয়ার হলো অনুকল্প। একে অনুসন্ধান কাজের দিক নির্দেশক বলা হয়ে থাকে। অনুসন্ধান কাজে গবেষককে কি দেখতে হবে অনুকল্প তা বলে দেয়।
Good এবং Hall বলেছেন, “অনুকল্প হলো এমন একটি প্রস্তাবনা যার যথার্থতা নির্ধারণের জন্য পরীক্ষণাধীনে আনা হয়। আর এটি সাধারণ উপলব্ধির পক্ষে-বিপক্ষে উভয়দিকেই যেতে পারে।”বস্তুত, সমাধানের প্রয়োজনে বিজ্ঞানীর সামনে উপস্থিতি সমস্যার একটি প্রাথমিক বা অস্থায়ী সমাধানই হলো অনুকল্প। সুতরাং বলা যায় যে, অনুকল্প বা Hypothesis হচ্ছে দুটি প্রত্যয় যা ধারণার মধ্যকার সম্পর্ক সম্বন্ধে একটি বিবৃতি, যার সত্যাসত্য যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষাধীনে আনা হয়।
- অনুমান : বৈজ্ঞানিক দ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনুকল্প গঠন যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তেমনি সম্ভাব্য কিছু বিষয়কে অনুমান হিসেবে ধরে নেয়া অনুসন্ধান কাজের জন্য যথেষ্ট সহায়ক বলে বিবেচিত।
৫. তত্ত্ব : বিজ্ঞানের অস্তিত্ব যেমন তার অনুসৃত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপর নির্ভর করে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাফল্যও তেমনি তার উদ্ভাবিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের উপর নির্ভরশীল। তত্ত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত ও ধারণা প্রচলিত আছে। বর্তমানকালের সমাজ গবেষকগণ মনে করেন যে, নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর জড়োকৃত ঘটনার সমষ্টিই হলো বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ।
৬. চলক : সাধারণ কথায় যা পরিবর্তিত হয় তাই চলক। মূলত চলক এমক এক ধরনের গুণ, বৈশিষ্ট্য বা অবস্থা যা একই পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনা পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। চলকের মূল্যায়ন পরিবর্তনশীল।
B.F. Anderson এর মতে, “চলক হলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন গুণের সমাবেশ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উপরে উল্লিখিত উপাদানসমূহ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিদ্যমান । এ উপাদানসমূহের সমন্বয়ে গঠিত হয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি । সামাজিক গবেষণায় এ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। কেননা, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সামাজিক গবেষণার চালিকাশক্তি ও হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয় এবং গবেষণায় দিক নির্দেশনা প্রদান করে।