গৌড়পাদের দর্শন অনুসারে মায়াবাদ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

অথবা, গৌড়পাদের দর্শন অনুসারে মায়ার স্বরূপ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, গৌড়পাদের মতে মায়া কী?
অথবা, গৌড়পাদের মতে মায়ার স্বরূপ কী?
অথবা, গৌড়পাদের মতে মায়াবাদ এর ধারণাটি লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শনে মায়া কথাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ভারতীয় দর্শনে মায়া শব্দটির একক কোন অর্থ নিরূপণ করা সম্ভব হয় নি। মায়া শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। বেদে, উপনিষদে, ভগবদগীতা, ব্রহ্মসূত্রে, গৌড়বাদের দর্শনে, শঙ্করের দর্শনে মায়া কথাটির ধারণা পাওয়া যায়। নিম্নে মায়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
গৌড়বাদের দর্শনে মায়া : গৌড়বাদের দর্শনে মায়া কথাটির ব্যাখ্যা রয়েছে। তার দর্শন পর্যালোচনা করলে মায়া কথাটির নিম্নলিখিত অর্থ পাওয়া যায়।
বহুত্বের জগৎ হিসেবে মায়া : গৌড়বাদের মতে, অদ্বৈত সত্তাই একমাত্র সত্য। জগতের বহুত্ব হলো অবভাস। গৌড়বাদের মতে, অবভাসিক জগতের কোন অস্তিত্ব নেই। আর এ বহুত্ব ভরা জগতের সৃষ্টি হয় মায়ার কারণে।
ব্যক্তি সত্তা হিসেবে মায়া : গৌড়বাদের মতে, প্রত্যেক ব্যক্তির কতকগুলো নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যে সকল বৈশিষ্ট্যের কারণে এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তি থেকে পৃথক হয়ে থাকে। এ যে এক ব্যক্তির সঙ্গে অন্য ব্যক্তির পার্থক্য তার মূলে রয়েছে মায়া। অর্থাৎ গৌড়বাদের মতে মায়ার কারণেই এক ব্যক্তির সঙ্গে অন্য ব্যক্তির পার্থক্য হয়ে থাকে।
প্রাণরূপে মায়া : গৌড়বাদের মতে, প্রাণের দুটি দিক রয়েছে। যথা : ১. ব্যাপ্ত ও ২. অব্যাপ্ত। এ প্রাণ যখন অব্যাপ্ত রূপে থাকে তখন গৌড়বাদ তাকে মায়া বলেছেন।
সৃষ্টির নীতি হিসেবে মায়া : এ জগৎ ঈশ্বর সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু বেদান্ত দর্শন অনুযায়ী ঈশ্বর এ জগৎ সৃষ্টি করে নি। এ জগৎ মিথ্যা। এ মিথ্যা জগৎ মায়ার সৃষ্টি। আমাদের আত্মা কল্পনা করে বলে পৃথিবীকে ভ্রমাত্মক বলে মনে হয়। মায়ার কারণে অদ্বৈতসত্তা বিভিন্ন রূপ ধারণ করে, জগৎ হচ্ছে মনের একটি প্রতিধ্বনি। সুতরাং এ জগৎকে আমরা যেভাবে দেখি
তা হলো আমাদের মন ও মায়ার সৃষ্টি জগত, অবভাসের জগৎ। সত্যিকারের জগৎকে আমরা দেখি না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় দর্শনে মায়া কথাটির একক কোন অর্থ নেই। ভারতীয় দর্শনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে এ মায়া কথাটির ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।