ভগবদগীতা অনুসারে মায়াবাদ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

অথবা, ভগবদগীতা অনুসারে মায়ার স্বরূপ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, মায়া সম্পর্কে গীতায় কী বলা হয়েছে?
অথবা, গীতা অনুসারে মায়ার স্বরূপ কী?
অথবা, মায়ার প্রকৃতি সম্পর্কে গীতায় কী বলা হয়েছে?
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শনে মায়া কথাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। ভারতীয় দর্শনে মায়া শব্দটির একক কোন অর্থ নিরূপণ করা সম্ভব হয় নি। মায়া শব্দটি বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। বেদে, উপনিষদে, ভগবদগীতা, ব্রহ্মসূত্রে, গৌড়বাদের দর্শনে, শঙ্করের দর্শনে মায়া কথাটির ধারণা পাওয়া যায়। নিম্নে মায়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
ভগবদগীতায় মায়া : ভগবদগীতায়ও মায়া শব্দটির সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু ব্যাপক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নি। তবুও ভগবদগীতায় মায়া কথাটি তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যথা :
ক. অতিপ্রাকৃত শক্তি হিসেবে মায়া : ভগবদগীতায় মায়াকে অতিপ্রাকৃত শক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে। গীতায়৷ শ্রীকৃষ্ণও বলেছেন, “যদিও আমি অক্ষয় তবুও আমি মায়া শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।” এখানে মায়া অর্থে ব্রহ্মের অস্বাভাবিক বা অতিপ্রাকৃত ক্ষমতাকে বুঝানো হয়েছে। গীতায় আরো বলা হয়েছে যে, ব্রহ্ম সকল জীবজন্তুর আত্মাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং তার মায়া শক্তি সকল জীব জন্তুর মধ্যে নিহিত রয়েছে। এখানেও মায়াকে অতিপ্রাকৃত শক্তি বা ক্ষমতা অর্থে বুঝানো হয়েছে।
খ. প্রকৃতি রূপে মায়া : গীতায় প্রকৃতিকে দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১: উচ্চতর প্রকৃতি- যার দ্বারা জগৎ চালিত হয়।
২. নিম্নতর প্রকৃতি- এখানে প্রকৃতি অর্থে মায়াকে বুঝানো হয়েছে। এ মায়ার কারণে ভ্রান্তিতে পরিণত হয়।
গ. ব্যক্তি আত্মার অজ্ঞতা হিসেবে মায়া : গীতায় মায়াকে ব্যক্তি আত্মার অজ্ঞতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পি.ভি. শাস্ত্রীর মতে, জগতে মানুষ যে সকল ভ্রান্তিতে পতিত হয় তার মূলে রয়েছে মায়া। কৃষ্ণের মতে, মায়ার প্রভাবে মানুষ পশুর আচরণ করে এবং পার্থিব সুখশান্তিতে ডুবে থাকে এবং তারা আমার কথা ভুলে যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতীয় দর্শনে মায়া কথাটির একক কোন অর্থ নেই। ভারতীয় দর্শনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে এ মায়া কথাটির ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।