অথবা, বেদান্ত দর্শনের ভিত্তিগুলো সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা কর।
অথবা, বেদান্ত দর্শনের ভিত্তি সম্পর্কে লেখ।
অথবা, বেদান্ত দর্শনের ভিত্তির শ্রেণিবিভাগ দেখাও।
উত্তর ৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনে আস্তিক সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে বেদান্ত দর্শন অত্যন্ত প্রাচীন। মহর্ষি বাদরায়ন বেদান্ত দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। প্রাচীন বৈদিক দর্শনের অধ্যাত্মবাদী চিন্তাধারা বেদান্ত দর্শনে পূর্ণতা লাভের প্রয়াস পায়। প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে বেদান্ত দর্শনে ভারতীয় দর্শনের সমগ্র ঐতিহ্যটির উপস্থাপনা করে। ব্রহ্মসূত্র এবং এটির ভাষ্যসমূহে ভারতীয় প্রায় সমস্ত সম্প্রদায়ের দার্শনিক মতামত উল্লেখ করা হয়।
বেদান্ত দর্শনের ভিত্তি : প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে বেদের সূত্রপাত হয়। সংস্কৃত ভাষায় রচিত বেদান্ত দর্শন ভারতীয় দর্শনের একটি প্রাচীন শাখা। উপনিষদকে বেদান্তের একমাত্র ভিত্তি বলে মনে করা হলেও উপনিষদ ছাড়া ভগবদগীতা এবং ব্রহ্মসূত্র বেদান্ত দর্শনের ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ পাওয়া যায় । অর্থাৎ বেদান্ত দর্শনের ভিত্তি হলো তিনটি। যথা :
১. উপনিষদ; ২. ভগবদগীতা ও ৩. ভাষ্যসহ ব্রহ্মসূত্র। এ তিনটিকে একত্রে প্রস্থানত্রয় বলা হয়। উপনিষদ বাক্য থেকে বেদান্তের অর্থ শ্রুত হয় বলে উপনিষদকে বেদান্তের শ্রুতি প্রস্থান বলা হয়। উপনিষদের শ্রুত অর্থ ব্রহ্মসূত্র ও তার ভাষ্য টিকা যুক্তিতর্কের সাহায্যে বিচার করা হয় বলে ব্রহ্মসূত্রকে বেদান্তের তর্ক প্রস্থান বলা হয়। শীভগবদগীতা বার বার পাঠে স্মৃতিতে জাগরিত হয়ে চিত্তে স্থিরভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এজন্য শীভগবদগীতাকে স্মৃতি প্রস্থান বলা হয়। এ তিনটি প্রস্থানত্রয়ই বেদান্তের ভিত্তি।
উপনিষদ : ভারতীয় দর্শনে যতগুলো শাস্ত্র আছে তার মধ্যে উপনিষদ অন্যতম। উপনিষদ শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায়-উপ+নিষদ। উপ শব্দের অর্থ হলো সমীপে। সুতরাং উপনিষদ শব্দটির অর্থ হলো গুরুর সমীপে উপবিষ্ট হয়ে শিষ্যের শাস্ত্রজ্ঞান লাভ করা। অন্যভাবে যা মানুষকে ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের নিকট নিয়ে যায় তাই উপনিষদ। উপনিষদে বেদের
গূঢ় তাৎপর্য নিহিত।
ভগবদ্গীতা : ভগবদ্গীতা ভারতীয় দর্শনে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এটি মহাভারতের বিষ্ণু পর্বের অন্তর্গত একটি অধ্যায়। ভগবদগীতায় শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের কথোপকথন। ভগবদগীতা আবার তিনভাগে বিভক্ত। যথা : (ক) কর্মযোগ, (খ) জ্ঞান যোগ এবং (গ) ভক্তি যোগ।
ব্রহ্মসূত্র : ব্রহ্ম সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষণই হচ্ছে ব্রহ্মসূত্র। যেসব সূত্র ব্রহ্মের সাথে সম্পর্কিত তার সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে ব্রহ্মসূত্র। বিভিন্ন উপনিষদের মধ্যে ঐক্য সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠার জন্য মহর্ষি বাদরায়ন প্রণীত ব্রহ্মসূত্রে মোট ৫৫৫টি সূত্র রযেছে। এগুলো চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি, বেদান্ত দর্শনের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশের ইতিহাস অত্যন্ত সুদীর্ঘ ও প্রাচীন । এ বেদান্ত দর্শনেই প্রাচীন বৈদিক দর্শনের অধ্যাত্মবাদী ভাবধারা পূর্ণতা লাভ করেছে। বেদান্ত দর্শন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমগ্র ভারতীয় দর্শনের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে।