অথবা, আত্মা সম্পর্কে মীমাংসকদের মত সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, আত্মা সম্পর্কে মীমাংসা মতবাদ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, মীমাংসকদের মতে আত্মা কী?
উত্তর৷ ভূমিকা : ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন আস্তিক স্কুলসমূহের মধ্যে মীমাংসা দর্শন খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। মহর্ষি জৈমিনি মীমাংসা দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠাতার নামানুসারে মীমাংসা দর্শনের আর এক নাম জৈমিনি দর্শন’। মীমাংসা দর্শন বেদের পূর্বকাণ্ড বা কর্মকাণ্ডের উপর প্রতিষ্ঠিত। আলোচনার সুবিধার্থে মীমাংসা দর্শনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা : ১. জ্ঞান (Knowledge) ২. তত্ত্ব (Metaphysics) এবং ৩. নীতি ও ধর্ম (Ethics and Religion)। প্রমাণ হলো যথার্থ জ্ঞান লাভের প্রণালি বা উপায়। মীমাংসকগণ তাঁদের তত্ত্ববিদ্যার আলোচনায় পদার্থ, জগৎ, শক্তি ও অপূর্ব এবং আত্মা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। নিম্নে মীমাংসা দর্শনের তত্ত্ববিদ্যার আত্মা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
আত্মা : আত্মা সম্পর্কে মীমাংসকদের ধারণা ন্যায় বৈশেষিক ধারণারই অনুরূপ। ন্যায় বৈশেষিকদের মতো মীমাংসকগণও মনে করেন যে, আত্মা নিত্য ও সর্বব্যাপী দ্রব্য। আত্মা দেহ, মন ও ইন্দ্রিয় হতে ভিন্ন। দেহের বিনাশ আছে, কিন্তু আত্মার বিনাশ নেই। দেহ বিনষ্ট হলে দেহস্থিত আত্মা নিজ কর্মফল ভোগের জন্য দেহান্তরে গমন করে। দেহ বিনষ্ট
হওয়ার সাথে সাথে যদি আত্মাও বিনষ্ট হয় তবে স্বর্গ লাভের জন্য বৈদিক যাগযজ্ঞাদির অনুষ্ঠান অর্থহীন হয়। তাই মীমাংসকরা বলেন, আত্মা অবিনাশী। মীমাংসকদের মতে, আত্মা নিষ্ক্রিয় এবং স্বরূপগত নির্গুণ। চৈতন্য আত্মার স্বরূপগত গুণ নয়, আগন্তুক গুণ । আত্মার সঙ্গে মনের, মনের সঙ্গে ইন্দ্রিয়ের এবং ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে যখন বিষয়বস্তুর সংযোগ ঘটে, তখন আত্মায় চৈতন্যরূপ গুণের উদ্ভব হয়। সুষুপ্তি (গভীর নিদ্রা) এবং মুক্ত অবস্থায় যেহেতু মন ও ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আত্মার সঙ্গে
বিষয়বস্তুর সংযোগ হয় না সেহেতু আত্মায় চৈতন্যরূপ গুণ থাকে না। মীমাংসকদের মতে, আত্মা এক নয় এবং ভিন্ন ভিন্ন দেহে ভিন্ন ভিন্ন আত্মা বিরাজ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মীমাংসকরা তাঁদের তত্ত্ববিদ্যার আলোচনায় আত্মা সম্পর্কে খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোচনা করেছেন। তাইতো মীমাংসা দর্শনের তত্ত্ববিদ্যার আলোচনায় আত্মা সম্পর্কীয় আলোচনা ভারতীয় দর্শনে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে।