অথবা, জগতের অনিত্যতা সম্পর্কে বৈশেষিকদের ধারণা কী?
অথবা, অনিত্য জগৎ সম্পর্কে বৈশেষিকদের অভিমত কী?
অথবা, বৈশেষিকদের মতে জগতের অনিত্যের ধারণা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বৈশেষিক দর্শনের মূল গ্রন্থের নাম হলো বৈশেষিক সূত্র। বৈশেষিক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি কণাদ। বৈশেষিকগণ পরমাণুবাদের সাহায্যে জগতের সৃষ্টি ও লয় ব্যাখ্যা করেছেন। জগতের প্রতি ভারতীয় দার্শনিকদের এক আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। বৈশেষিক পরমাণুবাদেও তার কোন ব্যতিক্রম ঘটে নি। বৈশেষিকদের মতে
জড় জগতের যাবতীয় যৌগিক বস্তু ক্ষিতি, অপ, তেজ ও মরুৎ পরমাণুর সংযোগে উৎপন্ন হয় এবং এই পরমাণুগুলোর বিযুক্তিতে বিনষ্ট হয়।
জগৎ অনিত্য : বৈশেষিক মতে, সৃষ্টি জগৎ ব্রহ্মা কর্তৃক অনেক দিন পালিত হলেও চিরস্থায়ী নয়। কারণ, জগৎnঅনিত্য এবং অনিত্য বস্তুর ধ্বংস অনিবার্য। কালক্রমে অন্যান্য আত্মার মতো বিশ্ব আত্মা বা ব্রহ্মা যখন শরীর ত্যাগ করেন তখনই পরমেশ্বরের মধ্যে জগৎ ধ্বংস করার ইচ্ছা জাগে। এর সঙ্গে সঙ্গেই জীবাত্মার সৃষ্টি-অভিমুখী অদৃষ্ট ধ্বংসাভিমুখী অদৃষ্টের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে সৃষ্টিঅভিমুখী অদৃষ্টের শক্তি থাকে না এবং ধ্বংসাভিমুখী অদৃষ্ট সক্রিয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবদেহ ও ইন্দ্রিয়ের উপাদান পরমাণুর মধ্যে চঞ্চলতা দেখা দেয়। এই চঞ্চলতার জন্য দেহ ও ইন্দ্রিয়ের পরমাণুগুলো বিভক্ত হয়ে পড়ে। ফলে দেহ ও ইন্দ্রিয় বিনষ্ট হয়। এভাবে যথাক্রমে ক্ষিতি, অপ, তেজ ও বায়ু প্রভৃতির পরমাণুগুলো বিচ্ছিন্ন হয় এবং তার ফলে মহাভূতগুলো বিনষ্ট হয়। সমস্ত দেহ, ইন্দ্রিয় ও চতুর্বিধ মহাভূত বিনষ্ট হওয়ার পর কেবল ক্ষিতি, তেজ ও মরুৎ পরমাণু, আকাশ, দিক (দেশ), কাল, মন ও সংস্কারযুক্ত আত্মার মতো নিত্য গুলো অবস্থান করে। বৈশেষিক মতে, সৃষ্টির বেলায় প্রথমে বায়ু, তারপর অপ, তারপর ক্ষিতি, তারপর তেজ মহাভূতের আবির্ভাব হয়। আর ধ্বংসের বেলায় প্রথমে ক্ষিতি, তারপর অপ, তারপর তেজ এবং তারপর বায়ু নষ্ট হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বৈশেষিকদের পদার্থ সম্পর্কীয় মতবাদে জগতের অনিত্য সম্পর্কে যে আলোচনা করা হয়েছে তা দর্শনের আলোচনার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।