বৈশেষিক মতে সমবায় কী?

অথবা, বৈশেষিক মতে সমবায় বলতে কী বুঝ?
অথবা, বৈশেষিক মতে সমবায় কাকে বলে?
অথবা, বৈশেষিক মতে সমবায় বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর৷ ভূমিকা
: বৈশেষিক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি কণাদ। মহর্ষি কণাদের প্রকৃত নাম উলুক । কণাদ ও উলুক-এই দুই নাম অনুসারে তাঁর প্রণীত দর্শন ‘কণাদ দর্শন’ বা ‘উলুক্য দর্শন’ নামে পরিচিত। এই দর্শনে ‘বিশেষ’ নামে একটি পদার্থ স্বীকার করায় এর নামবৈশেষিক দর্শন হয়েছে। বৈশেষিক মতে, পদার্থ সাত প্রকারের এবং সব পদার্থই জ্ঞানের বিষয় বা প্রমেয়। বৈশেষিক সাত প্রকারের পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথা : ক. ভাবপদার্থ এবং খ. অভাবপদার্থ। সকল অস্তিত্বশীল বস্তু ভাবপদার্থ। যেমন- দ্রব্য, গুণ ইত্যাদি। বৈশেষিক স্বীকৃত সাতটি পদার্থের
দ্রব্য, কর্ম, সামান্য, বিশেষ এবং সমবায় এ ছয়টি ভাবপদার্থ ।
সমবায় (Inherence) : দুটি পদার্থের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য ও নিত্য সম্পর্কের নাম সমবায়। যেমন- সুতার সাথে কাপড়ের সম্পর্ক। সম্বন্ধযুক্ত পদার্থ দুটির একটি অপরটিতে অবস্থান করে। যেমন- কাপড় সুতার মধ্যেই অবস্থান করে। ন্যায় বৈশেষিক মতে, সম্পর্ক দুই রকমের। যথা: সংযোগ ও সমবায়। যে দুটি বস্তু পৃথকভাবে থাকতে পারে তাদের মধ্যে যে অনিত্য সম্বন্ধ ডাকেই সংযোগ সম্বন্ধ বলে। যেমন-একটি কাক উড়ে এসে একটি দালানের উপর বসল। ফলে কাক ও দালানের মধ্যে একটি সম্বন্ধ গড়ে উঠল। এই সম্বন্ধই সংযোগ সম্বন্ধ। সংযোগ নিত্য বা স্থায়ী সম্পর্ক নয়,
যেহেতু সংযোগ সম্পর্কিত দুটি বস্তু আবার পৃথক হতে পারে। যেমন- দালান হতে কাকটি উড়ে যেতে পারে। কাজেই সংযোগ সাময়িক সম্পর্ক। সংযোগ সম্পর্ক কোন দ্রব্য নয়। এটি দ্রব্যের আগন্তুক গুণ মাত্র এবং সংযুক্ত দ্রব্যকে আশ্রয় করে অবস্থান করে। যতক্ষণ সংযোগ চলতে থাকে ততক্ষণ এই গুণও অবস্থান করে। তবে এই কথা মনে রাখতে হবে যে, সংযোগ সম্পর্কের উপর সংযুক্ত বস্তু দুটির সত্তা নির্ভর করে না, যেহেতু সংযোগ সম্পর্কের পূর্বেও বজ্র দুটির অস্তিত্ব ছিল। যেমন- কাক উড়ে
এসে দালানে বসবার পূর্বেও কাক এবং দালানের অস্তিত্ব ছিল। সমবায় সম্পর্ক সংযোগের মতো গুণ নয়। এটি গুণ হতে ভিন্ন একটি স্বতন্ত্র পদার্থ। সমবায় সম্পর্ক অবস্থান করে এমন দুটি বস্তুর মধ্যে যারা পৃথকভাবে অবস্থান করতে পারে না এবং যাদের একটি অন্যটির মধ্যে অবস্থান করে। যেমন- কাপড় ও সুতার সম্পর্ক হলো সমবায় সম্পর্ক। কাপড় ও সুতা পৃথকভাবে অবস্থান করতে পারে না এবং কাপড় সুতার মধ্যেই অবস্থান করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বৈশেষিকদের পদার্থ সম্পৰ্কীয় মতবাদে বিশেষ সম্পর্কে যে আলোচনা ও শ্রেণিবিভাগ করা হয়েছে তা দর্শনের আলোচনার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।