অথবা, অনুভব কত প্রকার ও কী কী?
অথবা, ন্যায়দর্শন অনুসারে যথার্থ অনুভবের প্রকারভেদ লেখ।
অথবা, অনুভবের শ্রেণিবিভাগ দেখাও ।
অথবা, নৈয়ায়িকদের মতে অনুভব কত প্রকার?
অথবা, নৈয়ায়িকদের মতে যথার্থ অনুভবের শ্রেণিবিভাগ দেখাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : ন্যায়দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। ন্যায়দর্শনের মূলভিত্তি হলো ‘ন্যায়সূত্র’ । নৈয়ায়িকদের মতে, স্মৃতি ভিন্ন জ্ঞানই অনুভব। তাঁদের মতে, অনুভব দুই প্রকার। যথা : ক. যথার্থ অনুভর এবং খ. অযথার্থ অনুভব।
ক. যথার্থ অনুভব : বিষয়টি যেমন অনুভবটি যদি তেমন হয় তাহলে তাকে যথার্থ অনুভব বলে। অর্থাৎ অনুভব যদি বিষয়টিকে তদ্ধর্মবিশিষ্টরূপেই প্রকাশিত করে তাহলে অনুভবের যথার্থ বলা হয়। যথার্থ অনুভবের বিষয় হলো বিশেষ্য, বিশেষণ ও সম্বন্ধ ৷ অন্নম ভট্টের মতে, যে অনুভবে ঘট বিশেষ্য, ঘটত্ব প্রকার হয় সেই ঘটানুভবই যথার্থ। নৈয়ায়িকদের মতে, যথার্থ অনুভব চার প্রকার। যথা : ১. প্রত্যক্ষ; ২. অনুমিতি; ৩. উপমিতি ও ৪. শাব্দবোধ। এ চারপ্রকার যথার্থ অনুভবকে প্রমা বলা হয়।
১. প্রত্যক্ষ : মহর্ষি গৌতমের মতে, প্রত্যক্ষ হলো বিষয় এবং ইন্দ্রিয়ের সন্নিকর্ষজনিত বিষয়ের নিশ্চিত এবং যথার্থ জ্ঞান। অর্থাৎ ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সন্নিকর্ষ থেকেই প্রত্যক্ষ জ্ঞানের উদ্ভব। যেমন- আমার সম্মুখস্থ টেবিলের সঙ্গে যখন আমার চক্ষুরূপ ইন্দ্রিয়ের সংযোগ ঘটে তখন টেবিল সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান হয় এবং আমি সুনিশ্চিত যে, যে বস্তুকে আমি প্রত্যক্ষ করছি তা একটি টেবিল।
২. অনুমিতি : যখন কোন জ্ঞাত বিষয়ের উপর নির্ভর করে এবং তার দ্বারা সমর্থিত হয়ে কোন অজ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা হয় তখন তাকে অনুমিতি বলে। অনুমিতি হলো পরোক্ষ জ্ঞান। যেমন- পর্বতটি বহ্নিমান, যেহেতু পর্বতটি ধূমবান এবং যেখানেই ধূম সেখানেই বহ্নি ।
৩. উপমিতি : অন্নম ভট্ট বলেন, ‘সংজ্ঞাসংজ্ঞিসম্বন্ধজ্ঞানম্ উপমিতিঃ’। সংজ্ঞা সংজ্ঞীর সম্বন্ধ জ্ঞানের নাম উপমিতি। পরিচিত কোন বস্তুর সঙ্গে অপরিচিত কোন বস্তুর সাদৃশ্য লক্ষ্য করে ঐ অপরিচিত বস্তুটি সম্পর্কে জ্ঞান লাভের যে পদ্ধতি তাকে বলা হয় উপমান এবং উপমানলব্ধ জ্ঞানকে বলা হয় উপমিতি।
৪. শব্দিবোধ : শব্দ হলো বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির বচন বা আপ্তবাক্য। আপ্ত ব্যক্তি হলে তিনি সত্য জানেন এবং সত্য বলেন। শব্দ বা আপ্ত বাক্য হতে যে জ্ঞান লাভ করা যায় তাই শব্দ জ্ঞান। অন্নম ভট্ট বলেন, ‘আপ্তবাক্যং শব্দঃ’ । আপ্তব্যক্তির বাক্যই শব্দ প্রমাণ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ন্যায়দর্শনের অনুমান সম্পর্কিত আলোচনা ভারতীয় দর্শনের এক অমূল্য সম্পদ। ভারতীয় দর্শন যে বিচার বিযুক্ত নয় এবং অতিসূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণের উপর প্রতিষ্ঠিত তা ন্যায়দর্শনের অনুভব সম্পর্কিত আলোচনায় প্রমাণিত হয়।