ন্যায়দর্শনে ‘অপ্রমা’ কী?

অথবা, ন্যায় অযথার্থ জ্ঞান কী?
অথবা, অপ্ৰমা কী?
অথবা, অযথার্থ কী?
অথবা, জ্ঞানের অযথার্থতা বলতে কী বুঝ?
অথবা, অপ্রমা বলতে ন্যায় দর্শনে কী বুঝায়?
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন আস্তিক স্কুলসমূহের মধ্যে বস্তুবাদী দর্শন হিসেবে ন্যায়দর্শন স্বাধীন চিন্তা ও বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহর্ষি গৌতম। ন্যায়দর্শনের মূলভিত্তি হলো ‘ন্যায়সূত্র’। ন্যায়দর্শন যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং বস্তুর জ্ঞান নিরপেক্ষ স্বাধীন সত্তায় বিশ্বাসী। ন্যায়দর্শনকে নামান্তরে তর্কশাস্ত্র, প্রমাণশাস্ত্র, হেতুবিদ্যা, বাদবিদ্যা এবং আন্বীক্ষিকী বিদ্যা বলা হয়। ন্যায়দর্শনের মূল ও প্রধান উপজীব্য বিষয় হলো জ্ঞানতত্ত্ব। ন্যায় মতে, জ্ঞান হলো বিষয়ের প্রকাশ। নৈয়ায়িকগণ জ্ঞানের মধ্যে দুটি ভাগ করেছেন। যথা : ১. ‘প্রমা’ বা
যথার্থ জ্ঞান (Valid knowledge) এবং ২. ‘অপ্রমা’ বা অযথার্থ জ্ঞান (Non-valid knowledge)। নিম্নে প্রশ্নের আলোকে ‘অপ্রমা’ বা অযথার্থ জ্ঞান আলোচনা করা হলো :
‘‘অপ্রমা’ বা অযথার্থ জ্ঞান (Non-valid knowledge) : ন্যায়দর্শনে অপ্রমাণকেও চারভাগে ভাগ করা হয়েছে।
যথা : স্মৃতি, সংশয়, ভ্রম বা বিপর্যয় ও তর্ক। নৈয়ায়িকদের মতে, স্মৃতি যথার্থ জ্ঞান নয়। কারণ স্মৃতি প্রত্যক্ষ অনুভব নয়। স্মৃতির ক্ষেত্রে পূর্বানুভূত আবেগকে মানসপটে জাগরিত করা হয় মাত্র। সংশয়ও যথার্থ জ্ঞান নয়। কারণ সংশয় নিশ্চিত জ্ঞান নয়। ভ্রমকেও প্রমাণ বা যথার্থ জ্ঞান বলা যায় না। কারণ ভ্রম জ্ঞান যথার্থ জ্ঞান নয়। যেমন- কোন একটি রজ্জুতে যখন সর্পভ্রম করি তখন রজ্জুতে সর্পের অনুভূতিটি যথার্থ নয়। কারণ সর্পত্ব রজ্জুতে উপস্থিত নেই। আবার তর্কও প্রমাণ নয়। কারণ তর্কের দ্বারা বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায় না। কেবল প্রত্যক্ষ বা অনুমানজাত জ্ঞানকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় । তর্ক প্রমাণের সহায়ক মাত্র, প্রমাণ নয়।
উপসংহার : নৈয়ায়িক জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনা ভারতীয় দর্শনের এক অমূল্য সম্পদ। ভারতীয় দর্শন যে বিচার বিযুক্ত নয় এবং অতিসূক্ষ্ম বিচার বিশ্লেষণের উপর প্রতিষ্ঠিত তা নৈয়ায়িকদের জ্ঞানতত্ত্বের আলোচনায় প্রমাণিত হয়।